Register

Win 10.00$

মৃত ব্যক্তির নিকট কুরআন তেলাওয়াতের বিধান

Be the first to comment!

ভূমিকা : কুরআন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ এলাহী কিতাব। এ কিতাবের মাঝে যেমন মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে, তেমনি এটি তেলাওয়াত করলে এর প্রতিটি বর্ণের বিনিময়ে দশটি করে নেকী পাওয়া যায়।[1] বিশ্বের এমন কোন গ্রন্থ নেই, যা তেলাওয়াত করলে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ছওয়াব অর্জিত হয়। এই পবিত্র গ্রন্থের তেলাওয়াতকারী ও হাফেয জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান লাভ করবে।[2] সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে অবস্থান করবে।[3] তার সুফারিশ কবুল করা হবে।[4] এর তেলাওয়াতকারী ও তার মা-বাবাকে জান্নাতের রেশমী পোশাক ও তাজ পরিধান করানো হবে।[5] তাদের উপর আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ নাযিল হয় এবং রহমতের ফেরেশতাগণ তাদের বেষ্টন করে রাখে।[6] কিন্তু এ গ্রন্থের বিধি-বিধান জীবিত ব্যক্তির জন্য। কেউ মারা গেলে তার উপরে শরী‘আতের বিধান প্রযোজ্য নয়। কুরআন তেলাওয়াত যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, তেমনি এটি শ্রবণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শ্রবণের এ বিষয়টিও মানুষের জীবদ্দশায় প্রযোজ্য। এ নিবন্ধে জীবিত ও মৃত ব্যক্তির নিকটে কুরআন তেলাওয়াতের বিধান আলোচনা করা হ’ল।-
জীবিত ব্যক্তির নিকট কুরআন তেলাওয়াতের বিধান
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮﺍْ ﻟَﻪُ ﻭَﺃَﻧﺼِﺘُﻮﺍْ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮْﻥَ ‘আর যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাকো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হ’তে পার’ (আ‘রাফ ৭/২০৪) । জীবিত ব্যক্তির কুরআন তেলাওয়াত শুনতে কোন বাধা নেই। এমনকি মুমূর্ষু ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করতে চাইলে তার পাশে বসে কুরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। তবে মৃত ব্যক্তির কল্যাণে তার পাশে বা বাড়িতে কিংবা কবরস্থানে কুরআন তেলাওয়াত করার কোন বিধান শরী‘আতে নেই। এটি স্পষ্ট বিদ‘আত।
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻋَﻠَﻰَّ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ : ﺃَﻗْﺮَﺃُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃُﻧْﺰِﻝَ، ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧِّﻰ ﺃَﺷْﺘَﻬِﻰ ﺃَﻥْ ﺃَﺳْﻤَﻌَﻪُ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِﻯْ، ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻘَﺮَﺃْﺕُ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐْﺖُ - ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﺇِﺫَﺍ ﺟِﺌْﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺑِﺸَﻬِﻴْﺪٍ ﻭَﺟِﺌْﻨَﺎ ﺑِﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﻫَﺆُﻻَﺀِ ﺷَﻬِﻴْﺪًﺍ - ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻰ : ﻛُﻒَّ - ﺃَﻭْ ﺃَﻣْﺴِﻚْ، ﻓَﺮَﺃَﻳْﺖُ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﺗَﺬْﺭِﻓَﺎﻥِ –
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমার নিকট কুরআন তেলাওয়াত কর। আমি বললাম, আমি আপনার নিকটে কুরআন তেলাওয়াত করব অথচ তা আপনার উপরই নাযিল হয়েছে? তিনি বললেন, আমি তা অন্যের নিকট থেকে শ্রবণ করতে চাই। বর্ণনাকারী বলেন, আমি সূরা নিসা তেলাওয়াত করে এ আয়াতে যখন পৌঁছলাম ‘অতএব সেদিন কেমন হবে, যেদিন আমরা প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী (নবী) আনব এবং তোমাকে তাদের সকলের উপর সাক্ষী করব’? (নিসা ৪/৪১) । তখন তিনি আমাকে বললেন, থাম। আমি দেখলাম তাঁর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে’।[7]
ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻲْ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺳَﻤِﻊَ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓَ ﺃَﺑِﻲْ ﻣُﻮْﺳَﻰ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻘَﺪْ ﺃُﻭﺗِﻲَ ﻣِﺰْﻣَﺎﺭًﺍ ﻣِﻦْ ﻣَﺰَﺍﻣِﻴْﺮِ ﺁﻝِ ﺩَﺍﻭُﺩَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ -
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) আবূ মূসা (রাঃ)-এর কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করে বললেন, তাঁকে দাঊদ (আঃ)-এর সুন্দর সুর দান করা হয়েছে’।[8] এ হাদীছ থেকে বুঝা যায়, রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীদের কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করতেন। সুতরাং জীবিত ব্যক্তির নিকট কুরআন তেলাওয়াতে কোন বাধা নেই। বরং যে কুরআন তেলাওয়াত করবে এবং শ্রবণ করবে উভয়ে ছওয়াব অর্জন করবে।
মুমূর্ষু ব্যক্তির জন্য করণীয়
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে তার সুস্থতার জন্য দো‘আ করতে হবে। এ ব্যাপারে বহু দো‘আ বর্ণিত হয়েছে। তবে যদি ধারণা হয় যে, এ ব্যক্তি মরণাপন্ন তাহ’লে তাকে কালেমার তালক্বীন দিতে হবে।
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻟَﻘِّﻨُﻮﺍ ﻣَﻮْﺗَﺎﻛُﻢْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ –
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীকে কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র তালক্বীন দিবে (অর্থাৎ তার কানের কাছে আস্তে আস্তে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করতে থাকবে)।[9] রাসূল (ছাঃ) মুমূর্ষু ব্যক্তিদের তালক্বীন প্রদানে উৎসাহিত করে বলেন,
ﻟَﻘِّﻨُﻮْﺍ ﻣَﻮْﺗَﺎﻛُﻢْ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ، ﻓَﺈِﻥَّ ﻧَﻔْﺲَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﺭَﺷْﺤًﺎ، ﻭَﻧَﻔَﺲَ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻦْ ﺷِﺪْﻗِﻪِ، ﻛَﻤَﺎ ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﻧَﻔْﺲُ ﺍﻟْﺤِﻤَﺎﺭ -
‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীকে কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র তালক্বীন দিবে (অর্থাৎ তার কানের কাছে আস্তে আস্তে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করতে থাকবে)। কেননা মুমিনদের আত্মা ঘর্মাক্ত হয়ে (অর্থাৎ দ্রুত) বের হয়। অপরদিকে কাফিরদের আত্মা গাধার আত্মার ন্যায় চোয়াল দিয়ে বের হয়।[10] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
ﻟَﻘِّﻨُﻮﺍ ﻣَﻮْﺗَﺎﻛُﻢْ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﺁﺧِﺮُ ﻛَﻠِﻤَﺘِﻪِ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ، ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪَّﻫْﺮِ، ﻭَﺇِﻥْ ﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ ﻗَﺒْﻞَ ﺫَﻟِﻚَ ﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ –
‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীকে কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র তালক্বীন দিবে। কেননা মৃত্যুর সময় যার শেষ বাক্য ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্’ হবে সে কোন এক সময় জান্নাতে প্রবেশ করবে। ইতিপূবে সে যে আমলই করে থাকুক না কেন’।[11]
ﻋَﻦْ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻀَﺮْﺗُﻢُ ﺍﻟْﻤَﺮِﻳْﺾَ، ﺃَﻭِ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖَ، ﻓَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺧَﻴْﺮًﺍ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔَ ﻳُﺆَﻣِّﻨُﻮْﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺗَﻘُﻮْﻟُﻮْﻥَ -
উম্মে সালামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘কোন অসুস্থ বা মৃত (আসন্ন) ব্যক্তির নিকটে তোমরা হাযির হ’লে তার সম্পর্কে ভাল কথা বলবে। কেননা তোমরা যা বল সে সম্পর্কে ফেরেশতাগণ আমীন বলেন’।[12]
ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋَﺎﺩَ ﺭَﺟُﻼً ﻣِﻦَ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺧَﺎﻝُ ﻗُﻞْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﺧَﺎﻝٌ ﺃَﻡْ ﻋَﻢٌّ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻻَ ﺑَﻞْ ﺧَﺎﻝٌ، ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺨَﻴْﺮٌ ﻟِﻰ ﺃَﻥْ ﺃَﻗُﻮْﻝَ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻧَﻌَﻢْ –
আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) এক আনছারী ছাহাবীকে দেখতে গিয়ে বললেন, হে মামা! আপনি ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করুন। তখন সে বলল, মামা, না চাচা? তিনি বললেন, না বরং মামা। সে বলল, আমার জন্য কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করা উত্তম হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ’।[13]
অমুসলিমদেরকেও কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’র তালক্বীন দেওয়া যাবে। রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা আবু ত্বালিবের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হ’লে তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটি একবার পড়ুন, তাহ’লে আমি আপনার জন্য আল্লাহর নিকট কথা বলতে পারব’।
[14] এছাড়া এক ইহূদী বালক নবী করীম (ছাঃ)-এর খিদমত করত। সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী করীম (ছাঃ) তাকে দেখার জন্য আসলেন। তিনি তার মাথার নিকট বসে তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তুমি কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ কর। সে তখন তার পিতার দিকে তাকাল, যে তার নিকটেই ছিল। পিতা তাকে বলল, আবুল কাসেম [নবী (ছাঃ)]-এর কথা মেনে নাও। তখন সে ইসলাম গ্রহণ করল। রাসূল (ছাঃ) সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় এরশাদ করলেন, যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি তাকে জাহান্নাম হ’তে মুক্তি দিলেন’।[15] এর কিছুক্ষণ পর সে মারা যায়।
তবে এক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। কারণ চাপ সৃষ্টি করলে সে এ কালেমা অস্বীকার করতে পারে। ইবনুল মুবারকের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে লোকেরা তাকে বেশী বেশী কালেমার তালক্বীন দেওয়া শুরু করে। তখন তিনি বলেন, তোমরা ভালো কাজ করছ না। আমার মৃত্যুর পর তোমরা লোকদের কষ্টে ফেলে দিবে। তোমরা যখন আমাকে তালক্বীন দিবে আর আমি কালেমা পাঠ করব এবং অন্য কোন কথা বলব না তখন তোমরা আর কিছু বলবে না। আর যদি কথা বলি তাহ’লে আবার তালক্বীন দিবে যাতে শেষ কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ হয়।[16]
শায়খ ওছায়মীন (রহঃ) বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির অবস্থার উপর ভিত্তি করে তালক্বীন দিতে হবে। সে খাঁটি মুমিন হ’লে বা কাফির হ’লে কালেমা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠের নির্দেশ দিতে হবে। আর দুর্বল হৃদয়ের মানুষ হ’লে তার নিকট কেবল কালেমা বা অনুরূপ কিছু পাঠ করতে হবে’।[17]
একজন মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো পাঠ করা শরী‘আতসম্মত এবং এগুলো সালাফে ছালেহীনের আমল দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট কুরআন তেলাওয়াত সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহ যঈফ অথবা জাল। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে সে হাদীছগুলোর দুর্বলতার দিকগুলি এখানে উল্লেখ করা হ’ল।-
.১ ﻋَﻦْ ﻣَﻌْﻘِﻞِ ﺑْﻦِ ﻳَﺴَﺎﺭٍ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻗْﺮَﺀُﻭْﺍ ‏( ﻳﺲ ‏) ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻮْﺗَﺎﻛُﻢْ –
১. মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের কাছে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত কর’।[18]
হাদীছটি দু’টি কারণে আমলযোগ্য নয়। প্রথমতঃ বর্ণনাটি যঈফ। আর তিনটি কারণে হাদীছটি যঈফ। আবু ওছমান ও তার পিতা অপরিচিত রাবী। তাছাড়া এ বর্ণনায় ‘ইযতিরাব’ রয়েছে।[19] হাফেয যাহাবী বলেন, আবু ওছমান ও তার পিতা সম্পর্কে কিছু জানা যায় না।[20] ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর শিক্ষক আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, আবু ওছমান এমন রাবী যার থেকে সুলায়মান তায়মী ব্যতীত কেউ হাদীছ বর্ণনা করেনি। এর সনদ অজ্ঞাত।[21] ইমাম দারাকুৎনী (রহঃ) বলেন, এই হাদীছের সনদ যঈফ, মতন অপরিচিত এবং এ বিষয়ে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি।[22] শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পাঠের পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি।[23] শায়খ বিন বায বলেন, প্রচলিত হাদীছটিতে আবু ওছমান নামে একজন অপরিচিত রাবী থাকায় তা যঈফ। অতএব মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা সিদ্ধ নয়।[24]
দ্বিতীয়তঃ এ সকল হাদীছে বর্ণিত মৃত ব্যক্তি বলতে মুমূর্ষু ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। আর মুমূর্ষু ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত শুনতে চাইলে তার নিকট কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে। তবে দলবদ্ধভাবে মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকটে কুরআন খতমের প্রচলিত পদ্ধতি জঘন্য বিদ‘আত।
.২ ﻋَﻦْ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺇِﻥَّ ﻟِﻜُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﻠْﺒًﺎ، ﻭَﺇِﻥَّ ﻗَﻠْﺐَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻳﺲ ﻭَﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﻳﺲ ﻭَﻫُﻮَ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟﻠﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻏَﻔَﺮَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻪُ، ﻭَﺃُﻋْﻄِﻲ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺟْﺮِ ﻛَﺄَﻧَّﻤَﺎ ﻗَﺮَﺃَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﺍﺛْﻨَﺘَﻲْ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﻣَﺮَّﺓً، ﻭَﺃَﻳُّﻤَﺎ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻗُﺮِﺉَ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﺇِﺫَﺍ ﻧَﺰَﻝَ ﺑِﻪِ ﻣَﻠَﻚُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺳُﻮﺭَﺓُ ﻳﺲ ﻧَﺰَﻝَ ﺑِﻜُﻞِّ ﺣَﺮْﻑٍ ﻣِﻦْ ﺳُﻮﺭَﺓِ ﻳﺲ ﻋَﺸَﺮَﺓُ ﺃَﻣْﻠَﺎﻙٍ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺻُﻔُﻮﻓًﺎ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﻥَ ﻟَﻪُ، ﻭَﻳَﺸْﻬَﺪُﻭﻥَ ﻏُﺴْﻠَﻪُ، ﻭَﻳُﺸَﻴِّﻌُﻮﻥَ ﺟِﻨَﺎﺯَﺗَﻪُ، ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﻳَﺸْﻬَﺪُﻭﻥَ ﺩَﻓْﻨَﻪُ، ﻭَﺃَﻳُّﻤَﺎ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻗَﺮَﺃَ ﻳﺲ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺳَﻜَﺮَﺍﺕِ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺒِﺾْ ﻣَﻠَﻚُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺭُﻭﺣَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺠِﻴﺌَﻪُ ﺭِﺿْﻮَﺍﻥُ ﺧَﺎﺯِﻥُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﺑِﺸَﺮْﺑَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺷَﺮَﺍﺏِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻓَﻴَﺸْﺮَﺑُﻬَﺎ، ﻭَﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻓِﺮَﺍﺷِﻪِ، ﻓَﻴَﻘْﺒِﺾُ ﻣَﻠَﻚُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺭُﻭﺣَﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﺭَﻳَّﺎﻥُ، ﻓَﻴَﻤْﻜُﺚُ ﻓِﻲ ﻗَﺒْﺮِﻩِ ﻭَﻫُﻮَ ﺭَﻳَّﺎﻥُ، ﻭَﻳُﺒْﻌَﺚُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻫُﻮَ ﺭَﻳَّﺎﻥُ، ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺤْﺘَﺎﺝُ ﺇِﻟَﻰ ﺣَﻮْﺽٍ ﻣِﻦْ ﺣِﻴَﺎﺽِ ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺪْﺧُﻞَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﻫُﻮَ ﺭَﻳَّﺎﻥُ -
২. উবাই বিন কা‘ব হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জীবের হৃদয় রয়েছে। আর কুরআনের হৃদয় হ’ল সূরা ইয়াসীন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং ১২ বার কুরআন খতম করার ছওয়াব দিবেন। আর যে মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যুর সময় সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা হয়, প্রত্যেক হরফের বিনিময়ে দশজন করে ফেরেশতা অবতরণ করে। যারা তার সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে তার জন্য রহমতের দো‘আ করে, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তার গোসলদানে অংশগ্রহণ করে, জানাযা অনুসরণ করে চলে, তার জন্য দো‘আ করে এবং দাফন কার্যে অংশগ্রহণ করে। আর যে মুসলিম ব্যক্তি মুমূর্ষু অবস্থায় (মৃত্যুর যন্ত্রণাকালীন সময়ে) সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করবে, মৃত্যুর ফেরেশতা ততক্ষণ তার জান কবয করবে না যতক্ষণ না জান্নাতের প্রহরী রিযওয়ান জান্নাতের শরাব নিয়ে এসে পান করাবে। অথচ সে নিজ বিছানায় শুয়ে থাকবে। অতঃপর মালাকুল মওত তার জান কবয করবে এমতাবস্থায় সে পরিতৃপ্ত থাকবে। সে পরিতৃপ্ত অবস্থায় কবরে অবস্থান করবে, পরিতৃপ্ত অবস্থায় ক্বিয়ামতের দিন উত্থিত হবে এবং নবীগণের হাউযে কাওছারের পানি পানের প্রতি অমুখাপেক্ষী থেকেই পরিতৃপ্ত অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[25]
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, বর্ণনাটি জাল। এ হাদীছের বর্ণনাকারী মুখাল্লাদ হাদীছ জাল করত। ইবনু হিববান বলেন, মুখাল্লাদ অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য রাবী। আযদী বলেন, সে মিথ্যুক, হাদীছ জালকারী। রাযী বলেন, সে যঈফ হাদীছ বর্ণনাকারী।[26] যাহাবী বলেন, সে মুনকারুল হাদীছ।[27] এছাড়া ইউসুফ ইবনু আতিয়া হাদীছ জালকারী। আমর ইবনু আলী ফাল্লাস বলেন, সে ইউসুফ ইবনু আতিয়া থেকেও অধিক মিথ্যাবাদী। দারাকুৎনী বলেন, তারা দু’জনই মাতরূকুল হাদীছ। যাকারিয়া আনছারী ও খাফাজী অত্র হাদীছটিকে জাল বলেছেন।
[28]
.৩ ﻋَﻦْ ﺻَﻔْﻮَﺍﻥَ ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻰ ﺍﻟْﻤَﺸْﻴَﺨَﺔُ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺣَﻀَﺮُﻭﺍ ﻋِﻨْﺪَ ﻏُﻀَﻴْﻒِ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﺍﻟﺜُّﻤَﺎﻟِﻰِّ ﺣِﻴﻦَ ﺍﺷْﺘَﺪَّ ﺳَﻮْﻗُﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻫَﻞْ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺃَﺣَﺪٌ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﻳﺲ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻘَﺮَﺃَﻫَﺎ ﺻَﺎﻟِﺢُ ﺑْﻦُ ﺷُﺮَﻳْﺢٍ ﺍﻟﺴَّﻜُﻮﻧِﻰُّ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺑَﻠَﻎَ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻗُﺒِﺾَ . ﻗَﺎﻝَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻤَﺸْﻴَﺨَﺔُ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺋَﺖْ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖِ ﺧُﻔِّﻒَ ﻋَﻨْﻪُ ﺑِﻬَﺎ . ﻗَﺎﻝَ ﺻَﻔْﻮَﺍﻥُ ﻭَﻗَﺮَﺃَﻫَﺎ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﻌْﺘَﻤِﺮِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﺑْﻦِ ﻣَﻌْﺒَﺪٍ –
৩. ছাফওয়ান হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট শায়খগণ বর্ণনা করেন যে, গুযাইফ বিন হারেছ আছ-ছুমালী যখন মরণাপন্ন হ’ল তখন তারা তার নিকট হাযির হ’ল। সে বলল, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করবে? ছালেহ বিন শুরাইহ আস-সাকূনী তা তেলাওয়াত করলেন। চল্লিশ আয়াত তেলাওয়াত না করতেই তার জান কবয করা হ’ল। আর শায়খগণ বলতেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা হ’লে এর মাধ্যমে মৃত্যুর যন্ত্রণা হালকা করা হয়। বর্ণনাকারী ছাফওয়ান বলেন, ঈসা বিন মু‘তামির ইবনু মা‘বাদের নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করেছিলেন।[29]
ইবনু তায়মিয়াহ ও ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, এর সনদ হাসান।[30] শায়খ আলবানী বলেন, এ আছারের সনদ ছহীহ।[31]তবে বর্ণনাটি যঈফ। কারণ সনদে ছালেহ বিন শুরাইহ নামক রাবী আছে, যাকে আবু যুর‘আ মাজহূল বা অপরিচিত বলেছেন।[32] গুযাইফ বিন হারেছ একজন ছাহাবী ছিলেন। হাদীছ হাসান হ’লেও তার আমলকে সুন্নাত হিসাবে গ্রহণ করা যায় না। তবে জীবিত ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করতে চাইলে তার নিকট সূরা ইয়াসীনসহ যে কোন সূরা তেলাওয়াত করা যেতে পারে।
.4 ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﺯَﻳْﺪٍ ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖِ ﺳُﻮْﺭَﺓَ ﺍﻟﺮَّﻋْﺪِ
৪. জাবের বিন যায়েদ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত আছে যে, তিনি মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা রা‘দ তেলাওয়াত করতেন।[33]
.৫ ﻭَﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻠَﻴﻪ ﻭﺳَﻠَّﻢ : ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻣَﻴِّﺖٍ ﻳَﻤُﻮﺕُ ﻓَﻴُﻘْﺮَﺃُ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻳﺲ ﺇِﻻَّ ﻫَﻮَّﻥَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ -
৫. আবুদ্দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মুমূর্ষু ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা হ’লে আল্লাহ সহজে তার জান কবযের ব্যবস্থা করে দেন’।[34]
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, হাদীছটি জাল। উক্ত বর্ণনায় মারওয়ান নামে একজন রাবী আছে, যে হাদীছ জাল করত। ইমাম বুখারী, মুসলিম ও আবু হাতেম তার ব্যাপারে বলেন, সে মুনকারুল হাদীছ। আবু আরূবা হার্রানী বলেন, সে হাদীছ জালকারী। সাজী বলেন, সে মিথ্যুক, হাদীছ জালকারী।[35] ইমাম আহমাদ ও ইবনু মাঈন বলেন, মারওয়ান বিশ্বস্ত নয়।[36]
.৬ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺸَّﻌْﺒِﻲِّ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭُ ﻳَﻘْﺮَﺅُﻭْﻥَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖِ ﺑِﺴُﻮْﺭَﺓِ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓِ –
৬. শা‘বী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আনছারগণ মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা বাক্বারাহ তেলাওয়াত করতেন’।[37] এর সনদে মুজালিদ নামে একজন রাবী আছে, যার ব্যাপারে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, সে শক্তিশালী নয়।
[38]
ইমাম আহমাদ, ইমাম বুখারী, উকাইলী, ইবনু হিববান, ইমাম নাসাঈ, দারাকুৎনী প্রমুখ তাকে যঈফ বলেছেন। আশাজ তাকে শী‘আ বলে অভিহিত করেছেন।[39]
.৭ ﻋَﻦ ﺍﻟﺸّﻌﺒِﻲّ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻧَﺖ ﺍﻟْﺄَﻧْﺼَﺎﺭ ﺇِﺫﺍ ﻣَﺎﺕَ ﻟَﻬُﻢ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖ ﺍﺧْﺘﻠﻔُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﺒﺮﻩ ﻳﻘﺮﺀُﻭﻥ ﻋِﻨْﺪﻩ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥ -
৭. শা‘বী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আনছারদের কেউ যখন মারা যেত, তখন তারা বারবার তার কবরের নিকট এসে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করতেন।[40]
শায়খ আলবানী বলেন, ইবনু আবী শায়বাহ (রহঃ) ‘রোগীর মৃত্যুর সময় আসন্ন হ’লে তার নিকট যা বলতে হবে’ নামে অধ্যায় রচনা করেছেন। এ থেকে বুঝা যায়, এটি কবরের নিকট পাঠের বিষয় নয় বরং মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট পাঠের বিষয়। দ্বিতীয়তঃ হাদীছটি যঈফ।[41] এ বর্ণনার সনদেও মুজালিদ বিন সাঈদ যঈফ রাবী রয়েছে। যার হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়।[42]
.৮ ﻋَﻦْ ﻣَﻌْﻘِﻞِ ﺑْﻦِ ﻳَﺴَﺎﺭٍ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓُ ﺳَﻨَﺎﻡُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻭَﺫُﺭْﻭَﺗُﻪُ، ﻭَﻧَﺰَﻝَ ﻣَﻊَ ﻛُﻞِّ ﺁﻳَﺔٍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺛَﻤَﺎﻧُﻮﻥَ ﻣَﻠَﻜﺎً ﻭَﺍﺳْﺘُﺨْﺮِﺟَﺖْ ‏( ﺍﻟﻠﻪُ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮﻡُ ‏) ﻣِﻦْ ﺗَﺤْﺖِ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﻓَﻮُﺻِﻠَﺖْ ﺑِﻬَﺎ ﺃَﻭْ ﻓَﻮُﺻِﻠَﺖْ ﺑِﺴُﻮﺭَﺓِ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓِ ﻭَ ‏( ﻳﺲ ‏) ﻗَﻠْﺐُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻻَ ﻳَﻘْﺮَﺃُﻫَﺎ ﺭَﺟُﻞٌ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻠﻪَ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻭَﺍﻟﺪَّﺍﺭَ ﺍﻵﺧِﺮَﺓَ ﺇِﻻَّ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻭَﺍﻗْﺮَﺀُﻭﻫَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻮْﺗَﺎﻛُﻢْ –
৮. মা‘কিল বিন ইয়াসার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সূরা বাক্বারাহ কুরআনের কুঁজ এবং শীর্ষ চূড়া। তার প্রত্যেক আয়াতের বিনিময়ে আশিজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। অতঃপর আয়াতুল কুরসী আরশের নীচ হ’তে বের করে তার সাথে মিলানো হয়। এটা সূরা বাক্বারাহ এবং কুরআনের হৃদয় সূরা ইয়াসীনের সাথে সংযুক্ত করা হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রত্যাশায় সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর তোমরা এটি তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদের নিকট তেলাওয়াত কর’।[43]
অত্র বর্ণনাটি দু’টি কারণে যঈফ। প্রথমতঃ এর সনদে দু’জন রাবীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। যেখানে রাবীর নাম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও বর্ণনাকারীর দুর্বলতার কারণে হাদীছ যঈফ হয়ে যায়। সেখানে অত্র হাদীছে দু’জন রাবীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। দ্বিতীয়তঃ এর সনদে ইযতিরাব রয়েছে।[44]
.৯ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻌَﻠَﺎﺀِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﻠَّﺠْﻠَﺎﺝِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲ ﺃَﺑِﻲ : ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻧَﺎ ﻣُﺖُّ ﻓَﺄَﻟْﺤِﺪْﻧِﻲ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻭَﺿَﻌْﺘَﻨِﻲ ﻓِﻲ ﻟَﺤْﺪِﻱ ﻓَﻘُﻞْ : ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﻣِﻠَّﺔِ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺛُﻢَّ ﺳِﻦَّ ﻋَﻠَﻲَّ ﺍﻟﺜَّﺮَﻯ ﺳِﻨًّﺎ، ﺛُﻢَّ ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻋِﻨْﺪَ ﺭَﺃْﺳِﻲ ﺑِﻔَﺎﺗِﺤَﺔِ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓِ ﻭَﺧَﺎﺗِﻤَﺘِﻬَﺎ، ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺫَﻟِﻚَ –
৯. আব্দুর রহমান ইবনুল আ‘লা ইবনুল লাজলাজ তার পিতা হ’তে বর্ণনা করে বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেন, হে বৎস! আমি মৃত্যুবরণ করলে আমাকে লাহাদ কবর দিবে (কবরস্থ করবে)। আমাকে যখন কবরে রাখবে তখন বলবে ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’। অতঃপর আমার উপর পূর্ণ মাত্রায় মাটি ঢেলে দিবে। এরপর আমার মাথার নিকট সূরা বাক্বারার শুরু ও শেষের অংশ তেলাওয়াত করবে। কারণ আমি রাসূল (ছাঃ)-কে তা বলতে শুনেছি।[45]
আব্দুর রহমান বিন আ‘লা বিন লাজলাজ অপরিচিত রাবী।[46] কারণ তার থেকে মুবাশশির বিন ইসমাঈল ব্যতীত কেউ হাদীছ বর্ণনা করেনি। অতএব অত্র আছারটি দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আলী বিন মূসা আল-হাদ্দাদ বলেন,
ﻛﻨﺖ ﻣﻊ ﺃﺣﻤﺪ ﺍﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻗﺪﺍﻣﺔ ﺍﻟﺠﻮﻫﺮﻱ ﻓﻲ ﺟﻨﺎﺯﺓ، ﻓﻠﻤﺎ ﺩﻓﻦ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﺟﻠﺲ ﺭﺟﻞ ﺿﺮﻳﺮ ﻳﻘﺮﺃ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﺒﺮ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺃﺣﻤﺪ : ﻳﺎ ﻫﺬﺍ ﺇﻥ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﺒﺮ ﺑﺪﻋﺔ، ﻓﻠﻤﺎ ﺧﺮﺟﻨﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻘﺎﺑﺮ ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻗﺪﺍﻣﺔ ﻻﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ : ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﻮﻝ ﻓﻲ ﻣﺒﺸﺮ ﺍﻟﺤﻠﺒﻲ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺛﻘﺔ ﻗﺎﻝ : ﻛﺘﺒﺖ ﻋﻨﻪ ﺷﻴﺌﺎ ؟ ﻗﺎﻝ : ﻧﻌﻢ، ﻗﺎﻝ : ﻓﺄﺧﺒﺮﻧﻲ ﻣﺒﺸﺮ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﻼﺀ ﺑﻦ ﺍﻟﻠﺠﻼﺝ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﺃﻭﺻﻰ ﺇﺫﺍ ﺩﻓﻦ ﺃﻥ ﻳﻘﺮﺃ ﻋﻨﺪ ﺭﺃﺳﻪ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻭﺧﺎﺗﻤﺘﻬﺎ ﻭﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻳﻮﺻﻲ ﺑﺬﻟﻚ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺃﺣﻤﺪ : ﻓﺎﺭﺟﻊ ﻓﻘﻞ ﻟﻠﺮﺟﻞ ﻳﻘﺮﺃ -
‘আমি আহমাদ বিন হাম্বল ও মুহাম্মাদ বিন কুদামা জাওহারীর সাথে কোন এক জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। মাইয়েতের দাফন সম্পন্ন হ’লে জনৈক অন্ধ কবরের নিকট বসে কুরআন তেলাওয়াত শুরু করল। তখন ইমাম আহমাদ তাকে বললেন, ওহে! কবরের নিকট কুরআন তেলাওয়াত বিদ‘আত। আমরা যখন কবরস্থান হ’তে বের হ’লাম তখন ইবনু কুদামা ইমাম আহমাদকে বললেন, হে আবু আব্দুর রহমান! মুবাশশির আল-হালাবীর ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, সে বিশ্বস্ত। আপনি তার থেকে কোন কিছু লিখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন ইবনু কুদামা বললেন, মুবাশশির আব্দুর রহমান বিন আ‘লা বিন লাজলাজ তার পিতা হ’তে আমাকে বর্ণনা করেন যে, তিনি এ মর্মে উপদেশ দিয়েছেন যে, যখন তাকে দাফন করা হবে তখন যেন তার মাথার নিকট সূরা বাক্বারার শুরু ও শেষাংশ তেলাওয়াত করা হয়। আর তিনি বলেন, আমি ইবনু ওমরকে এ মর্মে অছিয়ত করতে শুনেছি। তখন ইমাম আহমাদ তাকে বললেন, ফিরে গিয়ে ঐ লোকটিকে বল, সে যেন কুরআন তেলাওয়াত করে’।[47]
এ বর্ণনার সনদে এমন একজন রাবী আছে, যার পরিচয় জানা যায় না। তাছাড়া ইমাম আহমাদ কি লোকটিকে কবরের নিকট কুরআন তেলাওয়াত করতে বললেন, অথচ তিনি এ বিষয়টিকে বিদ‘আত বলেছেন। তাকে কবরের নিকট কুরআন পাঠের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, তা করা যাবে না।[48] আহমাদ থেকে এ ঘটনার বর্ণনার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। কারণ খাল্লালের শায়খ হাসান বিন আহমাদের পরিচয় রিজাল শাস্ত্রের কিতাবে পাওয়া যায় না। অনুরূপ তার শায়খ আলী বিন মূসার পরিচয়ও পাওয়া যায় না। আর যদি ঘটনা সত্য বলেও ধরে নেয়া হয়, তাহ’লে ইমাম আহমাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হ’ল কবরের নিকট কুরআন তেলাওয়াত মাকরূহ। আহমাদের ঘটনা সত্য মনে করলেও ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে এরূপ অছিয়ত ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি। কারণ আব্দুর রহমান বিন আ‘লা বিন লাজলাজ অপরিচিত রাবী।[49] কারণ তার থেকে মুবাশশির বিন ইসমাঈল ব্যতীত কেউ হাদীছ বর্ণনা করেনি। তাছাড়া সনদ সাব্যস্ত হ’লেও তা হবে মাওকূফ। যাতে মূলত কোন দলীল নেই।[50]
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত ও তার মুখমন্ডল ক্বিবলার দিকে ঘুরানোর ব্যাপারে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি।
[51] ইমাম মালেক (রহঃ) মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট কুরআন তেলাওয়াতকে মাকরূহ মনে করতেন। কারণ এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ এবং এটি সালাফে ছালেহীনের আমল নয়।[52]
কবরের নিকট কুরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, আমি কাউকে এরূপ আমল করতে দেখেনি। এখান থেকে বুঝা যায় যে, ছাহাবী ও তাবেঈগণের কেউ এরূপ আমল করেননি। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) কবরের নিকট কুরআন তেলাওয়াতকে বিদ‘আত বলতেন।
[53]
ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মৃত্যুর পর লাশের নিকট কুরআন তেলাওয়াত করা বিদ‘আত।[54] তিনি আরো বলেন, কেবল ‘ইবাদতে মালী’র মাধ্যমে মৃতরা উপকৃত হ’তে পারে। তাছাড়া নফল ছালাত আদায় করে বা ছিয়াম পালন করে বা কুরআন তেলাওয়াত করে বা হজ্জ করে তার ছওয়াব মৃতদের জন্য পাঠানো সালাফে ছালেহীনের নীতি নয়। আমাদের সালাফদের নীতি হ’তে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত হবে না।
[55]সালাফদের নীতি হ’ল তারা তাদের মৃত আত্মীয়দের জন্য দান-ছাদাক্বা করতেন এবং দো‘আ করতেন।
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির নামে কবরের পার্শ্বে অথবা অন্য কোন স্থানে কুরআন পাঠ করা বিদ‘আত’।[56]
মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতদের করণীয় :
মুমূর্ষু ব্যক্তি মারা গেলে তার চোখ দু’টো খোলা থাকলে তা বন্ধ করে দিতে হবে। তার জেন্য দো‘আ করতে হবে। কারণ তখন তার জন্য যে দো‘আ করা হয় তাতে ফেরেশতাগণ আমীন বলেন। রাসূল (ছাঃ) আবু সালামার জন্য দো‘আ করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে মাফ করুন। হেদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দিন, তার উত্তরসুরীদের জন্য আপনি তার প্রতিনিধি হৌন। আপনি আমাদেরকে ও তাকে ক্ষমা করুন। হে বিশ্ব চরাচরের প্রতিপালক! আপনি তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করুন এবং সেখানে তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করুন’।[57] এরপর গোসল করাবে, কাফন পরাবে এবং ঋণ থাকলে নিকটাত্মীয়রা পরিশোধ করবে। তবে যে কেউ তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করতে পারে। অতঃপর জানাযার ছালাত আদায় করে দাফন কার্য সম্পন্ন করবে। এরপর মাইয়েতের জন্য হাত না তুলেই প্রত্যেকে দো‘আ করবে। এ সময় ‘আল্লাহুম্মাগফিরলাহু ওয়া ছাবিবতহু’ বলতে পারে।[58] এছাড়া আল্লাহুম্মাগফিরলাহু ওয়ারহামহু.. মর্মে বর্ণিত দো‘আটিও পড়তে পারে।[59] তার জন্য তিনদিন শোক পালন করা যাবে। তবে স্ত্রী স্বামীর জন্য চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। তবে তার জন্য বিলাপ ও মাতম করা যাবে না।[60]
তাদের জন্য দান-ছাদাক্বা করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার তিনটি আমল ব্যতীত সবগুলি আমল বন্ধ হয়ে যায় (১) ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ (২) এমন জ্ঞান, যার দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয় (৩) নেক সন্তান, যে পিতার জন্য দো‘আ করে’।[61] আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মৃত্যুর পরও মুমিন ব্যক্তির যেসব সৎকর্ম ও অবদান তার আমলনামায় যোগ হ’তে থাকবে, সেগুলি হ’ল- (১) ইলম : যা সে শিক্ষা করেছে এবং মানুষের মাঝে প্রচার-প্রসার ও বিস্তার করে গেছে (২) নেক সন্তান : যাকে সে দুনিয়ার রেখে গেছে (৩) কুরআন : যা মীরাছ রূপে সে রেখে গেছে (৪) মসজিদ : যা সে নির্মাণ করে গেছে (৫) মুসাফির খানা : যা সে পথিক-মুসাফিরদের জন্য তৈরী করে গেছে (৬) খাল, কুয়া, পুকুর প্রভৃতি : যা সে খনন করে গেছে (৭) দান : যা সে সুস্থ ও জীবিত অবস্থায় তার মাল হ’তে করে গেছে (এগুলোর ছওয়াব) মৃত্যুর পরও তার নিকট পৌঁছতে থাকবে’।[62] তিনি আরো বলেন, মৃত্যুর পর ক্বিয়ামত পর্যন্ত বান্দার সাতটি আমল প্রবহমাণ থাকে। (১) দ্বীনী ইলম শিক্ষাদান (২) নদী-নালা প্রবাহিত করণ (৩) কূপ খনন (৪) খেজুর বৃক্ষ রোপণ (৫) মসজিদ নির্মাণ (৬) কুরআন বিতরণ (৭) এমন সন্তান রেখে যাওয়া, যে পিতার মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে’।[63]
উপসংহার :
কুরআন তেলাওয়াত নেকীর কাজ। প্রত্যেকের উচিৎ জেনে বুঝে কুরআন তেলাওয়াত করা। তবে এ কুরআনের বিধান জীবিত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, মৃত ব্যক্তির জন্য নয়। তবে কেউ যদি জীবিত থাকাবস্থায় কুরআন নিজে শিখে ও অপরকে শেখায় সেটিই তার আমলনামায় যোগ হ’তে থাকবে। বিশেষতঃ মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে সূরা ইয়াসীন পাঠের বিধান ইসলামে নেই। তবে জীবিত মুসলমান কুরআনের যেকোন সূরা পঠন এবং শ্রবণ করতে পারে। এতে নেকী পাওয়া যাবে। কিন্তু মৃত ব্যক্তির পাশে বা কবরের পাশে কুরআন তেলাওয়াত সম্পূর্ণ বিদ‘আত। আল্লাহ আমাদের সকলকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন-আমীন!
– মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
[1]. তিরমিযী হা/২৯১০; মিশকাত হা/২১৩৭; ছহীহাহ হা/৩৩২৭ ।
[2]. আবুদাউদ হা/১৪৬৪; মিশকাত হা/২১৩৪; ছহীহাহ হা/২২৪০ ।
[3]. বুখারী হা/৪৯৩৭; মুসলিম হা/৭৯৮ ।
[4]. হাকেম হা/২০৩৬; মিশকাত হা/১৯৬৩; ছহীহু তারগীব হা/৯৮৪ ।
[5]. তিরমিযী হা/২৯১৫; ছহীহাহ হা/২৮২৯ ।
[6]. মুসলিম হা/২৬২৯; মিশকাত হা/২০৪ ।
[7]. বুখারী হা/৫০৫৫; মুসলিম হা/৮০০ ।
[8]. বুখারী হা/৫০৪৮; নাসাঈ হা/১০১৯; ইবনু মাজাহ হা/১৩৪১ ।
[9]. মুসলিম হা/৯১৬, ৯১৭; মিশকাত হা/১৬১৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪১৪৮ ।
[10]. মু‘জামুল কাবীর হা/১০৪১৭; ছহীহাহ হা/২১৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৪৯ ।
[11]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩০০৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৫০, সনদ ছহীহ।
[12]. মুসলিম হা/৯১৯; মিশকাত হা/১৬১৭ ।
[13]. আহমাদ হা/১২৫৮৫; আবু ইয়া‘লা হা/৩৫১২; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৩৯২২, সনদ ছহীহ ।
[14]. বুখারী হা/৩৮৮৪; মুসলিম হা/২৪ ।
[15]. বুখারী হা/১৩৫৬, ১৩৪২; মিশকাত হা/১৫৭৪ ।
[16]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৪১৮ ,।
[17]. শারহুল মুমতে‘ ৫/১৭৭ ।
[18]. আবুদাঊদ হা/৩১২১; আহমাদ হা/১৪৬৫৬; মিশকাত হা/১৬২২; যঈফুল জামে‘ হা/১০৭২; যঈফাহ হা/৫৮৬১ ।
[19]. আলবানী, যঈফাহ হা/৫৮৬১; ইরওয়া হা/৬৮৮; যঈফুল জামে‘ হা/১০৭২ ।
[20]. মীযানুল ই‘তিদাল ৭/৩৯৮, ৪/৫৫০, রাবী নং ১০৪০৯।
[21]. মীযানুল ই‘তিদাল ৪/৫৫০ রাবী নং ১০৪০৪।
[22]. ইবনু হাজার, আত-তালখীছ ২/২১৩, হা/৭৩৫ ।
[23]. আলবানী, আহকামুল জানায়েয, ১/১১৪, মাসআলা ১৫ দ্রঃ ।
[24]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৯৩-৯৪ ।
[25]. মুসনাদুশ শিহাব হা/১০৩৬; তাফসীরে কাশ্শাফ ৪/৩২; তাফসীরে বায়যাভী, সূরা ইয়াসীনের তাফসীর দ্রষ্টব্য; যঈফাহ/৪৬৩৬, ৫৮৭০; যঈফুল জামে‘ হা/১৯৩৫; যঈফ তারগীব হা/৮৮৫ ।
[26]. ইবনুল জাওযী, আয-যু‘আফা ৩/১১১, রাবী নং ৩২৬৮।
[27]. আল-মুগনী ২/৬৪৮, রাবী নং ৬১৩৭ ।
[28]. যঈফা হা/৪৬৩৬, ৫৮৭০; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ৬/০৮, রাবী নং ২৫; যাহাবী, মীযান ৪/৮৩, রাবী নং ৮৩৯০ ।
[29]. শু‘আইব আরনাউত বলেন, আছার হাসান, আহমাদ হা/১৭০১০ ।
[30]. আল-ইছাবাহ ৫/৩২৪ ।
[31]. ইরওয়া ৩/১৫২; আল-ইখতিয়ারাত ১/৯১ ও ১/৪৪৭ ।
[32]. আল-জারহ ওয়াত তা‘দীল ৪/৪০৫, রাবী নং ১৭৭৫; ইবনুল জাওযী, আয-যু‘আফা ওয়াল মাতরূকীন ২/৪৯, রাবী ১৬৬৩; যাহাবী, আল-মুগনী ফিয-যু‘আফা ১/৩০৪, রাবী নং ২৮৩০; মীযানুল ই‘তিদাল ২/২৯৫, রাবী নং ৩৭৯৯ ।
[33]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/১০৯৫৭, ১০৮৫২ – এর সনদের বিশুদ্ধতা জানা যায়নি। তবে ছহীহ নয় বলেই অনুমেয়।
[34]. দায়লামী হা/৬০৯৯; যঈফাহ হা/৫২১৯, ৫৮৬১; ইরওয়া হা/৬৮৮ ।
[35]. যঈফা হা/৫২১৯; মীযানুল ই‘তিদাল ৪/৯০, রাবী নং ৮৪২৫ ।
[36]. আল-ইলাল ওয়া মা‘রিফাতুর রিজাল ৩/২১০, রাবী নং ৪৯০৯; তারীখু ইবনু মঈন ১/৫৫ ।
[37]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/১০৯৫৩, ১০৮৪৮; আহকামুল জানায়েয ১/৯৩ ।
[38]. আত-তাক্বরীব ২/২২৯ ।
[39]. তাহযীবুল কামাল ২৭/২৫; মীযানুল ই‘তিদাল ৩/৪৩৮, রাবী নং ৭০৭০ ।
[40]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আর-রূহ ১/১১; আহকামুল জানায়েয ১/১৯৩; মিরক্বাত ৩/১২২৮; আবুবকর আল-খাল্লাল, আল-আমরু বিল মা‘রূফ, হা/২৪৯; আল-ক্বিরাআত ইনদাল কুবূর হা/০৯ ।
[41]. আহকামুল জানায়েয ১/১৯৩ ।
[42]. তাহযীবুল কামাল ২৭/২৫; মীযানুল ই‘তিদাল ৩/৪৩৮, রাবী নং ৭০৭০ ।
[43]. আহমাদ হা/২০৩১৫; মু‘জামুল কাবীর হা/৫৪১,৫১১; যঈফ তারগীব হা/৮৭৮; যঈফাহ হা/৬৮৪৩; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১০৮৪০ ।
[44]. ইরওয়া ৩/১৫০-১৫১; যঈফাহ হা/৬৮৪৩-এর আলোচনা দ্রঃ ।
[45]. মু‘জামুল কাবীর হা/৪৯১; আবুবকর আল-খাল্লাল, আল-আমরু বিল মা‘রূফ, হা/২৪৫; তারীখু দিমাশক ৫০/২৯, ৫৮৪৮৭; বাদরুল মুনীর ৫/৩৩৭; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৪২৪৩ ।
[46]. মীযানুল ই‘তিদাল ৪/৩০৫, রাবী নং ৩৭৯২, ৪৯৩০; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১৯২ ।
[47]. আবুবকর আল-খাল্লাল, আল-আমরু বিল মা‘রূফ, হা/২৪৬; আল-ক্বিরাআত ইনদাল কুবূর হা/৩; তারীখু বাগদাদ ৪/১৪৫ ।
[48]. আবুদাউদ, আল-মাসায়েল ১/১৫৮ ।
[49]. মীযানুল ই‘তিদাল ৪/৩০৫, রাবী নং ৩৭৯২, ৪৯৩০ ।
[50]. আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১৯২ ।
[51]. আহকামুল জানায়েয ১/১১, মাসআলা নং ১৫।
[52]. আল-ফাওয়াকেহুদ দাওয়ানী ১/২৮৪; শারহু মুখতাছারু খালীল ২/১৩৭ ।
[53]. ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ১৯/০৫ ।
[54]. আল-ইখতিয়ারাত ১/৪৪৭, ৯১ ।
[55]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/৩২৩ , মৃত ব্যক্তির অছিয়ত ও নযর পূরণ করার ব্যাপারে হাদীছ পাওয়া যায়। এমনিভাবে দো‘আ ও ছাদাক্বা জায়েয হবার ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। কিন্তু ছালাত ও ছিয়াম যদি তা অছিয়ত বা নযর না হ’য়ে থাকে তাহ’লে মৃতের পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে, এর কোন দলীল পাওয়া যায় না। আব্দুল্লাহ বিন ওমর বলেন, ‘কেউ কারু পক্ষ থেকে ছালাত ও ছিয়াম আদায় করতে পারে না’। (মুওয়াত্ত্বা পৃঃ ৯৪; নাসাঈ, আলবানী, মিশকাত ‘ক্বাযা ছওম’ অনুচ্ছেদ, হা/২০৩০, ফাৎহুল বারী ১১/১১৫ পৃঃ)। অবশ্য মানতের ছিয়াম থাকলে সে কথা আলাদা।
[56]. যাদুল মা‘আদ ১/৫৮৩ পৃঃ।
[57]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৬১৯ ‘জানাযা’ অধ্যায়, ৩ অনুচ্ছেদ ।
[58]. আবুদাঊদ হা/৩২২১ ।
[59]. মুসলিম হা/৩৩৬ ।
[60]. আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১২-২০ ।
[61]. মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩ ‘ইল্ম’ অধ্যায় ।
[62]. ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী, শু’আবুল ঈমান; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১/৯৯ পৃঃ, সনদ হাসান।
[63]. মুসনাদে বাযযার হা/৭২৮৯, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৯১৫ ।

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$