দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আগামিকাল বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দেশের প্রতিটি মুসলিম পরিবারে ঈদ উৎসব পালন করা হবে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটি উৎসবের একটি ঈদুল ফিতর। বাংলার প্রতিটি পরিবার এখন ঈদ উদযাপনের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে।
প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঈদ মনে নিয়ে আসে নির্মল আনন্দের বার্তা। ঈদ মানেই অনাবিল আনন্দ ও খুশির উৎসব। ঈদ মানেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে হারিয়ে যাওয়ার দিন। ঈদ মানে সম্প্রীতি, ভালোবাসার বন্ধনে একে অপরকে নতুন করে আবদ্ধ করে নেয়ার দিন।
ঈদ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব। সারা বিশ্বের মুসলমানরা এ দিন আনন্দ উৎসবের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করে। সাক্ষাত, কোলাকুলি, কৌশল বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে এ দিনটিতে ছোট-বড়, ধনী–দরিদ্র, আমির-ফকির সব ভেদাভেদ ভুলে পরস্পরের মেলবন্ধনের মধ্যে দিয়ে এক কাতারে সামিল হয়।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দিন শেষে শাওয়ালের এক ফালি চাঁদ মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জীবনে নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির আগমনী বার্তা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের শেষে শাওয়ালের প্রারম্ভ গণনা করা হয়। শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলেই পরদিন ঈদ। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় লাইলাতুল জায়জা অর্থাৎ পুরস্কারের রজনী। আর চলতি ভাষায় বলা হয় চাঁদ রাত। ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা দেয়া ইসলামী বিধান।
ঈদের দিন সকালে গোসল, ওজু করে নতুন জামাকাপড় পরে মুসলমানরা ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে যায়। ঈদগাহে যাওয়ার আগে তারা সেমাই কিংবা অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবার খায়। মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া অনেক সওয়াবের কাজ।
ঈদুল ফিতর বা রোজা ভাঙার এই দিনটিকে ধর্মীয় পরিভাষায় পুরস্কারের দিবস হিসবে বর্ণনা করা হয়েছে। ঈদের নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ঈদুল ফিতরের দিন ফেরেশতারা রাস্তার মুখে মুখে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে, হে মুসলিম! তোমরা তোমাদের সেই পরম দাতা প্রভুর দিকে চলো, যিনি নিজ কৃপায় তোমাদেরকে শাস্তি ও মঙ্গলের শিক্ষা দেন, তার ওপর আমল করার শক্তি দেন, অতঃপর এর উপর তোমাদের পুরস্কৃত করেন। তোমাদের রাতে ইবাদত করার হুকুম করা হয়েছিল, তোমরা তা করেছ, দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তোমরা তা পালন করেছ, তোমরা গরিব-দুঃখীদের আহার দিয়েছ। আজ তার পুরস্কার গ্রহণ করো।
ঈদের নামাজের মোনাজাত শেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ উঁচু-নীচু ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে। ছোটরা বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করে। সেলামি গ্রহণ করে। বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র কিংবা আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যায় অনেকেই।
ঈদ মানে ‘আনন্দ’ আর ফিতর মানে ‘ভঙ্গ’ করা বা বিরতি দেয়া। তাই ঈতুল ফিতর হলো রোজা থেকে বিরতি দেয়ার আনন্দ। সব ধরনের বদভ্যাস, খেয়াল–খুশিকে বর্জন করে বিজয় অর্জনের আনন্দই ঈদুল ফিতর। এই আনন্দের দিনের জন্য তাই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন ও গেয়েছেন অসাধারণ ঈদের সঙ্গীত-
“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত , মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।”
Post a Comment