Register

Win 10.00$

দাম্পত্য সমস্যা, কুরআনের সমাধান….!!

Be the first to comment!

সকল সমস্যার সমাধান পাবেন কুরআনের । আল্লহ পাক কুরআনের মাঝে আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করে দিছে । এর থেকে আজ আমরা দাম্পত্য জীবনের কিছূ সমস্যা নিয়ে আলাপ করবো আর কুরআন এ এর কি সমাধান আছে দেখবো আসুন তা হলে ।
স্ত্রী পিটানো কি ইসলাম সমর্থন করে?- এ প্রশ্নটি দীর্ঘকাল ধরে ধর্মপরায়ণ শিক্ষিত মুসলিম নারীদের মনে কাঁটা হয়ে বিঁধে ছিল। বিভিন্ন সময়ে সূরা নিসার এই ‘দরাবা’ সংক্রান্ত ৩৪ নম্বর আয়াতটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা এসেছে। কোনো কোনো ইসলামি চিন্তাবিদ একে ‘চল্লিশ ঘা’ আবার কেউ কেউ ‘মৃদু আঘাত’ বলেছেন। কিন্তু সব ক’টি ব্যাখ্যার সাথেই শারীরিক আঘাত ব্যাপারটি জড়িত রয়ে গেছে।
ফলে এর একটি সুস্পষ্ট প্রভাব আমাদের সমাজে দেখা যায়। কারণে অকারণে স্ত্রীকে আঘাত করা অনেক মুসলিম পুরুষই তাদের অধিকার মনে করেন। অনেকে আবার একটু আগ বাড়িয়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে শাসন করাকে নিজ পবিত্র দায়িত্ব মনে করেন। শরীরের আঘাত শুধু শরীরের সাথেই সম্পর্কিত থাকে না, তা মনের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। শারীরিক আঘাত কম হোক বা বেশি হোক তা আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন যেকোনো নারীর মনেই কঠিন অপমানবোধ সৃষ্টি করে।
কাজেই বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ আব্দুল হামিদ আবু সুলেমান সূরা নিসায় ব্যবহৃত ‘দরাবা’ শব্দটির অর্থ ‘পিটানো’, এমনকি ‘মৃদু আঘাত’ হিসেবে না নিয়ে, বরং অন্যরকম অর্থ গ্রহণের প্রতি জোর দিয়েছেন এবং এর কারণ হিসেবে পেশ করেছেন কঠিন যুক্তি।
তিনি তার Marital Discord : Recapturing the Full Islamic Spirit of Human Dignity বইতে বোঝাতে চেয়েছেন- আরবি অভিধানে ‘দরাবা’ শব্দটির অনেক অর্থ রয়েছে; সে ক্ষেত্রে অন্য সব অর্থ বাদ দিয়ে স্ত্রীর ক্ষেত্রে ‘পিটানো’ বা ‘আঘাত করা’ অর্থটি গ্রহণ করা কতটা যুক্তিযুক্ত, বিশেষ করে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে, তা ভেবে দেখতে হবে।
সূরা নিসার ৩৪ ও ৩৫ নম্বর আয়াতকে (যাতে এই শাস্তির ব্যাপারটি বিধৃত হয়েছে) বিচ্ছিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। এ আয়াতের ব্যাখার ভিত্তি হতে হবে সূরা রূমের ২১ নম্বর আয়াত যেখানে আল্লাহ পারস্পরিক দয়া ও ভালোবাসাকে বিবাহের উদ্দেশ্য হিসেবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
‘আর এক নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আর রূম-২১)
শুধু বিবাহের ক্ষেত্রে নয়, এমনকি বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকের সময়ও নারীকে অসম্মান করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
‘আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত করে নেয়, তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও অথবা সহানুভূতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও।
আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যে আটকে রেখো না। আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের ক্ষতি করবে।’ (সূরা বাকারা: ২৩১)
যেখানে বিবাহের ভিত্তি সম্প্রীতি ও দয়া এবং এই বিবাহরে সমাপ্তিতেও নারীর প্রতি সহানুভূতি ও সম্মানের কথা বলা হয়েছে সেখানে বিবাহকালীন সম্পর্ক ধরে রাখার মাধ্যম হিসেবে আঘাত ও মানসিক যন্ত্রণাকে ব্যবহার ঠিক সামঞ্জস্যশীল মনে হয় না।
অতীতে পরিবারে নারীদের ভূমিকা একরকম ছিল। তখন মহিলাদের সব কার্যক্রম পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অর্থনৈতিক কার্যক্রম থেকে তারা বিরত থাকতেন। অন্য দিকে পুরুষরা অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালন করত। পুরুষদের এই অর্থনৈতিক শক্তি তাদেরকে বাড়তি ক্ষমতা প্রদান করত। অর্থনৈতিক ব্যাপারে পুরুষদের ওপর নির্ভরশীলতা নারীদের ক্ষমতাহীন করে রাখত, ফলে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তারা পুরুষদের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু বর্তমানে এ চিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে।
পরিবারে নারী ও পুরুষের এ ভূমিকায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। পুরুষের ওপর নারীর অসহায় নির্ভরশীলতা কমেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে; ফলে নারীদের ওপর পুরুষের একচ্ছত্র ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রও হ্রাস পেয়েছে। কাজেই বর্তমান সময়ে পরিবারের কোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বা স্বামীÑস্ত্রীর কোনো বিরোধ নিরসনে পরিবারের এই কাঠামোকে বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এখানে দরাবা’র অর্থ কি ‘আঘাত করা’ ‘শারীরিক শাস্তি প্রদান’ হবে যা কষ্ট, ব্যথা ও অপমানের জন্ম দেয়? শারীরিক আঘাত বা অপমানের মাধ্যমে দমন কি ভালোবাসা বা আনুগত্য তৈরিতে সহায়ক হয়? বা এর মাধ্যমে কি একটি পারিবারিক সম্পর্ক ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়? ইসলাম যেখানে স্বামীর নির্যাতনমূলক আচরণের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে বৈবাহিক সম্পর্ক অবসানের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার দিয়েছে সেখানে এরূপ দমন কি স্ত্রীকে আরো বেশি সে দিকে (তালাক বা খুলা) ঠেলে দেবে না? আর যদি তাই হয় তবে কি এ ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ, দমন বা আঘাতের কোনো সুযোগ রয়েছে, যা পরিবারকে পুনর্গঠনের পরিবর্তে বরং ভাঙার দিকে আরো ঠেলে দেবে?
কুরআনকে কুরআন দিয়েই ব্যাখ্যা করা সর্বাপেক্ষা উত্তম উপায়। কুরআনের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা এই আল্লাহর বাণী কুরআন দিয়ে এবং শরিয়াহর সাধারণ মাকাসিদ বা উদ্দেশ্য দ্বারা এর সামঞ্জস্য বিধান সম্ভব।
আল কুরআনে ‘দরাবা’ শব্দটির বিবিধ ব্যবহার লক্ষ্য করলে এর প্রায় সতেরটি অর্থ পাওয়া যায়। যদি আমরা কুরআনের এই আয়াতগুলো বিশ্লেষণ করি তবে দেখব যে মূল ক্রিয়া ’দরাবা’-এর অনেক আক্ষরিক ও রূপক অর্থ রয়েছে। এর অর্থ হতে পারে পৃথক করা, বিচ্ছিন্ন করা, আলাদা করা, প্রস্থান করা, ছেড়ে যাওয়া, দূরত্ব সৃষ্টি করা, বাদ দেয়া, দূরে সরে যাওয়া ইত্যাদি।
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন বস্তুর সাথে যুক্ত হলে দরাবা সেই অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে।
কাজেই প্রশ্ন হলো- দরাবা যখন বৈবাহিক সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হবে এবং বিচ্ছিন্ন স্বামী-স্ত্রীর পুনরায় মিলন ঘটানো ও ভালোবাসা তৈরির পন্থা হিসেবে বিবেচিত হবে তখন এর কোন অর্থটি সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত হতে পারে?
‘…যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, [প্রথমে] তাদের সদুপদেশ দাও, [তারপর] তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং [শেষে] দরাবা করো; কিন্তু যদি তারা বাধ্যতায় ফিরে আসে তবে আর তাদের জন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবার উপরে শ্রেষ্ঠ।’ (সূরা নিসা : ৩৪)।
পটভূমি বিবেচনা করলে বোঝা যায়, এই আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্মানজনক উপায়ে এবং কোনোরকম চাপ প্রয়োগ বা ভয়ভীতি প্রদর্শন না করে স্বামী-স্ত্রীর মিলন ঘটানো।
কেননা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই এই সম্পর্ক অবসানের সুযোগ ও অধিকার রয়েছে। কাজেই দরাবা’র অর্থ কখনো এমন হতে পারে না যা দ্বারা মানুষ আহত হবে, কষ্ট পাবে বা অপমানিত হবে। চাপ প্রয়োগ করা বা শারীরিক আঘাত কখনোই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করতে ও বজায় রাখতে সহায়ক হয় না। এটি তাদের সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধিতে বা পারস্পরিক আস্থা তৈরিতে কোনোভাবেই সহায়ক ভূমিকা রাখে না।
দরাবা সম্পর্কিত উপরিউক্ত বিশ্লেষণ রাসূল সা:-এর হাদিস ও তাঁর আচরণের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিভিন্ন বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি, রাসূল সা:-এর স্ত্রীগণ জীবনযাত্রার মান কিছুটা বাড়ানোর দাবি করেছিলেন রাসূল সা:-এর কাছে। কিন্তু রাসূল সা:-এর অর্থনৈতিক অবস্থায় সেটা সম্ভব ছিল না বলে সেই দাবি মানা সম্ভব হয়নি। জীবনযাত্রার মান উন্নতকরণের দাবি অস্বীকৃত হওয়ায় তারা [রাসূল সা:-এর স্ত্রীগণ] যখন অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তখন রাসূল সা: তাঁর স্ত্রীদের থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন।
এ পরিস্থিতিতে এক মাসের জন্য তিনি ’আল মাশরাবাহ’ (আলাদা থাকা)-এর আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং তাদেরকে এ সুযোগ দিয়েছিলেন যে, তারা ইচ্ছা করলে রাসূল সা:-এর যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে সে অনুযায়ী জীবনযাত্রার মান মেনে নিয়ে থাকতে পারেন অথবা তারা ইচ্ছে করলে বিবাহের সম্পর্ক থেকে মুক্তি নিতে পারেন এবং সম্মানের সাথে আলাদা হয়ে যেতে পারেন। একটি হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত মুহাম্মদ সা: একজন ব্যক্তিকে কঠিনভাবে ভর্ৎসনা করেছিলেন, কারণ সে তার স্ত্রীকে পিটিয়েছিল।
‘যে তার স্ত্রীকে ভৃত্যের মতো পেটায় আবার তার সাথে শুতে লজ্জাবোধ করে না।’ (বুখারি)। মুসলিম শরিফে উল্লেখ আছে, আল্লাহর পথে জিহাদ ব্যতীত, হজরত রাসূলে করিম সা: কোনো নারী, ভৃত্য অথবা কোনো ব্যক্তির ওপর কখনো হাত তোলেননি। [এমনকি যুদ্ধকালীন অবস্থায়ও শত্র“পক্ষের নারীদের প্রতি আঘাত করা নিষিদ্ধ ছিল।] রাসূল সা: আরো বলেছেন, তোমাদের মধ্যে অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের নির্যাতনের ব্যাপারে রাসূলের পরিবারের কাছে শোক প্রকাশ করতে আসে। এই নির্যাতনকারী স্বামীরা কখনোই উত্তমদের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (আবু দাউদ)।
তা ছাড়া এটাও বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, কুরআনে শারীরিক শাস্তি বোঝানোর জন্য ‘দরাবা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। বরং কুরআনে এ ক্ষেত্রে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো ‘জালাদা’- কশাঘাত বা বেত্রাঘাত বা প্রহার করা। যেমন সূরা আন্-নূরে বেত্রাঘাত বোঝাতে ‘জালাদা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে-
‘ব্যাভিচারিণী নারী, ব্যাভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে ১০০ করে বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর বিধান কার্যকরকরণে তাদের প্রতি তোমাদের মনে যেন দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে’ (সূরা আন্-নূর : ২)।
উপসংহারে বলতে চাই যে, অবাধ্যতা বা বিবাদের ফলে বৈবাহিক সম্পর্কে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে কুরআন যে ‘দরাবা’র কথা বলেছে, তার সঠিক অর্থ হবে স্ত্রী থেকে ‘দূরে সরে যাওয়া’, স্ত্রী থেকে ‘দূরত্ব তৈরি করা’ এবং ঘর থেকে ‘চলে যাওয়া’, যাতে স্ত্রীর যুক্তিবোধ জাগ্রত হয় বা সে তার আচরণের অন্যায্যতা ও এর সম্ভাব্য পরিণাম উপলব্ধি করতে পারে।
দূরে সরে যাওয়া বা আলাদা হয়ে যাওয়া অর্থটি এ ক্ষেত্রে বেশি গ্রহণযোগ্য এবং দৈহিক আঘাত ও মানসিক যন্ত্রণাদান অপেক্ষা কুরআনের বাচনভঙ্গির সাথে বেশি সঙ্গতিপূর্ণ। আব্দুল হামিদ আবু সুলেমানের এই ব্যাখ্যাটি এক দিকে যেমন সুযোগসন্ধানী কিছু পুরুষের নির্যাতনের সব পথ বন্ধ করে দেয়, তেমনি ইসলামের ছিদ্রান্বেষীদের ‘ইসলাম নারী নির্যাতন সমর্থন করে’- এই চিরায়ত অপবাদের পথও রুদ্ধ করে।
কাজেই এটা সময়ের দাবি যে মুসলিমরা ‘দরাবা’র এ ব্যাখ্যাটি জানবেন ও বিবেচনায় আনবেন।
লেখক : কানিজ ফাতিমা,
সহকারী অধ্যাপক, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$