Register

Win 10.00$

আল-কুরআনের হক

Be the first to comment!

কুরআনুল কারীম বিশ্ব মানবতার জন্য এক অফুরন্ত নিয়ামাত। আল্লাহ তা‘আলার বড়ই মেহেরবানী যে, তিনি আমাদের উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﭐﻟﺮَّﺣۡﻤَٰﻦُ ١ ﻋَﻠَّﻢَ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَ ٢﴾ ‏[ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ : ١، ٢ ]
‘বড়ই মেহেরবান তিনি (আল্লাহ) কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন’ -[সূরা আর-রহমান : ১-২]।
কুরআন এমন একটি কিতাব যার মাধ্যমে আরবের সেই বর্বর জাতি সৌভাগ্যবান জাতিতে পরিণত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন দিয়েই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তৈরি করেছিলেন। তিনি বলেছেন,
« ﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻗَﺮْﻧِﻲ ».
‘বিশ্বমানবমন্ডলীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো আমার যুগ’ -[সহীহ বুখারী : ২৬৫২]।
কুরআন মাজীদের বেশ কিছু হক রয়েছে যেগুলো আদায় করা আবশ্যক। এর অনেকগুলো হক এমন যে, কেউ যদি তা আদায় না করে কিয়ামাতের দিন নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ করবেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻳَٰﺮَﺏِّ ﺇِﻥَّ ﻗَﻮۡﻣِﻲ ﭐﺗَّﺨَﺬُﻭﺍْ ﻫَٰﺬَﺍ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَ ﻣَﻬۡﺠُﻮﺭٗﺍ ٣٠﴾ ‏[ ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ : ٣٠ ]
‘আর রাসূল বলবেন (কিয়ামাতে), ‘‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার জাতি এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে’’ -[সূরা আল-ফুরকান : ৩০]।
আমাদের উপর কুরআনের যে হকগুলো রয়েছে তা এখানে আলোচনা করা হলো :
ঈমান আনা
কুরআনের হকসমূহের মধ্যে প্রধানতম হক বা অধিকার হলো কুরআনের প্রতি ঈমান আনা। কুরআনের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হলো : কুরআন আল্লাহর কালাম, ইহা আসমানী শেষ কিতাব এবং এই কিতাবের মধ্য দিয়ে সকল আসমানী কিতাব রহিত হয়ে গিয়েছে। কুরআন বিশ্ব মানবমন্ডলীর জন্য হিদায়াত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর বা আলো। কুরআনে এসেছে,
﴿ ﻓََٔﺎﻣِﻨُﻮﺍْ ﺑِﭑﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِۦ ﻭَﭐﻟﻨُّﻮﺭِ ﭐﻟَّﺬِﻱٓ ﺃَﻧﺰَﻟۡﻨَﺎۚ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ﺧَﺒِﻴﺮٞ ٨﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﻐﺎﺑﻦ : ٨ ]
‘অতএব তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এবং আমি যে নূর অবতীর্ণ করেছি তার প্রতি ঈমান আন। আর তোমরা যে আমল করছ আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত’ -[সূরা আত-তাগাবুন : ০৮]।
﴿ ﺃَﻓَﺘُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺒَﻌۡﺾِ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐِ ﻭَﺗَﻜۡﻔُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺒَﻌۡﺾٖۚ ﻓَﻤَﺎ ﺟَﺰَﺍٓﺀُ ﻣَﻦ ﻳَﻔۡﻌَﻞُ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻣِﻨﻜُﻢۡ ﺇِﻟَّﺎ ﺧِﺰۡﻱٞ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺤَﻴَﻮٰﺓِ ﭐﻟﺪُّﻧۡﻴَﺎۖ ﻭَﻳَﻮۡﻡَ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﻳُﺮَﺩُّﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰٰٓ ﺃَﺷَﺪِّ ﭐﻟۡﻌَﺬَﺍﺏِۗ ﻭَﻣَﺎ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻐَٰﻔِﻞٍ ﻋَﻤَّﺎ ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ٨٥﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٨٥ ]
‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর, সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্চনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে! আর কিয়ামাতের দিন তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আর আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন’ -[সূরা আল-বাকারাহ : ৮৫]।
সহীহভাবে পড়তে জানা
কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন পড়া জানতে হবে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﭐﻗۡﺮَﺃۡ ﺑِﭑﺳۡﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ١﴾ ‏[ ﺍﻟﻌﻠﻖ : ١ ]
‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’ [সূরাহ আলাক : ১]। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
« ﺗَﻌَﻠَّﻤُﻮﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ، ﻭَﺍﺗْﻠُﻮﻩُ »
‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তা তিলাওয়াত কর’ [মুসনাদ আল-জামি‘ : ৯৮৯০]।
তিলাওয়াত করা ও শুনা
কুরআন তিলাওয়াত করা কুরআনের অন্যতম হক। কুরআন মাজীদে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এভাবে,
﴿ ﭐﺗۡﻞُ ﻣَﺎٓ ﺃُﻭﺣِﻲَ ﺇِﻟَﻴۡﻚَ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐِ﴾ ‏[ ﺍﻟﻌﻨﻜﺒﻮﺕ : ٤٥ ]
‘তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর’ -[সূরাহ আনকাবুত : ৪৫]।
সহীহভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। তিলাওয়াতের আদবগুলো রক্ষা করতে হবে। বাংলাভাষায় উচ্চারণ করে পড়লে হবে না।
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏« ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺘَﻐَﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ »
আবূ হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কুরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়’ -[সহীহ বুখারী : ৭৫২৭]।
ধীরস্থীরভাবে তিলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়ে কুরআনে বলা হয়েছে।
﴿ ﻭَﺭَﺗِّﻞِ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَ ﺗَﺮۡﺗِﻴﻠًﺎ ٤﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺰﻣﻞ : ٤ ]
‘তুমি কুরআনকে তারতীলের সাথে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে তিলাওয়াত কর’ -[সূরা আল-মুযযাম্মিল : ৪]।
আর কুরআন তিলাওয়াতে রয়েছে বিরাট সাওয়াব। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺣَﺮْﻓًﺎ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻓَﻠَﻪُ ﺑِﻪِ ﺣَﺴَﻨَﺔٌ ، ﻭَﺍﻟﺤَﺴَﻨَﺔُ ﺑِﻌَﺸْﺮِ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ ، ﻻَ ﺃَﻗُﻮﻝُ ﺍﻟْﻢ ﺣَﺮْﻑٌ ، ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺃَﻟِﻒٌ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻻَﻡٌ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻣِﻴﻢٌ ﺣَﺮْﻑٌ »
‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ’ -[সুনান আত-তিরমিযি : ২৯১০]।
কুরআন তিলাওয়াত শুনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ‏« ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻗُﻠْﺖُ ﺁﻗْﺮَﺃُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﺣِﺐُّ ﺃَﻥْ ﺃَﺳْﻤَﻌَﻪُ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِﻱ»
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদি আল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘তুমি আমাকে কুরআন পড়ে শুনাও, আমি বললাম, আপনার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, আমি আপনাকে কীভাবে কুরআন শুনাবো? তখন তিনি বললেন, আমি অপরের নিকট থেকে কুরআন শুনতে ভালবাসি’ -[সহীহ বুখারী : ৫০৪৯]।
অপরকে শিক্ষা দেয়া
কুরআনের অন্যতম হক হলো তা অপরকে শিক্ষা দেয়া। আমাদের প্রিয় নবীর অন্যতম কাজ ছিল মানুষকে কুরআন শিক্ষা দেয়া। আল-কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﻟَﻘَﺪۡ ﻣَﻦَّ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﺇِﺫۡ ﺑَﻌَﺚَ ﻓِﻴﻬِﻢۡ ﺭَﺳُﻮﻟٗﺎ ﻣِّﻦۡ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢۡ ﻳَﺘۡﻠُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻢۡ ﺀَﺍﻳَٰﺘِﻪِۦ ﻭَﻳُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢۡ ﻭَﻳُﻌَﻠِّﻤُﻬُﻢُ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐَ ﻭَﭐﻟۡﺤِﻜۡﻤَﺔَ ﻭَﺇِﻥ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻞُ ﻟَﻔِﻲ ﺿَﻠَٰﻞٖ ﻣُّﺒِﻴﻦٍ ١٦٤﴾ ‏[ ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٦٤ ]
‘‘অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল’’-[সূরা আলে ইমরান : ১৬৪]। কুরআন শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম কাজ আর নেই। হাদীসে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻠَّﻢَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻋَﻠَّﻤَﻪُ »
উসমান রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’-[সহীহ বুখারী : ৫০২৭]। যদি কেউ অপরকে কুরআন শিক্ষা দেয়, তবে তাঁর জন্য শিক্ষাগ্রহণকারীর সমান সাওয়াবের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। হাদীসে এসেছে,
« ﺍﻟْﺪَّﺍﻝ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮ ﻛَﻔَﺎﻋِﻠِﻪ »
‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরুপ সাওয়াব পাবে’’ -[সুনান আত-তিরমীযি : ২৬৭০]।
হিফয বা মুখস্থ করা
কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। এ হিফযেরই এক প্রকার হচ্ছে, বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানো। যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কুরআনকে সংরক্ষণ করেছেন। কুরআনে এসেছে,
﴿ ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﺤۡﻦُ ﻧَﺰَّﻟۡﻨَﺎ ﭐﻟﺬِّﻛۡﺮَ ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﻟَﻪُۥ ﻟَﺤَٰﻔِﻈُﻮﻥَ ٩﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺠﺮ : ٩ ]
‘‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী’’ -[সূরা আল-হিজর : ০৯]।
যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟِﺼَﺎﺣِﺐِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﺍﻗْﺮَﺃْ ﻭَﺍﺭْﺗَﻖِ ﻭَﺭَﺗِّﻞْ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ﺗُﺮَﺗِّﻞُ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓَﺈِﻥَّ ﻣَﻨْﺰِﻟَﻚَ ﻋِﻨْﺪَ ﺁﺧِﺮِ ﺁﻳَﺔٍ ﺗَﻘْﺮَﺅُﻫَﺎ »
‘‘ কুরআনের হাফেযকে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হয়’’ -[সুনান আত-তিরমিযী : ২৯১৪]।
বুঝা ও উপলব্ধি করা
কুরআনের অর্থ বুঝা ও অনুধাবন করা কুরআনের অন্যতম হক। কুরআনের অর্থ না বুঝতে পারলে কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য ও দাবী আমরা কেউ পালন করতে পারবো না। না বুঝে পড়লে কুরআনের আসল মজা পাওয়া যাবে না। কুরআন বুঝার জন্য শব্দের অর্থ, আয়াতের ব্যাখ্যা, অবতীর্ণ হওয়ার কারণ বা প্রেক্ষাপট এবং কুরআনের আয়াতসমূহের শিক্ষা জানতে হবে। কুরআনে এসেছে,
﴿ ﺇِﻧَّﺎٓ ﺃَﻧﺰَﻟۡﻨَٰﻪُ ﻗُﺮۡﺀَٰﻧًﺎ ﻋَﺮَﺑِﻴّٗﺎ ﻟَّﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﻌۡﻘِﻠُﻮﻥَ ٢﴾ ‏[ ﻳﻮﺳﻒ : ٢ ]
‘‘নিশ্চয় আমি একে আরবী কুরআনরূপে নাযিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার’’-[সূরা ইউসুফ: ০২]। কুরআন বুঝার ক্ষেত্রে হাদীসের সাহায্য না নিলে যে কেউ বিভ্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে হাদীসের সাহায্য নিলেই কেবল সহীহভাবে কুরআন বুঝা সম্ভব। আল-কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﻭَﻣَﺎٓ ﺀَﺍﺗَﻯٰﻜُﻢُ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻓَﺨُﺬُﻭﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﻧَﻬَﻯٰﻜُﻢۡ ﻋَﻨۡﻪُ ﻓَﭑﻧﺘَﻬُﻮﺍْۚ﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺸﺮ : ٧ ]
‘‘আর রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’’-[সূরা আল-হাশর: ৭]। কুরআন বুঝার পাশাপাশি তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
﴿ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻳَﺘَﺪَﺑَّﺮُﻭﻥَ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَ ﺃَﻡۡ ﻋَﻠَﻰٰ ﻗُﻠُﻮﺏٍ ﺃَﻗۡﻔَﺎﻟُﻬَﺎٓ ٢٤﴾ ‏[ ﻣﺤﻤﺪ : ٢٤ ]
‘‘তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না ? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে’’- [সূরা মুহাম্মাদ : ২৪]।
আমল করা
কুরআনের আমল করার অর্থ, কুরআনের অনুসরণ করা। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,
﴿ ﭐﺗَّﺒِﻌُﻮﺍْ ﻣَﺎٓ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴۡﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢۡ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻌُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻧِﻪِۦٓ ﺃَﻭۡﻟِﻴَﺎٓﺀَۗ ﻗَﻠِﻴﻠٗﺎ ﻣَّﺎ ﺗَﺬَﻛَّﺮُﻭﻥَ ٣﴾ ‏[ ﺍﻷﻋﺮﺍﻑ : ٣ ]
‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’ -[সূরা আল-আরাফ : ৩]।
কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
« ﻛُﻨَّﺎ ﻧَﺘَﻌَﻠَّﻢُ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﺸْﺮَ ﺁﻳَﺎﺕٍ ﻓَﻤَﺎ ﻧَﻌْﻠَﻢُ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺑَﻌْﺪَﻫُﻦَّ ﺣَﺘَّﻰ ﻧَﺘَﻌَﻠَّﻢَ ﻣَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ »
‘আমরা যখন নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম’ -[শরহে মুশকিলুল আছার : ১৪৫০]।
যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেয়া
কুরআন মাজীদ সম্মানিত এবং যারা কুরআনের সাথে থাকবে তাঁরাও সম্মানের অধিকারী। এজন্য কুরআনের যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। কুরআন তিলাওয়াতের সময় তাঁর হক আদায় করতে হবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﺗَﻴۡﻨَٰﻬُﻢُ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐَ ﻳَﺘۡﻠُﻮﻧَﻪُۥ ﺣَﻖَّ ﺗِﻠَﺎﻭَﺗِﻪِۦٓ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﻪِۦۗ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻜۡﻔُﺮۡ ﺑِﻪِۦ ﻓَﺄُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﭐﻟۡﺨَٰﺴِﺮُﻭﻥَ ١٢١﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٢١ ]
‘যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি, তাঁরা তা পাঠ করে যথার্থভাবে। তাঁরাই তাঁর প্রতি ঈমান আনে। আর যে তা অস্বীকার করে, সে-ই ক্ষতিগ্রস্থ’ -[সূরা আল-বাকারাহ : ১২১]। কুরআনকে মহববত করা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মহববত করার শামিল। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
« ﻣﻦ ﺃﺣﺐَّ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥَ ﺃﺣﺐَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪَ »
‘যে কুরআনকে মহববত করল সে যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মহববত করল’-[জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ৩২৯]।
কুরআন প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা
কুরআনের প্রচার, প্রসার ও তা প্রতিষ্ঠার কাজ করা কুরআনের অন্যতম হক। নিজ ব্যবস্থাপনায় কুরআন শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা, হিফয প্রতিযোগিতা, কুরআন বুঝার আসর, তাফসীর প্রতিযোগিতা, মাকতাব চালু করা, বিভিন্ন এলাকায় কুরআনের মুয়াল্লিম প্রেরণ বা মুয়াল্লিম স্পন্সর করা, কুরআন বিতরণ করা, কুরআনের মুয়াল্লিম তৈরি করা, কুরআনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত সংস্থাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা, এ কাজের অন্তর্ভুক্ত। সর্বোপরি কুরআনের বিধান সমাজে প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
﴿ ﻭَﺃَﻥۡ ﺃَﺗۡﻠُﻮَﺍْ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَۖ ﻓَﻤَﻦِ ﭐﻫۡﺘَﺪَﻯٰ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻬۡﺘَﺪِﻱ ﻟِﻨَﻔۡﺴِﻪِۦۖ ﻭَﻣَﻦ ﺿَﻞَّ ﻓَﻘُﻞۡ ﺇِﻧَّﻤَﺎٓ ﺃَﻧَﺎ۠ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤُﻨﺬِﺭِﻳﻦَ ٩٢﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﻤﻞ : ٩٢ ]
‘আর আমি যেন আল-কুরআন অধ্যয়ন করি, অতঃপর যে হিদায়াত লাভ করল সে নিজের জন্য হিদায়াত লাভ করল; আর যে পথভ্রষ্ঠ হল তাকে বল, আমিতো সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত’ -[সূরা আন-নামল : ৯২]।
﴿۞ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑَﻠِّﻎۡ ﻣَﺎٓ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴۡﻚَ ﻣِﻦ ﺭَّﺑِّﻚَۖ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٦٧ ]
হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও [সূরা আল-মায়িদাহ : ৬৭]। কুরআন তিলাওয়াত, হিফয, প্রচার, প্রসার এবং প্রতিষ্ঠার কাজে আনন্দ প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে। কুরআন এমন একটি কিতাব যা নিয়ে ঈমানদার বান্দাহগণ আনন্দ প্রকাশ করতে পারে। কেননা আল-কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱُ ﻗَﺪۡ ﺟَﺎٓﺀَﺗۡﻜُﻢ ﻣَّﻮۡﻋِﻈَﺔٞ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢۡ ﻭَﺷِﻔَﺎٓﺀٞ ﻟِّﻤَﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟﺼُّﺪُﻭﺭِ ﻭَﻫُﺪٗﻯ ﻭَﺭَﺣۡﻤَﺔٞ ﻟِّﻠۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ٥٧ ﻗُﻞۡ ﺑِﻔَﻀۡﻞِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺑِﺮَﺣۡﻤَﺘِﻪِۦ ﻓَﺒِﺬَٰﻟِﻚَ ﻓَﻠۡﻴَﻔۡﺮَﺣُﻮﺍْ ﻫُﻮَ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻣِّﻤَّﺎ ﻳَﺠۡﻤَﻌُﻮﻥَ ٥٨﴾ ‏[ ﻳﻮﻧﺲ : ٥٧، ٥٨ ]
‘হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত। বল, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম’ -[সূরা ইউনুস : ৫৭-৫৮]। আবূ সাইদ খুদরী রাদি আল্লাহু আনহু বলেন, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ হলো আল-কুরআন এবং এর অধিকারী হওয়াই রহমত’ -[শুয়াবুল ঈমান]।
প্রিয় পাঠক!
আমরা কি কুরআনের হকগুলো আদায় করতে পারছি? আদায় করার জন্য কোন প্রচেষ্টা আছে কি? আসুন কুরআনের হকগুলো আদায় করি, কিয়ামাতের সেই ভয়াবহ দিনে কুরআনের সুপারিশ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কুরআনের হকগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দিন। আমীন!
-হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল
সম্পাদনা : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$