মুসলিম বিশ্বে শাবান মাসের ১৫তম দিনে (১৪ শাবান দিবাগত রাত) লাইলাতুল বরাত পালিত হয়। আজ ১১ মে বৃহস্পতিবার, দিবাগত রাতেই শবে বরাতের রাত। শাবান মাস শেষেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদের আনন্দ বারতা নিয়ে শুরু হয় সিয়াম সাধনার মাস রমজান। ‘ভাগ্য রজনী’ হিসেবে পরিচিত তাৎপর্যপূর্ণ রাতটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াতসহ ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন।
বর্ণিত আছে যে, এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নূরের তাজাল্লি পৃথিবীর নিকট আসমানে প্রকাশ পায়। তখন আল্লাহপাক বলতে থাকেন—আছে কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী? যাকে আমি ক্ষমা করব? আছে কি কেউ রিজিক প্রার্থী? যাকে আমি রিজিক প্রদান করব? আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত? যাকে আমি বিপদমুক্ত করব? আল্লাহ তায়ালার মহান দরবার থেকে প্রদত্ত এ আহ্বান অব্যাহত থাকে ফজর অবধি। বস্তুত আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয় লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। অতএব প্রতিটি কল্যাণকামী মানুষ এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে থাকেন। মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হয়ে রাত অতিবাহিত করেন।
শবে বরাতকে ‘লাইলাতুল বারাআত’ নামে অভিহিত করা হয়। লাইলা আরবি শব্দ, আর ‘শব’ শব্দটি ফার্সি। দুটি শব্দের অর্থই হলো রাত। অপরপক্ষে ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ হলো নাজাত, নিষ্কৃতি বা মুক্তি। এ রাতে বান্দারা মহান আল্লাহতায়ালার নিকট মার্জনা প্রার্থনা করে থাকেন। এ কারণে এ রাতকে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা শবে বরাত বলা হয়। হাদিস শরিফে এটাকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘মধ্য শাবানের রাত্রি’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এর পক্ষকাল পরেই আসবে রহমত-বরকত-নাজাতের মাহে রমজান। ২৮ মে রবিবার প্রথম রোজা। এ কারণে এটাকে বলা হয়, ‘রমজানের মুয়াজ্জিন।’
লাইলাতুল বারাআত মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের পূর্বপ্রস্তুতিস্বরূপ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইসলামী বিশ্বকোষ’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, “ইরান ও ভারতীয় উপমহাদেশে এ মাসের একটি রজনীকে ‘শব-ই-বরাত’ বলা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো কোনো দেশের কোনো কোনো এলাকায় শবে বরাত ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। আরববাসীরা এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ বলেন।”
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, সিরিয়ার কিছু এলাকা ছাড়া কোথাও ঘটা করে শবে বরাত পালন করা হয় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এই শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি এ মাসকে পালন করতেন। শবে বরাতের বরকত, ফজিলত ও মর্যাদা নিয়ে বেশকিছু হাদিসে বর্ণনা আছে। হাদিস থেকে প্রমাণ হয় যে, শবে বরাত ফজিলতময় এবং এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হলো শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা।
যথাযথ মর্যাদায় ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে আজ পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, জিকির-আজকারের আয়োজন হয়েছে।
এই উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে পবিত্র শবেবরাতের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবার প্রতি মানব কল্যাণে ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার আহবান জানান।
Post a Comment