গণিতের বিভিন্ন বিষয়েরই বিভিন্ন ধ্রুব মান থাকে। এরমধ্যে একটি হলো ‘ফাই’। যার মানকে ‘গোল্ডেন রেশিও’ কিংবা ‘সোনালী অনুপাত’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গবেষণা হওয়া এই সোনালী অনুপাত নিয়ে বিচার বিশ্লেষন, গবেষণা করে গিয়েছেন পৃথিবীর বহু বিখ্যাত বিজ্ঞানী। প্রাচীন গ্রিসের অনেক বিজ্ঞানীরা ছাড়াও পিথাগোরাস, ইউক্লিড, কেপলার এমনকি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ রোজার পেনরস ও এই সোনালী অনুপাত নিয়ে গবেষণা করে গিয়েছেন।
এই পৃথিবীর সকল সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে নিখুঁত সামাঞ্জস্যতা। শুধু পৃথিবীই নয় গ্রহ নক্ষত্র, বিশ্বভ্রাম্মান্ড সবকিছুর মাঝেই সুশৃঙ্খল্পতা বজায় রয়েছে। সকল সৃষ্টির এই নিখুঁত অবকাঠামোগত মান হচ্ছে ১.৬১৮। যেটিকেই সোনালী অনুপাত হিসেবে অভিহিত করা হয়। ইংরেজীতে প্রকাশ করা হয় ফাই (PHI) () দ্বারা। গোল্ডেন রেশিও তথা সোনালী অনুপাত আবার উদ্ভুত হয়েছে ‘ফিবোনাচ্চি সংখ্যাক্রম’ থেকে।
ফিবোনাচ্চি সংখ্যাক্রম আবিষ্কার করেন ইতালীয় গণিতবিদ Fibonacci ফিবোনাচ্চি সিরিজটা এমন যেখানে পুর্বের দুই পদ যোগ করলে পরবর্তী পদ পাওয়া যায়। সিরিজটি হলো ০,১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭, ৬১০, ৯৮৭, ১৫৯৭, ২৫৮৪,……। ফিবোনাচ্চি সংখ্যাক্রমের যে কোনো একটি সংখ্যাকে তার পূর্বের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে সোনালী অনুপাত (১.৬১৮) এর কাছাকাছি মান কিংবা সরাসরি এই মানটিই পাওয়া যায়। ফিবোনাচ্চি সংখ্যাক্রমের ১৩ তম পদ থেকে এর নির্দিষ্ট মান অর্থ্যাৎ ১.৬১৮ পাওয়া যায়। যদি দুটি সংখ্যা a ও b হয় তাহলে এর সমীকরণ হবে,
(a+b)/a = a/b =
প্রায় প্রতিটি সৃষ্টির মাঝেই লুকিয়ে থাকা এই অনুপাতকে একতু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই খুজে পাওয়া যায়। গণিত ছাড়াও চিত্র, সঙ্গীত, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞানসহ সর্বক্ষেত্রেই ছড়িয়ে রয়েছে অদ্ভুত এই অনুপাত। মানুষের হৃদপিন্ড, দৈহিক গঠন, গাছপালা, ফুল, সবকিছুতেই খুজে পাওয়া যাইয় এই গোল্ডেন রেশিও।
কেউ যদি ফিতা দিয়ে মেপে মাথা থেকে পা পর্যন্ত উচ্চতাকে তার নাভি থেকে পা পর্যন্ত উচ্চতা দ্বারা ভাগ করে তবে যে মানটি পাওয়া যাবে তা হলো ১.৬১৮ অর্থাৎ সোনালী অনুপাত। এছাড়াও সূর্যমুখী ফুলের পাপড়ি ১.৬১৮ অনুপাতে বৃদ্ধি পায়। এরকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে এই গোল্ডেন রেশিও নিয়ে। বেশ কিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের লোগোতেও এই অনুপাতের ছোয়া লক্ষ্য করা যায়। অ্যাপল, পেপসি, হোন্ডা, টয়োটা, ন্যাশনাল জিওগ্রাফির মত প্রতিষ্ঠান তাদের লোগোতে এই অনুপাত ব্যাবহার করেছে।
এর চেয়েও বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে, মক্কার মাঝেও লুকিয়ে আছে এই সোনালী অনুপাত। উত্তর মেরু থেকে কাবা ঘরের দুরত্ত্ব হচ্ছে ৭৬৩১.৬৮ কি. মি। আবার দক্ষিণ মেরু থেকে কাবা ঘরের দুরত্ব হচ্ছে ১২৩৪৮.৩২ কি. মি। দক্ষিণ মেরু হতে দুরত্বকে উত্তর মেরু হতে দুরত্ব দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায় সেটি হলো ১.৬১৮ অর্থাৎ সোনালী অনুপাত। কাবাকে পৃথিবীর গোল্ডেন রেশিও পয়েন্ট ধরা হয়।
সবকিছুর মাঝে থেকে এই গোল্ডেন রেশিও যেনো মহান আল্লাহর অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে। কেননা সৃষ্টিকর্তা ব্যাতীত কিংবা ভিন্ন ভিন্ন সৃষ্টিকর্তার মাধ্যমে সৃষ্ট সকল কিছুর মাঝে এরকম নিখুঁত অনুপাত মেনে চলা সম্ভব নয়। যা শুধু একমাত্র আল্লাহর পক্ষেই সম্ভব।
কিভাবে কাবা শরীফ পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করছে এবং এর পেছনের অপার রহস্যের অল্পকিছু সঠিক যুক্তি ও কারন সহ ব্যখ্যা করা হয়েছে এই ভিডিওটিতে ।
যে কারনে এবং যেভাবে পৃথিবীর কেন্দ্রতে অবস্থিত কাবা শরীফ
Post a Comment