Register

Win 10.00$

সুন্নাহ কি?

Be the first to comment!

সুন্নাহর পরিচিতি :
সুন্নাহ ‏( ﺍﻟﺴﻨﺔ ‏) শব্দটি ﺳﻦ - ﻳﺴﻦ থেকে ক্রিয়ামূল। যার অর্থ তরীকা বা পন্থা, পদ্ধতি, রীতিনীতি, হুকুম ইত্যাদি। এই পদ্ধতি ও রীতিনীতি নন্দিত বা নিন্দিত কিংবা প্রশংসিত বা ধিকৃত উভয়েই হ’তে পারে। যেমন- ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ (আল্লাহর নীতি)। মহান আল্লাহ্ বলেন, ﺳُﻨَّﺔَ ﻣَﻦْ ﻗَﺪْ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﻗَﺒْﻠَﻚَ ﻣِﻦ ﺭُّﺳُﻠِﻨَﺎ ﻭَﻻَ ﺗَﺠِﺪُ ﻟِﺴُﻨَّﺘِﻨَﺎ ﺗَﺤْﻮِﻳﻼً
‘আপনার পূর্বে আমি যত রাসূল প্রেরণ করেছি, তাদের ক্ষেত্রেও এরূপ নিয়ম ছিল। আপনি আমার নিয়মের কোন ব্যতিক্রম পাবেন না’ (ইসরা ১৭/৭৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻰ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺳَﻴِّﺌَﺔً ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭِﺯْﺭُﻫَﺎ ﻭَﻭِﺯْﺭُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃَﻭْﺯَﺍﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻰْﺀٌ ‘যে ব্যক্তি ইসলামে কোন নিকৃষ্ট সুন্নাত (রীতি) চালু করল, অতঃপর তার অবর্তমানে সেটার উপরে আমল করা হ’ল, তাহ’লে তার জন্য আমলকারীর সমান গোনাহ লেখা হবে, অথচ আমলকারীর গোনাহ সামান্যতম কম করা হবে না’। [1]
শারঈ পরিভাষায় সুন্নাত হ’ল রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-এর ঐ সকল বাণী, যা দ্বারা তিনি কোন বিষয়ে আদেশ-নিষেধ, বিশ্লেষণ, মৌন সম্মতি ও সমর্থন দিয়েছেন এবং কথা ও কর্মের মাধ্যমে অনুমোদন করেছেন, যা সঠিকভাবে জানা যায় তাকে সুন্নাহ বলা হয়।[2] অনুরূপভাবে ছাহাবী, তাবিঈ ও তাবে-তাবিঈদের আছার ও ফৎওয়াসমূহ অর্থাৎ তাদের ইজতেহাদ ও যেসব বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন, তাকেও সুন্নাহ বলে অভিহিত করা হয়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ﻓَﻌَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﺴُﻨَّﺘِﻰْ ﻭَﺳُﻨَّﺔِ ﺍﻟْﺨُﻠَﻔَﺎﺀِ ﺍﻟﺮَّﺍﺷِﺪِﻳْﻦَ ﺍﻟْﻤَﻬْﺪِﻳِّﻴْﻦَ ‘তোমাদের উপরে অবশ্য পালনীয় হ’ল আমার সুন্নাত ও সুপথ প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত’। [3]
সুন্নাহর গুরুত্ব : ইসলামী শরী‘আতের উৎস দু’টি, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। পবিত্র কুরআন যেমন আল্লাহর প্রেরিত অহী, ঠিক তেমনি সুন্নাহও রাসূল (ছাঃ)-এর অন্তরে প্রক্ষিপ্ত অহী।
কুরআন পঠিত অহী, আর সুন্নাহ অপঠিত অহী। পবিত্র কুরআনের পরই সুন্নাহর স্থান। সুন্নাহ প্রকৃতপক্ষে আল-কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন, সুন্নাহ মূলতঃ এরই বহিঃপ্রকাশ। তাই বলা হয়, পবিত্র কুরআন ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের হৃদপিন্ড স্বরূপ। আর সুন্নাহ এ হৃদপিন্ডের চলমান ধমনী। হৃদপিন্ডের চলমান ধমনী যেমন দেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শোণিত ধারা সতেজ, সক্রিয় ও গতিশীল করে রাখে, সুন্নাহও অনুরূপ দ্বীন ইসলামকে সতেজ, সক্রিয় ও গতিশীল রাখে। এজন্যই ইসলামে ছহীহ সুন্নাহর গুরুত্ব অপরিসীম। সুন্নাহ উন্নত ও মহামূল্যবান জ্ঞান সম্পদ হিসাবে সমাদৃত। দ্বীন ইসলাম পূর্ণাঙ্গ। এই পূর্ণতা ধরে রাখতে সুন্নাহর ভূমিকা অপরিসীম। কারণ যারা সুন্নাহর জ্ঞান থেকে বিমুখ তারা বিদ‘আতী পথ অন্বেষণে সর্বদা ব্যস্ত। সুন্নাহ ব্যতীত দ্বীন ইসলামের পূর্ণতা কল্পনা করা যায় না।
কুরআনের মত সুন্নাহও অহী : পবিত্র কুরআন যেমন আল্লাহ প্রেরিত অহী, ঠিক তেমনি রাসূলের কথা, কাজ, মৌন সম্মতি তথা সুন্নাহও আল্লাহর অহী, যা রাসূল (ছাঃ)-কে জানিয়ে দেয়া হ’ত। কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টি জিব্রাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ﻭَﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﺤِﻜْﻤَﺔَ ‘আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব (কুরআন) ও হিকমাত (সুন্নাহ) নাযিল করেছেন’ (নিসা ৪/১১৩)। ‘আর তিনি শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত’ (জুমু‘আ ৬২/২)। অবশ্য কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টির তথ্যসমূহ আল্লাহর পক্ষ থেকেই আগত। [4] এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ﺃَﻻَ ﺇِﻧِّﻰْ ﺃُﻭﺗِﻴْﺖُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﻣِﺜْﻠَﻪُ ﻣَﻌَﻪُ ‘জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আমাকে কুরআন ও তার সাথে অনুরূপ বিষয় (সুন্নাহ) দান করা হয়েছে’। [5]
হাসান বিনতে আতিয়া বলেন, জিব্রাঈল (আঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে সুন্নাহ নাযিল করতেন, যেভাবে কুরআন নাযিল করতেন। [6] কুরআন প্রত্যক্ষ অহী ও হাদীছ অপ্রত্যক্ষ অহী। কুরআন অহী মাতলূ যা তেলাওয়াত করা হয়। কিন্তু হাদীছ গায়ের মাতলূ যা তেলাওয়াত করা হয় না।[7] যার ভাষা ও অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, তাই কুরআন। আর যার অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে ও রাসূলের ভাষায় তা ব্যক্ত করেন, তাই হাদীছ ও সুন্নাহ।[8] রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ﻭَﻟْﻴَﻘْﺾِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻟِﺴَﺎﻥِ ﻧَﺒِﻴِّﻪِ ﻣَﺎ ﺷَﺎﺀَ ‘আল্লাহ যা পসন্দ করেন, তাঁর নবীর মুখ দিয়ে তা প্রকাশ করেন’। [9]
রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) নিজের খেয়াল-খুশিমত কোন ফায়ছালা দিতেন না এবং ইচ্ছামত কোন কথা বলতেন না। মহান আল্লাহ বলেন, ﻭَﻣَﺎ ﻳَﻨْﻄِﻖُ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻬَﻮَﻯ، ﺇِﻥْ ﻫُﻮَ ﺇِﻻَّ ﻭَﺣْﻲٌ ﻳُﻮﺣَﻰ، ﻋَﻠَّﻤَﻪُ ﺷَﺪِﻳْﺪُ ﺍﻟْﻘُﻮَﻯ
‘তিনি (রাসূল) তাঁর প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কেবলমাত্র অতটুকু বলেন, যা তাঁর নিকটে অহী হিসাবে নাযিল করা হয়। আর তাকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা’ (নাজম ৫৩/৩-৫)। হাদীছে এসেছে, একদা জনৈক ইহুদী আলেম রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, পৃথিবীর কোন ভূখন্ড সর্বাপেক্ষা উত্তম? রাসূল (ছাঃ) বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর জিব্রাঈল (আঃ) এসে তা জানিয়ে দেয়ার পর বললেন, ﺷَﺮُّ ﺍﻟْﺒِﻘَﺎﻉِ ﺃَﺳْﻮَﺍﻗُﻬَﺎ ﻭَﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟْﺒِﻘَﺎﻉِ ﻣَﺴَﺎﺟِﺪُﻫَﺎ ‘সর্বনিকৃষ্ট স্থান হ’ল বাজার ও সর্বোৎকৃষ্ট স্থান হ’ল মসজিদ’। [10] অতএব সুন্নাহও কুরআনের মতই অহী। একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
আবূ নাফিয লিলবার আল-বারাদী
[1]. মুসলিম হা/১০১৭; নাসাঈ হা/২৫৫৪; মিশকাত হা/২১০।
[2] . শাইখ যাকারিয়া আল-আনছারী, ফাতহুল বাকী আলা আলফাযিল ইরাকী (বৈরুত: দারুল কুতুবিাল ইলমিয়্যাহ, তা.বি.), পৃঃ ১২।
[3] . তিরমিযী হা/২৬৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৪৩; মিশকাত হা/১৬৫, সনদ ছহীহ।
[4] . তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন, ২৮২ পৃঃ।
[5] . আবু দাউদ হা/৪৬০৪; মিশকাত হা/১৬৩।
[6] . আশ-শারহুল ইবানা, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিচিতি।
[7] . মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, হাদীছের প্রামাণিকতা, পৃঃ ৫।
[8] . তাফসীর মাআরেফুল কুরআন, পৃঃ ১৩০৩।
[9] . বুখারী হা/৬০২৭।
[10] . আহমাদ, ইবনু হিববান, হাকেম, মিশকাত হা/৭৪১, সনদ হাসান।

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$