Register

Win 10.00$

যে কারণে আল্লাহ তা’য়ালা কাবাকে ক্বিবলা নির্ধারণ করলেন

Be the first to comment!

কাবা শরিফ মক্কায় অবস্থিত, যা খুব শুষ্ক। এর চারপাশে রয়েছে তরু-লতাহীন পাথুরে পর্বতমালা। মক্কা মরুভূমি হওয়ার কারণে তাতে পুরো বছর উল্লেখ করার মত তেমন কোনো বৃষ্টিপাতও হয় না। অধিকন্তু মক্কার ভেতরে কিংবা বাইরে কোনো পুকুর কিংবা হ্রদও নেই।

নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের (ইবাদতের) জন্যে স্থাপিত হয়েছে তা বাক্কায় (মক্কায়), যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়াত (নির্দেশিকা)। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, (উদাহরণ স্বরূপ) মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ হয়ে যাবে। (আলে ইমরান, ০৩ : ৯৬-৯৭)

বাইতুল মুকাদ্দাসকে ক্বিবলা মেনে নামাজ পড়ার হুকুম দেয়ার পরও মক্কায় অবস্থানকালীন সময়ে বিশ্বনবী কাবার এমন স্থানে এসে নামাজ আদায় করতেন, যেখান থেকে নামাজ আদায় করলে কাবা এবং বাইতুল মুকাদ্দাস উভয়টিই সামনে থাকে।

কিন্তু হিজরতে পর আর এভাবে নামাজ আদায় সম্ভব হয়নি। তাই হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ক্বিবলাকে নিজের ক্বিবলা হিসেবে পেতে আল্লাহর নির্দেশের অধীর অপেক্ষায় বিশ্বনবী আসমানের দিকে বারবার তাকাতেন এবং দোয়া করতেন। অবশেষে আল্লাহ তা’য়ালা বিশ্বনবীর দোয়া কবুল করে ক্বিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়ে বলেন-

‘নিশ্চয় আমি আপনাকে বারবার আসমানের দিকে মুখত্তোলন করতে দেখি; অতএব আপনাকে অবশ্যই সে ক্বিবলার দিকে ফেরাব, যার আকাঙ্ক্ষা আপনি করেছেন, অনন্তর আপনি মসজিদে হারামের দিকে (পবিত্র নগরী মক্কা) মুখ ফিরিয়ে নিন। আর যে যেখানেই থাক সে দিকেই নিজের মুখ ফেরাও এবং নিশ্চয় যাদের আসমানি কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তারা এ কথা সুনিশ্চিতভাবেই জানে যে, তা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য। এবং আল্লাহ তাআলা তাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে গাফেল নন।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৪৪)

বাইতুল্লাহকে ক্বিবলা করা প্রসঙ্গে আয়াত নাজিলের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম ইবনে জারির তাবারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরত করেন, তখন মদিনায় অধিকাংশ অধিবাসী ছিল ইয়াহুদি, আল্লাহ তাআলা তাঁকে আদেশ দিলেন বাইতুল মুকাদ্দাসকে ক্বিবলা হিসেবে গ্রহণ করতে। এতে ইয়াহুদিরা খুশি হলো।

বিশ্বনবি ১৬-১৭ মাস পর্যন্ত বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করেন। কিন্তু তাঁর আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা ছিল কা’বাকে ক্বিবলা রূপে গ্রহণ করার। তাই এ উদ্দেশ্যে তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করতেন এবং আল্লাহর আদেশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন, এ জন্যে বারবার আসমানের দিকে দৃষ্টিপাত করতেন। (তাফসিরে তাবারি)

অতপর আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর আরজি কবুল করে এ আয়াত নাজিল করেছেন- হে আমার প্রিয়নবি! আপনি যে ক্বিবলাকে পছন্দ করে আমার নিকট আরজি পেশ করেছেন এবং এ সম্পর্কে নির্দেশ লাভের জন্য বারবার আসমানের দিকে দৃষ্টিপাত করছেন এবং অধীর আগ্রহে আমার নির্দেশের অপেক্ষা করছেন, আমি তা লক্ষ্য করেছি।
তাই (হে রাসুল!) আপনার সন্তুষ্টির খাতিরে আমি আপনাকে কা’বার দিকে মুখ করে নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান করলাম। প্রিয়নবি যা চেয়েছেন আল্লাহ তাআলা তাই দান করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আল্লাহ তাআলার নিকট সর্বাধিক নৈকট্যের অধিকারী, তিনি যে আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক প্রিয় রাসুল এ আয়াত দ্বারা এ সত্য পুনরায় প্রমাণিত ও প্রকাশিত হলো।

এ আয়াত দ্বারা এ কথাও প্রমাণিত হয় যে, দোয়া করার সময় আসমানের দিকে দৃষ্টিপাত করাতে দোয়অ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কেননা এতে উর্দ্ধের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ও হৃদয়ের টান স্থাপন হয়। এ দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে আল্লাহর নুর লাভ হয় এবং ফেরেশতাদের সান্নিধ্য লাভ হয় ফলে অন্তর স্বচ্ছ হয় এবং পরিপূর্ণ ইয়াক্বিন বা বিশ্বাস লাভে আল্লাহ তআলার সাহায্য পাওয়া যায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করার জন্য কুরআন ও সুন্নাহ বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। বাইতুল্লাহকে ক্বিবলা হিসেবে পাওয়ার শুকরিয়া আদায় করার এবং বাইতুল্লাহ জিয়ারাত কারার তাওফিক দান করুন। আমিন।

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$