Register

Win 10.00$

জেনে নিন অজুর সঠিক নিয়ম, সুন্নাতসমূহ ও অজু ভংগের কারণগুলো

Be the first to comment!

আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ, যখন তোমরা সালাতে দাঁড়াতে মনস্থ কর তখন নিজেদের মুখমণ্ডল ধৌত কর…আয়াতের শেষ পর্যন্ত। আলোচ্য আয়াত থেকে প্রমাণ হলো যে, অজুতে তিনটি অংগ ধোয়া এবং মাথা মাসহ করা ফরজ।
ধোয়া, (পানি) প্রবাহিত করা। আর (ভিজা হাত) লাগান। আর মুখমণ্ডলের সীমা। (কপালের উপরের) চুলের গোড়া থেকে চিবুকের নীচ পর্যন্ত এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত। কেননা, (মুখমণ্ডল) শব্দটি (মুখোমুখি হওয়া) থেকে উদ্ভূত্। আর এ পুরা অংশের দ্বারাই সামনা সামনি হওয়া সংগঠিত হয়।
কনুইদ্বয় ও গোড়ালিদ্বয় ধৌত করার বিধানের অন্তর্ভূক্ত। আমাদের তিন ইমামের মতে। যুফার (র.) ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, সীমানা তার পূর্ববর্তী অংশের অন্তর্ভূক্ত হয় না, যেমন সাওম সম্পর্কিত বিধানে রাত্রি অন্তর্ভূক্ত নয়। আমাদের যুক্তি এই যে, এ সীমানার উদ্দেশ্য হচ্ছে তার পরবর্তী অংশকে বহির্ভূত করা। কারণ, যদি সীমানার উল্লেখ না থাকত তবে ধোয়ার হুকুম পুরো হাতকে শামিল করতো। পক্ষান্তরে সাওমের ক্ষেত্রে সীমানা উল্লেখের উদ্দেশ্য হল সে পর্যন্ত হুকুমের বিস্তার ঘটানো। কেননা শব্দটি সামান্য সময়ের বিরতির উপর ব্যবহার হয়। বিশুদ্ধ মতে পায়ের গোড়ায় বের হয়ে থাকা হাড়। এ থেকে উদ্ভিন্ন স্তন তরুণীকে বলা হয়। গ্রণ্থকার বলেন, মাথা মাসহ-এর ক্ষেত্রে মাথার এক চতুর্থাংশ পরিমাণ স্পর্শ করা ফরজ। কেননা মুগীরা ইবন শুবা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) একবার বস্তির আবর্জনা ফেলার স্থানে এসে পেশাব করে অজু করলেন। তখন তিনি মাথার সম্মুখভাগ এবং মোজা মাসহ করলেন।
যেহেতু আল-কোরানের বক্তব্য এখানে পরিমাণের দিক থেকে অস্পষ্ট, সেহেতু আলোচ্য হাদীছটি তার ব্যাখ্যা রুপে যুক্ত করা হয়। এ হাদীছটি ইমাম শাফিঈ (র.) কর্তৃক তিন চুলের দ্বারা নির্ধারণের বিপক্ষে প্রমাণ। তদ্রুপ ইমাম মালিক (র.) কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ মাসহ শর্ত করার বিপক্ষে প্রমাণ। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে, আমাদের ইমামদের মধ্যে কেউ কেউ ফরজ মাসহর হাতের তিন আংগুল পরিমাণ করেছেন।কেননা তা প্রকৃতপক্ষে যে অঙ্গ দ্বারা মাসহ করা হয়, তার সিংহভাগ।
অজুর সুন্নাতসমূহ
গ্রন্থকার বলেন, অজুর সুন্নাত হলো
০১. পাত্রে হাত প্রবেশ করানোর আগে উভয় হাত ধোয়া, যখন অজুকারী তার নিদ্রা থেকে উঠে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে, তখন সে যেন তার হাত তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত পাত্রে না ডুবায়। কেননা, সে জানে না, নিদ্রিত অবস্থায় তার হাত কোথায় ছিলো (অর্থাত্ কোন অংগ স্পর্শ করেছিল)। তাছাড়া হাত হলো তাহারাত সম্পাদনের উপকরণ। সুতরাং তার পবিত্রকরণের মাধ্যমে শুরু করাই সুন্নাত। এ হাত ধৌত করার পরিমাণ কবজি পর্যন্ত। কেননা, তাহারাত সম্পাদনের জন্য অতটুকুই যথেষ্ট।
০২. অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ্ বলা। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, যে বিসমিল্লাহ্ বলেনি তার অজু হয়নি। এখানে উদ্দেশ্য হলো, অজুর ফজিলত হাসিল হবে না। বিশুদ্ধ মত হল, অজুতে বিসমিল্লাহ্ বলা মুস্তাহাব। যদিও (মূল পাঠে)তাকে সুন্নাত বলেছেন। এবং ইস্তিনজার আগে ও পরে বিসমিল্লাহ্ বলরে; এ-ই সঠিক মত।
০৩. মিসওয়াক করা। কেননা নবি (সা.) সব সময় তা করতেন। মিসওয়াক না থাকলে আংগুল ব্যবহার করবে। কেননা নবি (সা.) এরুপ করেছেন।
০৪. কুলি করা।
০৫. নাকে পানি দেয়া, কেননা নবি (সা.) সবসময় উভয়টি করেছেন। এ দু’টির পদ্ধতি এই যে, তিনবার কুলি করবে এবং প্রতিবার নতুন পানি নিবে। একইভাবে নাকে পানি নিবে। নবি (সা.)-এর অজুতে এরূপ বর্ণনায় এসেছে।
০৬. উভয় কান মাসহ করা। মাথা মাসহ এর (অবশিষ্ট) পানি দ্বারা তা সম্পাদন করা সুন্নাত। ইমাম শাফিঈ ভিন্নমত পোষণ করেন। আমাদের দলীল হলো নবি (সা.) বলেছেনঃ কর্ণদ্বয় মাথারই অংশ বিশেষ।এর উদ্দেশ্য হল শরিয়তের হুকুম বর্ণনা করা, সৃষ্টিগত অবস্থা বর্ণনা করা নয়।
০৭. দাড়ি খেলাল করা। কেননা হযরত জিবরীল নবি (সা.)-কে তা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এটি আবূ ইউসূফের মতে সুন্নাত। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ (র.)-এর মতে তা (সুন্নাত নয়) বৈধ মাত্র। কেননা, সুন্নাত হল এমন কাজ, যা দ্বারা ফরজকে তার স্থানে পূর্ণতা দান করা হয়। অথচ দাড়ির ভিতরের অংশ (মুখমণ্ডল ধৌত করা) ফরযের স্থান নয়।
০৮. আংগুল খেলাল করা। কেননা নবি (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের আংগুলসমূহ খেলাল কর, যাতে জাহান্নামের আগুন তাতে প্রবেশ না করে। আর এ ভাষ্য যে, এ দ্বারা ফরজকে তার স্থানে পূর্ণতা দান করা হচ্ছে।
০৯. তিনবার পর্যন্ত পুনঃ ধৌত করা- কেননা নবি (সা.) একেকবার করে ধৌত করেছেন এবং বলেছেন, এটা এমন অজু, যা না হলে আল্লাহ্ সালাত কবুলই করবেন না। আবার দু’ দুবার করে ধৌত করেছেন এবং বললেন, এটি ঐ ব্যক্তির অজু, যাকে আল্লাহ্ দ্বিগুন বিনিময় দান করবেন। এরপর তিন তিন বার ধৌত করে বললেন, এটা আমার অজু এবং আমার পূর্ববর্তী নবিদের অজু। যে এর বেশী বা কম করবে, সে সীমালংঘন করল ও অন্যায় করল। অবশ্য এই কঠোর হুশিঁয়ারি হচ্ছে তিনবার করে ধোয়াকে সুন্নাত বলে বিশ্বাস না করার জন্য।
অজু ভংগের কারণগুলো

০১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে যে কোন কিছু বের হওয়া। কেননা আল্লাহ্ বলেছেন তোমাদের কেউ শৌচ স্থান থেকে আসে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-জিঞ্জাসা করা হলো কি? তিনি বললেন, পেশাব ও পায়খানা দু’দ্বারে যা রের হয়। আলোচ্য হাদীছের যা কিছু শব্দটি ব্যাপকতা জ্ঞাপক। সুতরাং প্রকৃতিগত ও অপ্রকৃতিগত সবকিছুই এর অন্তর্ভূক্ত।

০২. দেহের কোন অংশ থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে যদি পাক করার বিধান প্রযোজ্য হয় এমন স্থান অতিক্রম করে।

০৩. মুখ ভর্তি বমি। ইমাম শাফিঈ (রা.) বলেন, পেশাব পায়খানার রাস্তা ছাড়া (দেহের অন্য কোন স্থান থেকে) কিছু বের হলে অজু ভংগ হবে না। কেননা বর্ণিত আছে যে, নবি করিম (সা.) বমি করে অজু করে নি। তাছাড়া যে স্থানে নাজাসাত স্পর্শ করেনি, তা ধৌত করা যুক্তি-ঊর্ধ্ব করণীয় বিধান। সুতরাং শরিয়তের নির্দেশিত স্থানে তা সীমিত থাকবে। আর তা হল প্রকৃতিগত পথ। আমাদের প্রমাণ হলো, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেনঃ সকল প্রবাহিত রক্তের জন্যই অজু আবশ্যক। তিনি আরো বলেছেন, সালাত অবস্থায় কারো বমি হলে কিংবা নাকে রক্ত ঝরলে সে যেন ফিরে গিয়ে অজু করে এবং পূর্ববর্তী সালাতের উপর ‘বিনা’ করে যতক্ষণ না কথা বলবে।
আর যুক্তি হলো নাজাসাত নির্গত হওয়া তাহারাত ও পবিত্রতা ভংগের কারণ মূল আয়াতের এতটুকু তো যুক্তিসংগত।অবশ্য নির্দিষ্ট চার অংগ ধোয়ার নির্দেশ যুক্তির ঊর্ধ্বে। কিন্তু প্রথম বিষয়টি স্থানান্তরিত হলে দ্বিতীয় বিষয়টিও স্থানান্তরিত হওয়া অনিবার্য হবে। তবে নির্গত হওয়া তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন তা তাহারাতের হুকুমভূক্ত কোন অংশ গড়িয়ে পৌঁছবে। আর বমির ক্ষেত্রে যখন তা মুখ ভরে হবে। কেননা, ‘আবরণত্বক’ উঠে গেলে রক্ত বা পুঁজ স্বস্থানে প্রকাশ পায় মাত্র; নির্গত হয় না।
পক্ষান্তরে পেশাব-পায়খানার পথ দু’টি ব্যতিক্রম (অর্থাত্ সেখানে নাজাসাত দেখা গেলে অজু ভংগ হয়েছে বলে ধরা হবে) কেননা, তা নাজাসাতের প্রকৃত স্থান নয়। সুতরাং সেখানে নাজাসাতের প্রকাশ থেকেই তার ‘স্থানচ্যুতি ও নির্গত হওয়া প্রমাণিত হবে। মুখ ভরা বমির অর্থ হলো, অনায়াসে যা আটকানো সম্ভব নয়। কেননা, দৃশ্যতঃ তা নির্গত হতে বাধ্য। সুতরাং নির্গত হয়েছে বলেই গণ্য হবে। ইমাম যুফার (র.) বলেন, অল্প ও বিস্তর বমি সমপর্যায়ের। তদ্রূপ (রক্তের ক্ষেত্রেও তিনি) প্রবাহিত হওয়ার শর্ত আরোপ করেন না। পেশাব-পায়খানার স্বাভাবিক নির্গত হওয়ার স্থানের উপর কিয়াস করে।
তাছাড়া নবি করীম(সা.)-নিম্নোক্ত বাণী, বমি অজু ভংগের কারণ হচ্ছে শর্তমুক্ত। আমাদের প্রমাণ হল নবি করীম (সা.)-এর হাদীছ, প্রবাহিত না হলে এক দু’ফোঁটা রক্ত বের হলে অজু আবশ্যক নয়। এবং হযরত আলী (রা.) অজু ভংগের সবক’টি কারণ গণনা প্রসংগে বলেছেন,(মুখ ভরা বমি) এখানে যখন হাদীছগুলো পরস্পর বিরোধী তখন (সমন্বয়ের জন্য) ইমাম শাফিঈ (র.) বর্ণিত হাদীছকে অল্প বমির উপর এবং ইমাম যুফার বর্ণিত হাদীছকে বেশী বমির উপর ধরা হবে। পক্ষান্তরে পেশাব-পায়খানার রাস্তা এবং অন্যান্য স্থান থেকে নাজাসাতে নির্গত হওয়ার পার্থক্য ইতোপূর্বে আমরা বলে এসেছি।
যদি বিভিন্ন দফায় এত পরিমাণ বমি করে যে, একত্র করা হলে তা মুখ ভর্তি পরিমাণ হবে, তখন ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে স্থানের অভিন্নতা বিবেচ্য হবে। এবং ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মতে বমনোদ্রেককারী হেতু অর্থাত্ উদগারের অভিন্নতা বিবেচ্য। ইমাম আবূ ইউসূফ থেকে বর্ণিত যে, পদার্থ অজু ভংগের কারণ নয়, তা নাপাকও গণ্য নয়; ইমাম আবূ ইউসূফের যুক্তি এই যে, (উদারস্থ) শ্লেষ্মা নাজাসাতের সংস্পর্শহেতু নাজাসাত রূপে গণ্য।
আর যদি কেউ রক্তবমি করে এবং তা জমাট হয়, তবে এতে মুখ ভরতি বিবেচনা করা হবে। কেননা মূলতঃ তা পিত্ত-নিঃসৃত গাঢ় কাল পদার্থ। আর যদি তরল হয়, তবে ইমাম মুহম্মদ (র.) এর মতে, অন্যান্য প্রকার বমির নিরিখে এক্ষেত্রেও অনুরূপ মুখ ভর্তি হওয়া বিবেচ্য। অন্য দুই ইমামের মতে, যদি স্বতঃস্ফূর্ত বেগে প্রবাহিত হয় তাহলে অল্প হলেও অজু ভেংগে যাবে। কেননা পাকস্থলী রক্তের স্থান নয়। সুতরাং তা উদরস্থ কোন ক্ষত থেকে নির্গত হয়েছে বলে গণ্য হবে। (আর রক্ত) মাথার ভিতর থেকে গড়িয়ে নাকের নরম অংশ পর্যন্ত উপনীত হলে সর্বসম্মত মতে অজু ভেংগে যাবে। কেননা তা তাহারাতের হুকুমভূক্ত অংশে চলে এসেছে। সুতরাং নির্গত হওয়া সাব্যস্ত।

৪. ঘুমানো-কাত হয়ে কিংবা হেলান দিয়ে কিংবা এমন কিছুতে ঠেস দিয়ে য়ে, তা সরিয়ে দিলে সে পড়ে যাবে। কেননা, পার্শ্ব শয়ন শরীরের গ্রন্থিগুলোর শিথিলতার কারণ। ফলে এ অবস্থা স্বভাবতই কিছু (বায়ু) নির্গত হওয়া থেকে মুক্ত নয়। আর স্বভাবতঃ যা বিদ্যমান তা ইয়াকিনী বিষয় বলে গণ্য। আর তা হেলান অবস্থায় ঘুম আসলে ভূমির সাথে নিতম্বের সংলগ্নতা না থাকার কারণে জাগ্রতাবস্থার নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত হয়। আর কিছুতে উক্ত প্রকার ঠেস দিয়ে ঘুমালে অংগ শৈথিল্য চরমে পৌছে যায়। ঠেকনাটি তার পড়ে যাওয়া থেকে বাচিয়ে রাখে পক্ষান্তরে (সালাতে বা সালাতের বাইরে) দাড়ানো, বসা, রুকু ও সাজদা অবস্থার ঘুম তেমন নয়। এটাই বিশুদ্ধ মত। কেননা, আংশিক নিয়ন্ত্রণ তখনো বহাল থাকে, তা না হলে তো পড়েই যেতো। সুতরাং পুরোপুরি অঙ্গ শিথিল হয় না। এ বিষয়ে মূল ভিত্তি হলো নবি (সা.) এর বাণী, দাড়িয়ে, বসে,রুকুতে বা সাজদায় যে ঘুমায়, তার উপর অজু আবশ্যক নয়। অজু আবশ্যক হলো তার উপর, যে প্বার্শে ভর দিয়ে ঘুমায়, কেননা পার্শ্বের উপর ঘুমালে তার গ্রন্থি শিথিল হয়ে পড়ে।

৫. এমন সংজ্ঞাহীনতা, যাতে বোধ-লোপ পায়।

৬. অপ্রকৃতিস্থতা। কেননা, এগুলো অংগ শৈথিল্যের ক্ষেত্রে পার্শ্ব শয়নের চাইতেও বেশী ক্রিয়াশীল। সংজ্ঞাহীনতা সর্বাবস্থায় অজু ভংগের কারণ। ঘুমের ক্ষেত্রও কিয়াস ও যুক্তির দাবী এটাই ছিল। কিন্তু ঘুমের ক্ষেত্রে উক্ত পার্থক্য আমরা হাদীছ থেকে পেয়েছি। সংজ্ঞাহীনতা কে আবার নিদ্রার উপর কিয়াস করার সুযোগ নেই। কেননা তা নিদ্রার চাইতে বেশী প্রবল।

৭. রুকু-সাজদাবিশিষ্ট সালাতে অট্টহাসি। অবশ্য কিয়াস ও যুক্তির দাবী হল অজু ভংগ না হওয়া। ইমাম শাফিঈ (র.) এর মতও তাই। কেননা তা নির্গত নাজাসাত নয়। এ কারণে সালাতুল জানাযায়, তিলাওয়াতের সাজদায় এবং সালাতের বাইরে তা অজু ভংগের কারণ নয়। আমাদের দলীল হলো রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এর বাণী, শুনো, তোমাদের কেউ অট্টহাসি করলে অজু ও সালাত উভয়ই পুনরায় আদায় করবে।বলা বাহুল্য যে, এ ধরনের (মশহুর হাদীছ) দ্বারা কিয়াস করা হয়ে থাকে। তবে হাদীছটি যেহেতু পূর্ণ আকারের সালাত সম্পর্কিত, সেহেতু তার হুকুম তাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। অট্টহাসি হলো যা নিজে এবং পার্শ্ববর্তী শুনতে পায়। আর হাসি হলো যা নিজে শোনতে পায়, কিন্তু অন্যরা শুনতে পায় না। আর কেউ কেউ বলেছেন যে, হাসি দ্বারা অজু নষ্ট হয় না, কিন্তু সালাত ফাসিদ হয়ে যায়।

৮. পিছনের রাস্তা দিয়ে কোন কীট বের হলে তা অজু ভংগকারী হবে। তবে ক্ষতস্থান থেকে কীট বের হলে বা মাংসখণ্ড খসে পড়লে অজু ভংগ হবে না। মূল পাঠে ‘দাব্বা’ দ্বারা উদ্দেশ্য ‘কীট’ কেননা (মূলতঃ কীট নাজাসাত নয় বরং) তার দেহ লেগে থাকা পদার্থ হলো নাজিস বা নাপাক এবং তা অতি অল্প। আর অল্প নাজাসাত পেশাব-পায়খানার রাস্তায় নির্গত হওয়া অজু ভংগের কারণ। কিন্তু অন্য স্থান থেকে অল্প বের হওয়া অজু ভংগের কারণ নয়। তাই (অন্য স্থান থেকে অল্প বের হওয়া) ঢেকুরের সঙ্গে তুলনীয় এবং (পেশাব-পায়খানার রাস্তা থেকে অল্প বের হওয়া) নিঃশব্দ বাতকর্মের সাথে তুলনীয়। পক্ষান্তরে নারী অথবা পুরুষের পেশাবের রাস্তা দিয়ে নির্গত বায়ু অজু ভংগকারী নয়। কেননা তা নাজাসাতের স্থান থেকে সৃষ্ট নয়। তবে ‘উভয় পথ সংযূক্ত এমন কোন নারীর বায়ু নির্গত হলে তার জন্য অজু করে নেয়া মুসতাহাব।কেননা, সেটা পিছনের রাস্তা দিয়ে বের হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান।
কোন ফোড়া-ফোস্কার চামড়া তুলে ফেলার কারণে তা থেকে পানি-পুজ ইত্যাদি গড়িয়ে যদি ক্ষতস্থানের মুখ অতিক্রম করে তাহলে অজু ভংগ হবে, আর পানি যদি অতিক্রম না করে তবে অজু ভংগ হবে না। ইমাম যুফার (রা.) এর মতে উভয় অবস্থায় অজু ভংগ হবে। ইমাম শাফিঈ (র.) এর মতে উভয় অবস্থাতেই অজু ভংগ হবে না। মূলতঃ এটা পেশাব-পায়খানার রাস্তা ছাড়া ভিন্ন পথে নাজাসাত নির্গত হওয়ার মাসআলার সাথে সম্পৃক্ত। এই সমস্ত পানি পুজ ইত্যাদি অবশ্যই নাজিস। কেননা এগুলো মূলতঃ রক্ত, পর্যায়ক্রমে পক্ক হয়ে নির্গত ক্লেদ এবং আরো বেশী পক্ক হওয়ার পর পুজ, এরপর এই পার্থক্য তখনই হবে যখন আবরণ-ত্বক সরিয়ে ফেলার কারণে তা আপনা আপনি বের হয়। পক্ষান্তরে চিপ দেওয়ার কারণে বের হলে অজু ভংগ হবে না। কেননা (হাদীছ) বা নির্গত শব্দ রয়েছে, অথচ) এটা নির্গত নয়, বরং নিঃসরণ করা হয়েছে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$