Register

Win 10.00$

ইসলামের দৃষ্টিতে বছরের শ্রেষ্ঠ দিনে করণীয় ছয় আমল

Be the first to comment!

আল্লাহ তা‘আলা দয়ালু। তাই তিনি আপন বান্দাদের তওবার সুযোগ দিতে ভালোবাসেন। তিনি চান বান্দারা ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করুক। এ উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের জন্য বছরে কিছু বরকতময় ও কল্যাণবাহী দিন রেখেছেন- যাতে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। আমরা পরীক্ষার দিনগুলোতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাই সবচে ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য। তবে কেন আখেরাতের জন্য এসব পরীক্ষার দিনগুলোতেও সর্বাধিক প্রচেষ্টা ব্যয় করব না? এ দিনগুলোতে আমল করা তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি নেকী ও কল্যাণ বয়ে আনে। এমন দিনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিলহজ মাসের এই প্রথম দশদিন। এ দিন গুলো এমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেগুলোকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাতে আমলের প্রতি তিনি সবিশেষ উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ দিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে শুধু এতটুকুই যথেষ্ট যে আল্লাহ তা‘আলা এর কসম করেছেন।যে কারণে এই দশ দিন বছরের শ্রেষ্ঠ। সেই দশদিন হল-
১ . আল্লাহ তা‘আলা এর কসম করেছেন: আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো কিছুর কসমকরেন তা কেবল তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাইপ্রমাণ করে। কারণ, মহা সত্তা শুধু মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরই কসম করেন। আল্লাহতা‘আলা বলেন,‘কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের।’ {সূরা আল-ফাজর, আয়াত : ১-২} আয়াতে ‘কসম দশরাতের’ বলে যিলহজের দশকের প্রতিই ইঙ্গিতকরা হয়েছে। এটিই সকল মুফাসসিরের মত।ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন,এ মতটিই সঠিক।
২. এসবই সেই দিন আল্লাহ যাতে তাঁরজিকিরের প্রবর্তন করেছেন : আল্লাহ তা‘আবলেন, ‘যেন তারা নিজদের কল্যাণেরস্থানসমূহে হাযির হতে পারে এবং তিনিতাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিকদিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহেআল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ {সূরা আল-হজ, আয়াত : ২৮} জমহূর উলামার মতে, আয়াতেনির্দিষ্ট দিনসমূহ বলে যিলহজ মাসের প্রথমদশ দিনকে বুঝানো হয়েছে। এটিই ইবন উমর ওইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমার মত।
৩. রাসূলুল্লাহ দিনগুলোকে শ্রেষ্ঠ দিনবলে আখ্যায়িত করেছেন : যিলহজের এইদিনগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিনবলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন জাবিররাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,‘পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠদিনগুলো হলো দশকের দিনসমূহ। অর্থাৎযিলহজের (প্রথম) দশদিন। জিজ্ঞেস করাহলো, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়েউত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর পথেজিহাদেও এর চেয়ে উত্তম দিন নেই।হ্যা, কেবল সে-ই যে (জিহাদে) তারচেহারাকে মাটিতে মিশিয়েদিয়েছে।’ [মুসনাদ বাযযার : ১১২৮; মুসনাদআবী ই‘আলা : ২০৯০]
৪. এই দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফারদিন : আরাফার দিন হলো বড় হজের দিন।এটি ক্ষমা ও মাগফিরাতের দিন। জাহান্নামথেকে মুক্তি ও নাজাতের দিন। যিলহজের এইদশকে যদি ফযীলতের আর কিছু না থাকত তবেএ দিবসটিই তার মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হত। এদিনের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘আরাফা দিবসই হজ’। [তিরমিযী : ৮৯৩;নাসায়ী : ৩০১৬]
৫. এতে রয়েছে কুরবানীর দিন : কোনোকোনো আলিমের মতে কুরবানীর দিনটিবছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদকরেন,‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিনহলো কুরবানীর দিন অতপর স্থিরতার দিন’।(অর্থাৎ কুরবানীর পরবর্তী দিন। কারণ,যেদিন মানুষ কুরবানী ইত্যাদির দায়িত্বপালন শেষ করে সুস্থির হয়।) [নাসায়ী :১০৫১২; ইবন খুযাইমা, সহীহ : ২৮৬৬]
৬. এ দিনগুলোতে মৌলিক ইবাদতগুলোরসমাবেশ ঘটে :হাফেয ইবন হাজর রহিমাহুল্লাহ তদীয় ফাতহুলবারী গ্রন্থে বলেন,‘যিলহজের দশকেরবৈশিষ্ট্যের কারণ যা প্রতীয়মান হয় তাহলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশঘটে। যথা : সালাত, সিয়াম, সাদাকা, হজইত্যাদি। অন্য কোনো দিন এতগুলো ইবাদতেরসমাবেশ ঘটে না।’ [ফাতহুল বারী : ২/৪৬০]এই দশটি দিনের আমল আল্লাহর কাছেঅধিক প্রিয়ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এমন কোনো দিননেই যার আমল যিলহজ মাসের এই দশ দিনেরআমল থেকে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহররাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদওনয়? রাসূলুল্লাহ বললেন, আল্লাহর পথেজিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান-মালনিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হল এবং এরকোনো কিছু নিয়েই ফেরত এলো না (তারকথা ভিন্ন)।’ [বুখারী : ৯৬৯; আবূ দাউদ : ২৪৪০;তিরমিযী : ৭৫৭]আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকেবর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেন,‘ এ দশ দিনে নেক আমলকরার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ওমহান কোন আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়েতাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর(আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।’ [মুসনাদআমহদ : ১৩২; বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৪৭৪;মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৪]অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যিলহজের(প্রথম) দশদিনের মতো আল্লাহর কাছে উত্তম কোনো দিন নেই। সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে উত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, হ্যা, কেবল সে-ই যে(জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।’ [সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব :২/১৫; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৩]এ হাদীসগুলোর মর্ম হল, বছরে যতগুলো মর্যাদাপূর্ণ দিন আছে তার মধ্যে এ দশ দিনের প্রতিটি দিনই সর্বোত্তম।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিন সমূহে নেক আমল করার জন্য তাঁর উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। তাঁর এ উৎসাহ প্রদান এ সময়টার ফযীলত প্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনগুলোতে বেশি বেশি করে তাহলীল ও তাকবীর পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন ওপরে ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ হয়েছে।ইবন রজব রহিমাহুল্লাহ বলেন, উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়, নেক আমলের মৌসুম হিসেবে যিলহজ মাসের প্রথম দশক হল সর্বোত্তম, এ দিবসগুলোয় সম্পাদিত নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। হাদীসের কোনো কোনো বর্ণনায় ﺃَﺣَﺐُّ (‘আহাব্বু’তথা সর্বাধিক প্রিয়) শব্দ এসেছে আবার কোনোকোনো বর্ণনায় ﺃَﻓْﻀَﻞُ (‘আফযালু’ তথাসর্বোত্তম) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। অতএব এ সময়েনেক আমল করা বছরের অন্য যে কোনো সময়েনেক আমল করার থেকে বেশি মর্যাদা ওফযীলতপূর্ণ। এজন্য উম্মতের অগ্রবর্তীপুণ্যবান মুসলিমগণ এ সময়গুলোতে অধিকহারেইবাদতে মনোনিবেশ করতেন। যেমন আবূছিমান নাহদী বলেন,‘তাঁরা অর্থাৎ সালাফ তথা পূর্বসূরীগণদিনটি দশককে অনেক বেশি মর্যাদাবানজ্ঞান করতেন : রমযানের শেষ দশক,যিলহজের প্রথম দশক এবং মুহাররমের প্রথমদশক।’এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর ১০টিউপায়প্রতিটি মুসলিমের উচিত ইবাদতেরমৌসুমগুলোকে সুন্দর প্রস্তুতির মাধ্যমেস্বাগত জানানো। যিলহজ মাসকে আমরাস্বাগত জানাতে পারি নিচের কাজগুলোরমধ্য দিয়ে : এ দশ দিন যে আমলগুলো বেশিবেশি করা উচিতঃ১. এই দশটি দিন কাজে লাগাতে দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করা :শুরুতেই যা করা সবার উচিত তা হল, এইদিনগুলোকে পুণ্যময় কাজ ও কথায় সুশোভিতকরার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা। যে ব্যক্তিকোনো কাজের সংকল্প করে আল্লাহ তাকেসাহায্য করেন। তার জন্য সাহায্যকারী উপায়ও উপকরণ প্রস্তুত করে দেন। যে আল্লাহরসঙ্গে সত্যবাদিতা দেখায় আল্লাহ তাকেসততা ও সফলতায় ভূষিত করেন। আল্লাহতা‘আলা বলেন, ‘আর যারা আমার পথেসর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকেআমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব।আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেইআছেন।’ {সূরা আল-আ‘নকাবূত, আয়াত : ৬৯}
এসবের মাধ্যমে একজন মানুষ প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। আল্লাহ এসবেরমাধ্যমে দান করেন আত্মিক প্রশান্তি-প্রতিটি আল্লাহ-ভোলা মানুষই যার শূন্যতায়ভোগে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকেসেসব ব্যক্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন যারা এইসুবর্ণ সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করে।আমীন।

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$