Register

Win 10.00$

রহমতের কূপ ‘জমজম’,যা বলেছেন বিজ্ঞানীরা

Be the first to comment!

জমজম কুয়া হল মক্কায় মসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি কুয়া। এটি কাবা থেকে ২০ মি (৬৬ ফুট) দূরে অবস্থিত। ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী, নবী ইবরাহিম (আ) তার স্ত্রী হাজেরা (আ) ও শিশুপুত্র ইসমাইল (আ) কে মরুভূমিতে রেখে আসার পর ইসমাইল (আ) এর পায়ের আঘাতে এর সৃষ্টি হয়। মসজিদুল হারামে আগত লোকেরা এখান থেকে পানি পান করে।
মহান স্রষ্টার অন্যতম নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জমজম কূপ। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই কূপের পানি সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যেও নিঃশেষ হয়নি বা শুকিয়ে যায়নি। জমজম কূপ বিশ্বের এক অনন্য নিদর্শন।
পানি বসে পান করা সুন্নত তবে একমাত্র ব্যতিক্রম এই জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত। আমরা কমবেশি সবাই জানি তবু জেনে নেই এ কূপ সৃষ্টির ইতিহাস।
হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হযরত হাজেরাকে (রা.) শিশু হযরত ইসমাঈলসহ (আ.) আরবের মরু অঞ্চলে নির্বাসিত করেছিলেন। সেখানে থাকাকালে শিশু ইসমাঈল (আ.) পানির তৃষ্ণায় কাতর হলে হযরত হাজেরা পানির সন্ধানে উত্তপ্ত বালুকাময় মরুভূমিতে সাফা-মারওয়া এলাকায় সাতবার ছুটাছুটি করেছিলেন। কোথাও পানি না পেয়ে হযরত হাজেরা তার ছেলের কাছে ফেরে এসে দেখেন তার ছোট্ট শিশুর পায়ের আঘাতে সেখানে পানি প্রবাহের সৃষ্টি হয়েছে। আর সেটিই যমযম কূপ।
অন্য বর্ণনায় জানা যায়, শিশু ইসমাঈলের (আ.) কান্না দেখে মহান আল্লাহ তার ফেরেশতা হযরত জিবরাঈলকে (আ.) সেখানে পাঠান। জিবরাঈল সেখানে এসে তার পায়ের আঘাতে একটি পানির ঝরনার সৃষ্টি করেন।
জমজম নামটি কেমন করে হলো? জমজম (Zamzam) শব্দটি ঐতিহ্যগতভাবে শব্দ সমষ্টি Zomë Zomë থেকে এসেছে। যার শাব্দিক অর্থ থামা। কূপ সৃষ্টির পর হযরত হাজেরা (আ.) দেখলেন যে পানি বের হতেই আছে। তখন তিনি কয়েকটি পাথর দিয়ে পানি আটকানোর জন্য বললেন, জমজম। অর্থাৎ থাম থাম। সেই থেকে ওই কূপের নাম জমজম কূপ। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী এ কূপের ছিল দুটি জলাধার, একটি হচ্ছে খাওয়ার জন্য এবং অপরটি ওজু করার জন্য। প্রথম পর্যায়ে এটি পাথর দ্বারা ঘেরা একটি কূপ ছিল। ৭৭১ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় খলিফা আল মুনসুর এ কূপকে কেন্দ্র করে মার্বেল পাথরের একটি গম্বুজ নির্মাণ করেন। ৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আল মাহদি জমজম কূপের পুনরায় সংস্কার করেন।
তিনি সেগুন কাঠ দিয়ে একটি গম্বুজ নির্মাণ করেন, যেটি মোজাইক করা অংশ আবৃত করেছিল। তখন গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল দুটি। ছোটটি ছিল কূপের জন্য এবং বড়টি ছিল দর্শনার্থীদের জন্য। ৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আল মুতাসিমের সময়ে গম্বুজ মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়।
জমজম কূপকে আধুনিকায়ন করা হয় ১৯১৫ সালে অটোমান সুলতান আব্দুল হামিদের সময়ে। তিনি এ কূপের কাছে থেকে সব বাড়িকে সরিয়ে তাওয়াফ করার স্থানের বাইরে নিয়ে যান। বর্তমানে এ কূপের পানি ঝরনার সাহায্যে মসজিদের পশ্চিম অংশে স্প্রে করা হয়। জমজম কূপটি ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট গভীর, যার ব্যাস ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি থেকে ৮ ফুট ৯ ইঞ্চি। প্রথম দিকে এ কূপ থেকে পানি তোলা হতো দড়ি বা বালতির সাহায্যে।
বর্তমানে এ কূপের একটি নিজস্ব ঘর আছে সেখান থেকে বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে কূপ থেকে পানি তুলে মসজিদ আল হারামের তাওয়াফ করার সমগ্র এলাকায় বিতরণ করা হয়। কূপের উপরের অর্ধেক উপত্যকার পলল বালুকাময়, সব উপরের ১ মিটার কংক্রিটের এবং নিচের অংশ জমাট শিলা দ্বারা তৈরি।
এ কূপ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেন, এ কুপে পানি এসে থাকে ওয়াদি ইব্রাহিমে বৃষ্টিপাত শোষণের মাধ্যমে। তবে শুষ্ক মরু সৌদি আরবে এতো পানি প্রকৃতই কীভাবে আসে সেটা আল্লাহর এক নিদর্শন। কারণ, সমগ্র আরব শুকিয়ে গেলেও জমজম কূপ সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যেও এর পানি নিঃশেষ হয়নি বা শুকিয়ে যায়নি। সৌদি আরবের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বোর্ডের জমজম কূপের উপর একটি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে।
তারা কূপে পানির স্তর, তাপমাত্রা এবং অন্যান্য উপাদান পরীক্ষা করে থাকে এবং নিয়মিত ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য পরিবেশন করে থাকে। কূপের তলে পানির স্তর ১০.৬ ফুট। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার পানি পাম্প করে উঠিয়ে নিয়ে পানির স্তর ৪৩.৯ ফুট পূর্ণ করলেও পাম্প থামানোর ১১ মিনিটের মধ্যে এটি আবার তার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। জমজম কূপের পানির কোনো রং বা গন্ধ নেই, তবে এর বিশেষ একটি স্বাদ রয়েছে। কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় জমজম কূপের পানি পরীক্ষা করেছে এবং তারা এর পুষ্টিগুণ ও উপাদান সমূহ নির্ণয় করেছেন। যমযমের পানি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে একটি পবিত্র পানি। মুসলমানরা এই পানি ভক্তিভরে পান করে থাকে। রাসূল মোহাম্মদ (সাঃ) নিজেও এই পানি পান করেছিলেন। সুতরাং একথা নিশ্চিন্তে বলা যায় যে, যমযমের পানি পান করা বরকতময়।

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$