Register

Win 10.00$

শবেবরাত : কতিপয় ভ্রান্ত ধারণার জবাব

Be the first to comment!

শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ‘শবেবরাত’ বা ‘লায়লাতুল বারাআত’ বলে প্রচলিত আছে। শবেবরাত শব্দটি ফারসী। যার অর্থ হ’ল অংশ বা নির্দেশ পাওয়ার রাত্রি। শবেবরাতকে উপলক্ষ করে আমাদের সমাজে যা কিছু করা হয় তার প্রমাণ হিসাবে সূরা দুখানের ৩নং আয়াত পেশ করা হয়। এই আয়াত দ্বারা কতিপয় লোক মনে করেন যে, এই রজনীতে আলাহ রববুল আলামীন কুরআনের মত বরকতময় কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এই রজনীতে বান্দার গোনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়, আয়ু বৃদ্ধি করা হয়, রূযী বণ্টন করা হয়, হায়াত-মউতের রেজিষ্ট্রি করা হয়, মৃত ব্যক্তিদের রূহগুলো তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে এরাতে সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ পায়। তাই আত্মীয়-স্বজনরা এরাতে কবরস্থন যিয়ারত করতে যায়। ঘর-বাড়ী, রাস্তা-ঘাট, মসজিদগুলোকে আগরবাতি, মোমবাতি ও বিশেষ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। হালুয়া রুটি খাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়।
মানুষ ভাল কাজের দিকে ধাবিত হোক এটা সকলেরই কামনা। কিন্তু সেই ভাল কাজটা যদি রাসূলুলাহ (ছাঃ) থেকে ভাল কাজ হিসাবে প্রমাণিত না হয়, তাহ’লে উক্ত ভাল কাজকে ভাল বলা যায় না। কেননা তাঁর যুগে যে ইবাদতের উৎপত্তি হয়নি পরবর্তীতে তা চালু করার নামই হ’ল বিদ‘আত। আর বিদ‘আত হ’ল ভ্রষ্টতা। আসুন! শবেবরাতের প্রচলিত কর্মসূচীর সাথে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের কর্মসূচীর কতটুকু মিল রয়েছে, তা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে যাচাই-বাছাই করে নিই।
শবেবরাত সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ও তার জবাব :
(১) কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲْ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ . ‘আমরা তো কুরআন বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি’
(দুখান ৪৪/৩) । আর সেই বরকতময় রজনী দ্বারা শবেবরাতই উদ্দেশ্য! বিধায় তা বিশেষভাবে পালনীয়।
জবাব : সূরা দুখানের উক্ত আয়াত দ্বারা শবেবরাতকে বুঝানো হয়নি; বরং রামাযানের ক্বদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে। যেমন সূরা ক্বদরের প্রথম আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲْ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ‘অবশ্যই আমরা কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি লাইলাতুল ক্বদরে’ (ক্বদর ৯৭/১) । এ বিষয়ে মুফাসসিরগণের বক্তব্য হ’ল ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ দ্বারা শবেক্বদর বুঝানো হয়েছে। যা রামাযান মাসের শেষ দশকে হয়।[1]
(২) শবেবরাত ও শবেক্বদরের একই কাজ, উভয়টার মর্যাদা সমান।
জবাব : উক্ত ধারণা সঠিক নয়। শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রিকে ‘শবেবরাত’ বলা হচ্ছে। উক্ত রাত্রিতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে বলে কোন ছহীহ দলীল নেই। আর ‘শবেক্বদর’ হ’ল রামাযানের শেষ দশকে। যে রজনীতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এ মর্মে কুরআনের আয়াত ও বহু ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যেমন আলাহ তা‘আলা বলেন, ﺷَﻬْﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺍﻟَّﺬِﻯْ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻓِﻴْﻪِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ‘রামাযান মাসই সে মাস যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫) । অন্যত্র বলেন, ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲْ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ‘অবশ্যই আমরা কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি লাইলাতুল ক্বদরে’ (ক্বদর ৯৭/১) । এ ক্বদরের রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে কুরআনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِّﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮٍ ‘ক্বদরের রাত্রি হাযার মাসের চেয়েও বেশী উত্তম’ (ক্বদর ৯৭/৩) ।
শুধু কুরআনই নয়, বরং আলাহ যতগুলো আসমানী কিতাব বা ছহীফা অবতীর্ণ করেছেন তার সবগুলোই রামাযান মাসে অবতীর্ণ করেছেন। ওয়াছেলা ইবনুল আসক্বা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুলাহ (ছাঃ) বলেছেন,
ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ ﺻُﺤُﻒُ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻓِﻰْ ﺃَﻭَّﻝِ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣِّﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﺃُﻧْﺰِﻟَﺖِ ﺍﻟﺘَّﻮْﺭَﺍﺓُ ﻟِﺴِﺖٍّ ﻣَﻀَﻴْﻦَ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺍﻟْﺎِﻧْﺠِﻴْﻞُ ﻟِﺜَﻼَﺙِ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺧَﻠَﺖْ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺍﻟْﺰَﺑُﻮْﺭُ ﻟِﺜَﻤَﺎﻥِ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺧَﻠَﺖْ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻟِﺎَﺭْﺑَﻊٍ ﻭَّﻋِﺸْﺮِﻳْﻦَ ﺧَﻠَﺖْ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ .
‘ইবরাহীম (আঃ)-এর ছহীফা সমূহ রামাযানের ১ম তারিখে, তাওরাত রামাযানের ৬ তারিখে, ইঞ্জীল রামাযানের ১৩ তারিখে, যাবূর রামাযানের ১৮ তারিখে, কুরআন মাজীদ চবিবশ তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর পঁচিশের রাত্রিতে অবতীর্ণ করা হয়েছে’।[2]
৩. ১৫ শা‘বানের রাতে আলাহ রাববুল আলামীন মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন।
জবাব : উক্ত দাবী সঠিক নয়। আলাহ রাববুল আলামীন বলেন, ﻭَﻛُﻞُّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﻌَﻠُﻮْﻩُ ﻓِﻲْ ﺍﻟﺰُّﺑُﺮِ، ﻭَﻛُﻞُّ ﺻَﻐِﻴْﺮٍ ﻭَﻛَﺒِﻴْﺮٍ ﻣُﺴْﺘَﻄَﺮٌ . ‘তাদের সমস্ত কার্যকলাপ আছে আমলনামায়। আছে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সমস্ত কিছুই লিপিবদ্ধ’ (ক্বামার ৫৪/৫২-৫৩) ।
আব্দুলাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুলাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে,
ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣَﻘَﺎﺩِﻳْﺮَ ﺍﻟْﺨَﻼَﺋِﻖِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَّﺨْﻠُﻖَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﺑِﺨَﻤْﺴِﻴْﻦَ ﺃَﻟْﻒَ ﺳَﻨَﺔٍ .
‘আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বেই আলাহ তা‘আলা স্বীয় মাখলূকাতের তাক্বদীর লিখে রেখেছেন’।[3]
আব্দুলাহ ইবনু ওমর, মুজাহিদ, আবু মালিক, যাহহাক প্রমুখ থেকে বর্ণিত হয়েছে, ক্বদর রজনীতেই লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত ভাগ্যলিপি থেকে পৃথক করে আগামী এক বছরের নির্দেশাবলী যেমন জন্ম, মৃত্যু, রিযিক ও অন্যান্য ঘটনাবলী যা সংগঠিত হবে সেগুলো লেখক ফেরেশতাগণের নিকট প্রদান করা হয়।[4]
উলেখ্য, শবেবরাতে বান্দার রুযী, বিয়ে-শাদী, জন্ম-মৃত্যু ইত্যাদি লিপিবদ্ধ হয় বলে যে হাদীছ প্রচলিত আছে তার কোনটা মুরসাল, কোনটা যঈফ যা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিরোধী।[5]
(৪) ১৪ শা‘বানের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং দিনে ছিয়াম পালন করতে হবে। হাদীছে এসেছে, ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻘﻮﻣﻮﺍ ﻟﻴﻠﻬﺎ ﻭﺻﻮﻣﻮﺍ ﻧﻬﺎﺭﻫﺎ ‘মধ্য শা‘বানের রাত্রিতে ইবাদত কর এবং দিনে ছিয়াম রাখ’।[6]
জবাব : হাদীছটি জাল। এর সনদে ইবনু আবী সাবরাহ নামে একজন রাবী আছেন, মুহাদ্দিছগণের নিকট যিনি হাদীছ জালকারী হিসাবে পরিচিত।[7] তাছাড়া এই হাদীছটি ছহীহ হাদীছ বিরোধী। কেননা একই মর্মে বর্ণিত অন্যান্য প্রসিদ্ধ হাদীছগুলোতে ১৫ শা‘বানের কথা উলেখিত হয়নি।
(৫) রজব মাস আগমন করার পর থেকেই একটি দো‘আ বেশী বেশী করে পাঠ করতে হয়। রজব ও শা‘বান মাস আসলে রাসূলুলাহ (ছাঃ) উক্ত দো‘আ পাঠ করতেন। দো‘আটি হ’ল-
ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟَﻨَﺎ ﻓِﻰْ ﺭَﺟَﺐَ ﻭَﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻭَﺑَﻠِّﻐْﻨَﺎ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ‘হে আলাহ! রজব ও শা‘বান মাসে আমাদের জন্য বরকত নাযিল করুন এবং রামাযান পর্যন্ত পৌঁছে দিন’।
[8]
জবাব : উক্ত বর্ণনার সনদে দুই জন মুনকার রাবী আছে। যেমন যায়েদ বিন আবির রুক্বাদ ও যিয়াদ আন-নুমারী। যায়েদ বিন আবির রুক্বাদ সম্পর্কে ইমাম বুখারী ও ইবনু হাজার আসকালানী (রাঃ) বলেন, তিনি মুনকারুল হাদীছ। আর যিয়াদ আন-নুমারী সম্পর্কে ইবনে হিববান বলেন, তিনিও মুনকারুল হাদীছ।[9]
মোটকথা হ’ল, শবেবরাতের ফযীলত সম্পর্কে আমাদের সমাজে যতগুলো হাদীছ প্রচলিত আছে সবই জাল ও যঈফ। আবু শামা বলেন, ﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻰْ ﺣَﺪِﻳْﺚِ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺣَﺪِﻳْﺚٌ ﻳَﺼِﺢُّ . ‘মধ্য শা‘বানের ফযীলত সম্পর্কে একটি হাদীছও ছহীহ নেই’।[10] আবু বকর ইবনুল আরাবী বলেন, ﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻰْ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺣَﺪِﻳْﺚٌ ﻳُﻌَﻮَّﻝُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ . ‘মধ্য শা‘বান সম্পর্কে কোন নির্ভরযোগ্য হাদীছ নেই।[11] মূল কথা এই রাত সম্পর্কে যদি বিশেষ কিছু থাকত, তাহ’লে রাসূলুলাহ (ছাঃ) এবং ছাহাবাগণই তা পালন করতে আমাদের চেয়ে বেশী মনোযোগী হ’তেন। কিন্তু তাঁদের কেউ তো এই রাতে হালুয়া-রুটি বিতরণ, মসজিদে, দরগায়, কবরস্থানে আগরবাতী জ্বালাতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
(৬) একদা ১৫ শা‘বানের রাতে রাসূলুলাহ (ছাঃ) জান্নাতুল বাক্বী নামক কবরস্থানে একাকী যিয়ারত করেন। যেমন আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘এক রাতে আমি রাসূলুলাহ (ছাঃ)-কে আমার পাশে না পেয়ে বাক্বীউল গারক্বাদ কবরস্থানে গিয়ে দেখি তিনি সেখানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। এক পর্যায়ে আমাকে বললেন, হে আয়েশা!
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻳَﻨْﺰِﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ، ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﺄَﻛْﺜَﺮِﻣِﻦْ ﻋَﺪَﺩِ ﺷَﻌْﺮِ ﻏَﻨَﻢِ ﻛَﻠْﺐٍ
মধ্য শা‘বানের দিবাগত রাতে আলাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং কলব গোত্রের ছাগল সমূহের পশম সংখ্যার চাইতেও বেশী সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করে থাকেন’।[12] উলেখ্য, জান্নাতুল বাকী নামটি সঠিক নয়। সঠিক নাম বাক্বীউল গারক্বাদ।
জবাব : প্রচলিত হাদীছটি যঈফ। এই হাদীছের বর্ণনাকারীদের মাঝে একজন এমন ব্যক্তি আছে যার নাম হাজ্জাজ। তার সনদ মুহাদ্দিছগণের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। ইমাম বুখারী ও তিরমিযী এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন।[13]
ছহীহ হাদীছ হ’ল প্রতি রাতেই আলাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,
ﻳَﻨْﺰِﻝُ ﺍﻟﻠﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻛُﻞَّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ، ﺣِﻴْﻦَ ﻳَﻤْﻀِﻰ ﺛُﻠُﺚُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﺍﻟْﺄَﻭَّﻝِ ﻓَﻴَﻘُﻮْﻝُ : ﺃَﻧَﺎ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚُ، ﺃَﻧَﺎ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚُ ﻣَﻦْ ﺫَﺍ ﺍﻟَّﺬِﻯْ ﻳَﺪْﻋُﻮْﻧِﻰْ ﻓَﺄُﺳْﺘَﺠِﻴْﺐُ ﻟَﻪُ ! ﻣَﻦْ ﺫَﺍ ﺍﻟَّﺬِﻯْ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻨِﻰْ ﻓَﺄُﻋْﻄِﻴْﻪِ ! ﻣَﻦْ ﺫَﺍ ﺍﻟَّﺬِﻯْ ﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻧِﻰْ ﻓَﺄَﻏْﻔِﺮُﻟَﻪُ ! ﻓَﻼَﻳَﺰَﺍﻝُ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَُﻀِﻰْﺀَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ .
‘আলাহ তা‘আলা প্রতি রাতেই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। আর বলতে থাকেন, আমি বাদশাহ! কে আমার কাছে দো‘আ করবে, আমি তার দো‘আ কবুল করব। কে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দিব। কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব। এইভাবে ফজর পর্যন্ত চলতে থাকে’।[14]
উক্ত হাদীছটি যে শুধু একজন ছাহাবী থেকেই বর্ণিত হয়েছে তা নয়; বরং ২৩ জন ছাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। হাফেয আবুল কাসেম ইসপাহানী (রহঃ) বলেন,
ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺛَﻼَﺛَﺔٌ ﻭَّﻋِﺸْﺮُﻭْﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ ﺳَﺒْﻌَﺔُ ﻋَﺸَﺮَ ﺭَﺟُﻼً ﻭَﺳِﺖُّ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ‘আলাহ তা‘আলা প্রতি রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে এইভাবে আহবান করার ব্যপারে ২৩ জন ছাহাবী থেকে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মাঝে ১৭ জন পুরুষ ও ৬ জন মহিলা আছেন’।[15]
(৭) শবেবরাতে মৃত ব্যক্তিদের রূহ দুনিয়াতে নেমে আসে। এর দলীল হ’ল, ﺗَﻨَﺰَّﻝُ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺍﻟﺮُّﻭْﺡُ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺃَﻣْﺮٍ . ‘সে রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের প্রতিপালকের অনুমতি ক্রমে’ (ক্বদর ৯৭/৪) ।
জবাব : আয়াতে রূহ দ্বারা মৃত ব্যক্তিদের বুঝানো হয়নি। যদি তর্কের খাতিরে মেনে নেওয়া হয় তথাপিও সেটা শবেবরাতে নয়, তা হবে রামাযান মাসে শবেক্বদরে। কেননা এই সূরা অবতীর্ণ করা হয়েছে ‘লায়লাতুল ক্বদর’ সম্পর্কে। দ্বিতীয় কারণ হ’ল রূহ শব্দটি একবচন, তার বহুবচন হ’ল আরওয়াহ। যদি মৃত ব্যক্তিদের রূহ সমূহ সে রাতে দুনিয়ায় অবতরণ করত তাহ’লে বলা হ’ত আরওয়াহ। কিন্তু এখানে তা বলা হয়নি, বরং রূহ বলা হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হ’ল এই রূহ দ্বারা কোন মানুষের রূহকে বুঝানো হয়নি। বরং জিবরীল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে।[16] কারণ ক্বদরের রাত্রি সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই রাত্রিতে ফেরেশতাদের এক বিশাল বাহিনী দুনিয়ার বুকে অবতরণ করেন। তাই তাদের সাথে তাদের সর্দার জিবরীল (আঃ)ও আগমন করেন। তাই তাকে রূহ বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, রাসূলুলাহ (ছাঃ) বা ছাহাবাদের থেকে যে আমল ছহীহভাবে প্রমাণিত আছে তা ছোট হ’লেও তা পালন করার মাঝেই রয়েছে রাসূলুলাহ (ছাঃ)-এর সত্যিকারের আনুগত্য। এর বাইরে যে কোন আমলই হোক না তাতে নেই কোন সফলতা, আছে শুধু ভ্রষ্টতা। তাই আসুন, আমরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ জেনে শুনে সঠিক আমলগুলোই করি এবং যাবতীয় বিদ‘আতী কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকি। আলাহ রাববুল আলামীন আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন- আমীন!
– হাফেয হাবীবুলাহ আল-কাসেম
[1]. তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন, পৃঃ ১২৩৫ ।
[2]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/১৯১২১, মুসনাদে আহমাদ হা/১৭০২৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৫৭৫ ।
[3]. মুসলিম হা/৬৬৯০; মিশকাত হা/৮৯ ।
[4]. তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন, পৃঃ ১৪৬৮।
[5]. মাসিক আত-তাহরীক, ১৩/৮০৮ ।
[6]. ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৮; শু‘আবুল ঈমান হা/৩৮২২ ।
[7]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২১৩২; মিশকাত হা/১৩০৮; ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৮ ।
[8]. আহমাদ হা/২৩৪২; শু‘আবুল ঈমান হা/৩৮১৫ ।
[9]. মিশকাত হা/১৩৬৯ ।
[10]. শায়খ বিন বায, আত-তাহযীর মিনাল বিদা‘, পৃঃ ১১; ড. সুলায়মান বিন সালিম আস-সুহায়মী, আল-আইয়াদ, পৃঃ ৩৭৩ ।
[11]. ইবনুল আরাবী, আহকামুল কুরআন ৪/১৬৯০ ।
[12]. মুসনাদে আহমাদ হা/২৫৪৮৭; শু‘আবুল ঈমান হা/৩৮২১; তিরমিযী হা/৭৩৯ ।
[13]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১১৪৪; ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৯; মিশকাত হা/১২৯৯; ইবনে তায়মিয়াহ, তাহযীব ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ১/১০১ পৃঃ ।
[14]. বুখারী হা/১০৯৪; মুসলিম হা/১৭৭০; তিরমিযী হা/৪৪৬; দারেমী হা/১৪৫০; মুসনাদে আহমাদ হা/৭৫৬৭ ।
[15]. সিলসিলা যঈফা হা/১৯৬২ ।
[16]. তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন, পৃঃ ১৪৬৮।

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$