যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন তাকবিরে উলার সাথে (নামাজ শুরুর তাকবিরের সাথে) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করল তার জন্য দু’টি নাজাত লিপিবদ্ধ করা হল, ১. জাহান্নাম হতে ও ২. মুনাফিক্বী হতে (বুখারী ও মুসলিম মিশকাত ২১৭পৃষ্ঠা)।
এবং ‘যে ব্যক্তি জামায়াতের সাথে ইশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে (ইবাদত) করল। আর যে ফজরের নামাজ জামায়াতসহ আদায় করল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে (ইবাদত) নামাজ পড়ল” (মুসলিম)।
তিনি আরো বলেন, “যদি লোকে ইশা ও ফজরের নামাজের ফজীলত জানত, তাহলে তাদেরকে হামাগুঁড়ি দিয়ে আসতে হলেও তারা অবশ্যই ঐ নামাজদ্বয়ে আসত (বুখারী, মুসলিম)।
প্রসিদ্ধ তাবেঈ সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব (রহ.) ও কা’ব আল আহবার (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! নিন্মোক্ত আয়াত তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা নামাজ পড়তে জামায়াতে আসেনা।’ মহান আল্লাহ বলেন, (স্মরণ কর বিচার দিনের কথা) সেদিন পায়ের নলা উন্মোচন করা হবে এবং ওদেরকে সিজদা করার জন্য আহবান করা হবে কিন্তু ওরা তা করতে সক্ষম হবে না, হীনতাগ্রস্থ হয়ে ওরা ওদের দৃষ্টি অবনত করবে, অথচ ওরা যখন নিরাপদ ছিল, তখন ওদের আহবান করা হয়েছিল সিজদা করতে (আল-কুরআন ৬৮/৪২-৪৩)।
নামাজের পূর্ণ ফজিলত ও বরকত হাসিল হয় যদি জামায়াতের সাথে আদায় করা হয়। কেননা জামায়াতে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। বস্তুত নামাজের স্বভাব ও প্রকৃত দাবী হল জামায়াতের মাধ্যমেই তার স্বকীয় মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারা। এজন্যই রসূলুল্লাহ (স.) এবং সাহাবাগণ জামায়াতের এতো বেশি যত্নবান হতেন যেন জামায়াত নামাজের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমনকি মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরবস্থায়ও তিনি দুইজনের কাঁধে ভর করে জামায়াতে হাজির হয়েছিলেন। আর সালফে সালেহীনগণ ইমামের সাথে প্রথম তাকবীর না পেলে ৩ দিন ও জামায়াত ছুটে গেলে ৭ দিন দুঃখ প্রকাশ করতেন (মির’আত-৪/১০২)।
জামায়াত ত্যাগ করার কারো অনুমতি থাকলে রণাঙ্গনে শত্রুর সম্মুখে ব্যুহবিন্যাসে দন্ডায়মান যুদ্ধাদেরকে সে অনুমতি দেওয়া হত। অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) নবী (স.)-এর কাছে ফরজ নামাজ বাড়িতে পড়ার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, তুমি জামায়াতে উপস্থিত হবে, তোমার জন্য আমি কোন অনুমতি পাচ্ছিনা। পরনির্ভরশীল অন্ধের জন্য এই নির্দেশ হলে সুস্থ-সমর্থ চক্ষুষ্মান; যার কোন ওযর-অন্তরায় নেই তার জন্য কি নির্দেশ হতে পারে? মসজিদের সাথে অন্তরের সম্পর্ক স্থাপনকারীগণকে (জামা’আতে নামাজ আদায়কারীকে) আল্লাহর (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেয়া হবে। আসর ও ফজরের সালাত যথারীতি জামা’আতের সাথে আদায়কারী জান্নাতী হবেন (মুসলিম)।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ জামায়াতের প্রথম কাতারের লোকদের ওপর বিশেষ রহমত নাজিল করে থাকেন। কথাটি তিনি ৩বার বললেন। অতঃপর বলেন, দ্বিতীয় কাতারের ওপরেও (আহমাদ,দারেমী ও সহীহুল জামে)।
আমলের ক্ষেত্রে ফরজ ও সুন্নত নামাজকে একাকার করে রাখার কারণেই যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন জোহরের নামাজের জন্য মসজিদে প্রবেশ করলে ফরজ পূর্ব ৪রাকাআত+ফরজ ৪রাকাআত+ফরজ বাদ ২রাকাআত=এই মোট ১০রাকাআত নামাজ না পড়ে মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না। অথচ শুধু ৪রাকাআত জামায়াতে ফরজ পড়ে বের হয়ে গেলেই সে নামাজ পরিত্যাগকারীর যাবতীয় শাস্তি, কুপরিণতি ও ক্ষতি থেকে মুক্ত হয়ে যেত। একা নামাজ পড়ার চেয়ে পাঞ্জেগানা ওয়াক্তিয়া মসজিদে জামায়াতে নামাজ পড়লে ২৫ থেকে ২৭ গুণ সওয়াব হয়। দু’জনের নামাজ একাকীর চাইতে উত্তম। এভাবে জামায়াত যত বড় হয়, নেকী তত বেশী হয়।
মদিনার মসজিদে নববীতে পড়লে একহাজার গুণ এবং কা’বা গৃহে পড়লে একলক্ষ গুণ সওয়াব বেশী হয় (বুখারী,মুসলিম মিশকাত ৭২পৃষ্ঠা)। “যে ব্যক্তি কোন ফরজ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে স্বগৃহ থেকে ওযু করে জামায়াতের জন্য (মসজিদের দিকে) বের হয় সেই ব্যক্তি ইহরাম বাঁধা হাজীর ন্যায় সওয়াবের অধিকারী হবেন (আবূদাউদ)। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর সাথে মুসলিম হয়ে সাক্ষাতের ইরাদা রাখে তার উচিত সুন্দরভাবে পবিত্রতা অর্জন (অযু) করে স্রেফ নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়া, তাহলে তার প্রতি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে, একটি করে মর্যাদার স্তর উন্নীত ও তার পাপ মোচন করা হবে। আমরা দেখেছি যে, বিদিত কপট (মুনাফিক) ছাড়া নামাজের জামায়াত থেকে কেউ পশ্চাতে থাকত না।
রসূলুল্লাহ (স.) বলেন, মুনাফিদের ওপরে ফজর ও ইশার জামায়াতের চাইতে কঠিন কোন নামাজ নেই। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ) অথচ সে সময় মানুষকে দু’টি লোকের কাঁধে ভর করে হাঁটিয়ে এনে কাতারে খাড়া করা হত (মুসলিম-৬৫৪)। তিনি বলেন, তোমরা সামনের কাঁতারের দিকে অগ্রসর হও। কেননা যারা সর্বদা পিছনে থাকবে, আল্লাহ তাদেরকে (স্বীয় রহমত থেকে) পিছনে রাখবেন (মুসলিম) অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নাম পর্যন্ত পিছিয়ে দেবেন (আবূদাউদ)।
Post a Comment