Register

Win 10.00$

রমজানের তাৎপর্য ও কোরআনের মাহাত্ম্য

Be the first to comment!

‘রমাদান’! জ্বলে–পুড়ে খাক হওয়া; ক্ষুধায় উদর জ্বালা; পাপ পুড়ে ভস্ম করে সেই ছাই উড়িয়ে অমূল্য রতনের সন্ধান। এতেই নাজিল হয়েছে কোরআন; মানবমণ্ডলীর হিদায়াত ও কল্যাণ, ন্যায় বিধান। অমান্য করলে তার ছারখার জীবন। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)। আল–কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে কোরআনেরই ৭২টি নাম। (১) আল কিতাব (মহাগ্রন্থ) (২) কিতাবুল্লাহ (আল্লাহর কিতাব), (৩) আল–কোরআন (অধিক পঠিত), (৪) আল–ফুরকান (মানদণ্ড), (৫) আন নূর (জ্যোতি), (৬) আল–হুদা (পথনির্দেশ), (৭) আজ জিকর (স্মারক) (৮) আল–কওল (কথা), (৯) কালামুল্লাহ (আল্লাহর বাণী), (১০) মোবারক (মহিমান্বিত), (১১) রহমত (অনুকম্পা), (১২) হিকমাতুন বালিগাহ (পরিপূর্ণ জ্ঞান), (১৩) আল–হাকিম (প্রজ্ঞাময়), (১৪) হাবলুল্লাহ (আল্লাহর রজ্জু), (১৫) রুহ (প্রেরণা), (১৬) আল–ওয়াহ্​িয় (প্রত্যাদেশ), (১৭) আল–ইলম (পরম জ্ঞান), (১৮) আল–হাক্ক (মহাসত্য), (১৯) আল–বা​িশর (সুসংবাদদাতা), (২০) আন না​িজর (সতর্ককারী), (২১) আল–মাজিদ (মর্যাদাবান), (২২) আদল (সুষম), (২৩) আমরুল্লাহ (আল্লাহর নির্দেশ), (২৪) মুহাইমিন (সংরক্ষক), (২৫) বোরহান (প্রমাণ), (২৬) মুবিন (সুস্পষ্ট), (২৭) শিফা (নিরাময়), (২৮) মাওইজা (উপদেশ), (২৯) আলী (সুউচ্চ), (৩০) রিসালাতুল্লাহ (আল্লাহর বার্তা), (৩১) হুজ্জাতুল্লাহ (আল্লাহর প্রমাণ), (৩২) আল–মুসাদ্দিক (সত্যায়নকারী), (৩৩) আল–আজিজ (শক্তিময়), (৩৪) সিরাতুম মুস্তাকিম (সঠিক পথ), (৩৫) কাইয়ুম (সুদৃঢ়), (৩৬) আল–ফাসল (মীমাংসাকারী), (৩৭) আল–হাদিস (বাণী), (৩৮) আহসানুল হাদিস (সর্বোত্তম উক্তি), (৩৯) নাবাউল আজিম (মহাসংবাদ), (৪০) মুতাশাবিহ (সাদৃশ্যময়), (৪১) মাসানি (পুনরাবৃত্তি), (৪২) তানজিল (অবতারিত/ অবতীর্ণ), (৪৩) আরবি (আরব্য/ আরবীয়), (৪৪) বাসায়ির (প্রজ্ঞা), (৪৫) বায়ান (বিবরণ), (৪৬) আয়াতুল্লাহ (আল্লাহর নিদর্শন), (৪৭) আজব (চমৎকার), (৪৮) তাজকিরাহ (স্মারক), (৪৯) উরওয়াতুল উসকা (দৃঢ় অবলম্বন), (৫০) আস সিদক (অতীব সত্য), (৫১) মুনাদি (আহ্বানকারী), (৫২) আল–বুশরা (আনন্দবার্তা), (৫৩) বাইয়িনাত (প্রমাণপঞ্জি), (৫৪) বালাগ (বার্তা), (৫৫) আল কছছ (বৃত্তান্ত/ ইতিবৃত্ত), (৫৬) আল কা​িরম (মর্যাদাবান), (৫৭) আল মিজান (ন্যায়দন্ড), (৫৮) নিমাতুল্লাহ (আল্লাহর অনুগ্রহ), (৫৯) হুদাল্লাহ (আল্লাহর নির্দেশনা), (৬০) কিতাবুম মুবিন (সুস্পষ্ট কিতাব), (৬১) কিতাবুন হাকিম (বিজ্ঞানময় কিতাব), (৬২) কুরআনুম মুবিন (উজ্জ্বল/জ্যোতির্ময় কোরআন), (৬৩) কিতাবুম মাছতুর (ছত্রলিপি গ্রন্থ), (৬৪) কিতাবুন আজিজ (প্রিয় পুস্তক), (৬৫)​ জিকরুল হাকিম (কৌশলপূর্ণ উপদেশ), (৬৬) মাতলু (অধীত, অধ্যয়নযোগ্য), (৬৭) হুদান লিন নাছ (মানবজাতির দিশারি), (৬৮) জিকরুল্লাহ (আল্লাহর স্মরণ), (৬৯) জিকরুল লিল আলা​িমন (জগৎসমূহের জন্য স্মারক), (৭০) নূরুল্লাহ (আল্লাহর আলো), (৭১) নুরুম মুবিন (সুস্পষ্ট আলো) ও (৭২) কালিমাতুল্লাহ (আল্লাহর বাণী)।
সময়ের নাম হায়াত, সময়েরই নাম ইতিহাস। সময়েরই নাম যুগ। এমনই একখণ্ড সময়ের নাম বছর এবং বছরেরই একাংশের নাম- মাস এবং এমনই একটি মাসের নাম রমাদান। রমাদান তো সেই মাস যাতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে; রমাদান তো সেই মাস, যার শেষাংশে রয়েছে কদরের রাত্রি এবং কদরের রাত্রির মধ্যে রয়েছে এক সুপ্ত সফলতা, যার মধ্যে লুকায়িত হাজার মাস—তিরাশি বছর চার মাসেরও অধিক ইবাদতের চেয়েও উত্তম সফলতা। এখন তো সেই সময়, সেই হাজার মাস কোলে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা ঘুমন্ত মর্যাদাময় রাত্রির প্রতীক্ষা পর্ব।
যে রাত্রি ঘুমানোর জন্য বেছে নেয় আলসে ও অজ্ঞ হতভাগা মানুষেরা। অথচ জেগে রয় সকল ফেরেশতা এবং ফেরেশতাদের আমির জিবরাইল (আ.)–এর নেতৃত্বে শান্তির বার্তা নিয়ে ঘোরে শান্তিময় ভবিষ্যৎ ও শান্তি আলয় দারুস সালামের প্রবেশাধিকার প্রাপ্তির প্রত্যাশা বিতরণ করে চলে সারা রাত এবং ফজর পর্যন্ত। এমনই দিনে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদলে নিতেন শোয়ার ধরন, বদলে নিতেন প্রার্থনার শব্দমালা ক্ষমার আভাসে বলে উঠতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম; তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি।’ হে আল্লাহ! আপনিই সেই সত্তা, যিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন অতঃপর ক্ষমা করেন আমায়, হে মহান ক্ষমাশীল। (তিরমিজি শরিফ: ৩৫-১৩)।
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জেগে থাকতেন রাত্রির প্রতিটি প্রহরে, প্রতি বিজোড় রাত্রির গভীরতা ও পবিত্রতা মাপতেন লাইলাতুল কদরের পরম নিক্তিতে। কেনইবা তিনি তা করবেন না! কুদরতি কৌতূহলে তঁাকেই তো প্রথম কোরআনিক প্রশ্নে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘আপনি কি জানেন, কদরের রাত্রি কী? কী তার গভীরতা? কী তার প্রেক্ষাপট? কী তার পাটাতন?’
কদরও হাজার মাসের হায়াতের প্রবৃদ্ধি
প্রশ্ন জানার জন্য করা হয়, জানানোর জন্যও করা হয়ে থাকে। কৌতূহলোদ্দীপক করে তুলতেও প্রশ্ন করা হয়; উত্তরের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে যে প্রশ্ন করা হয়, সেই আলোকেই কদরের কুদরতি প্রশ্ন, আপনি জানেন কি? কদরের রাত্রি কী? হয়তো আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তঁার বিনীত উত্তরে বলেছিলেন, আল্লাহই ভালো জানেন। অতঃপর আল্লাহ বলেছিলেন, এই সেই রাত্রি যে রাত্রির গর্ভে লুকিয়ে থাকে তিরাশি বছর চার মাসের অধিক সময়। রমজানে কেউ যদি এ রাতে জেগে রয়, কেউ যদি কেঁদে ফেলে, কেউ যদি ক্ষমা চায়, কেউ যদি তাকওয়াতাড়িত হয়ে সিজদায় পড়ে রয়; সে এক রাতের ইবাদতে পূর্ণ তিরাশি বছর চার মাসেরও বেশি হায়াতে সমৃদ্ধ হয়ে যায়। জীবনের পবিত্র প্রবৃদ্ধি এর থেকে বেশি আর কিইবা হতে পারে?
কদরের পার্থক্য ও পরিচিতি
কদরের রাত্রি যদিও তার আঁধার অবয়ব, প্রহরের প্রেক্ষাপট, সন্ধ্যা ও সুবহে সাদিক একই রকম তবু এর ভাবগাম্ভীর্য আলাদা; আলাদা এর অভ্যন্তর ভাগের দীপ্তি ও মহত্ত্ব। তেমনি ব্যতিক্রম হতে পারে এর আবহাওয়া এবং সুবহে সাদিক তো মালাইকাকুলের ফিরতি প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে। উলম্বিত উচ্চতা ও অভিনব মর্যাদা লাভ করতে পারে। কোরআনিক মর্যাদার কারণে যেমন কদর মহিমাপূর্ণ তেমনই কদরের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কোরআনও মহিমাপূর্ণ হয়ে উঠেছে; তেমনি কুদরতি রহস্যঘেরা এ রাতে উম্মাতে মুহাম্মদীর হায়াতে তৈয়বায় প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছে।
এ রাত প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত ও বটে
এর প্রকাশিত প্রেক্ষাপট যেমন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে আকর্ষণ ও আবেগ সৃষ্টি করে, তেমনি এ রাতের টানেই রাত জেগে রয়, রাতের পাহারায় কাটে দশ দিন দশ রাত্রি। আবেদ ভুলে যায় তার সাময়িক সংসার, ঈদের শপিং এবং বাস্তবিক ব্যবসায়িক ব্যস্ততা। এ কারণেই হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতের আবেগে ঘর ছেড়ে মসজিদমুখী হতেন। এ রাতের পাহারায় জেগে থাকতেন সম্ভাব্য রাতগুলো। ইতিকাফে খুব যতœ করে মগ্ন থাকতেন জিকির ও সালাতে। রাতের আঁধারে এসে এ রাত যেন আঁধারেই হারিয়ে না যায়। এ রাত প্রাপ্তির আভাস পেয়েই হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন বিজোড় রাত্রিগুলোতে পূর্ণ জাগরণের।
বরাদ্দও বিধানের প্রেক্ষাপট কদরের রাত্রি
‘ফিহা ইউফরাকু কুল্লু আমরিন হাকিম, আমরাম মিন ইনদিনা ইন্না কুন্না মুরছিলিন।’ (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ৪-৫)। এই সেই রাত যার অভ্যন্তরে রয়েছে বিধান বিতরণের প্রেক্ষাপট। আমারই কাছ থেকে বিধানাবলি আমিই প্রেরণ করে থাকি। তাই এ রাত কেবল প্রতীকী মর্যাদায় মহিমান্বিত নয় বরং আল্লাহর দাপ্তরিক কর্মসূচি ও বরাদ্দের কারণেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ কারণেই প্রান্তিক পবিত্রতা ও প্রক্রিয়ায় ফেরেশতাকুলের ব্যস্ততা যে ব্যাপ্তি ধারণ করে ও জ্যোতি ছড়ায়, তা সর্বাবস্থায়ই তুলনাহীন। এ রাত ধারণ ও বরণের একমাত্র পথ রাতের পাহারায় রাত্রি জাগরণ, সিজদা বহরের মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া; আর এর শিক্ষা ধারণ করাটা সারা জীবনের জন্যই পরম পাথেয়।
হাফেজ মাওলানা সাইয়্যিদ জুলফিকার জহুর (আর্কিটেক্ট) খতিব: মসজিদুত তাকওয়া, ধানমন্ডি, ঢাকা।

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$