মাহে রমজানে রহমতের দশ দিনের আর মাত্র একদিন বাকী। এরপরেই শেষ হয়ে যাবে রহমতের নির্ধারিত দশদিন।রহমতের এই মাসে বান্দার প্রতি মহান প্রতিপালকের রহমত, দয়ার শেষ নেই। রোজার শুরু থেকেই একেবারে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি মুহূর্তে রমজান মাসের উছিলায় বান্দার প্রতি আল্লাহর লাখো কোটি রহমত বর্ষিত হচ্ছে। রোজাদারের জন্য এই এক মাসে ‘জাহান্নামের’ সব দরজা বন্ধ করে দিয়ে ‘জান্নাত’ (বেহেশত) এর সব দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে।
সাহাবি হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, -যখন রমজান শুরু হয় তখন জান্নাতের দরজা খুলে যায়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।
(বুখারি (১৮৯৯), মুসলিম, নাসা’ই, আহমাদ, ইবন হাব্বান, আদ-দারিমি)।
যারা সিয়াম সাধনা করে সঠিকভাবে রোজা রাখলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাদের জন্য রহমত হিসেবে শুধু জান্নাতের দরজাই খোলা রাখেননি, তাদের জন্য জান্নাতের আটটি দরজার একটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। প্রকৃত রোজাদাররা কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবিব (সা.) এর দিদার লাভ করবেন।
সাহাবি হযরত সাহ্ল ইবন সাদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন- জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে, এদের একটির নাম ‘আর রাইয়ান’, যার মধ্য দিয়ে সায়েম (রোজাদার) ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি (৪৭৯), মুসলিম)।
উপরোক্ত হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) এর ফরমান থেকে বোঝা যায় যে ‘রমজান মাস’ পুরোটাই হল রাহমাহ (রহমত) এবং বারাকাহ (বরকত) দ্বারা পরিপূর্ণ। তাই রোজার এই মাসের প্রত্যেকটা মুহূর্ত রোজাদারের জন্য মূল্যবান।
রোজার মাসে উম্মতে মোহাম্মদীকে বিশেষ পাঁচটি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যা কখনো কোনো নবী ও রাসূলকে দেওয়া হয়নি। এই পাঁচটি সুবিধার মধ্যে একটি হলো আল্লাহ তাআলা তাঁর বেহেশতকে বলেন, ‘তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও! আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নেবে।’
এ প্রসঙ্গে সাহাবি হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে। তিনি (জাবির ইবনে আবদুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, -রমজান মাসে আমার উম্মতকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি।তার মধ্যে রমজানের প্রথম রাতে আল্লাহ তাদের দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন, আর আল্লাহ যার দিকে দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো শাস্তি প্রদান করেন না।সন্ধ্যার সময় তাদের মুখ থেকে যে গন্ধ বের হয়, তা আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।
প্রত্যেক দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য দোয়া করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর বেহেশতকে বলেন, ‘তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও! আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে অব্যাহতি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নেবে।’
রমজানের শেষ রাতে আল্লাহ তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন।’ এক ব্যক্তি বলল, ‘এটা কি লাইলাতুল কদর?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘না, তুমি দেখোনি শ্রমিকেরা যখন কাজ শেষ করে, তখনই পারিশ্রমিক পায়?’ (বায়হাকী/আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব)
বান্দা সবসময় তার প্রতিপালকের রহমতের মুখাপেক্ষী। আল্লাহর রহমত ছাড়া এক মুহূর্ত আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
যারা দুনিয়াতে সফল হয়েছেন সবাই আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতপ্রাপ্ত। রোজা আমাদের আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ করে দিয়েছে। বান্দাকে জান্নাতের ঠিকানা করে দিয়েছে।
তাই আমরা বেশি বেশি করে তওবা, ইস্তেগফার ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ চাই, যাতে তাঁর সন্তুষ্ট অর্জন করতে পারি এবং তার নৈকট্য লাভ করতে পারি।
Post a Comment