Register

Win 10.00$

ভয়ঙ্কর জাতি ইয়াজুজ-মাজুজ কারা, আবার কখন ফিরবে?

Be the first to comment!

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরানে বর্ণিত কিয়ামতের যতগুলো নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ইয়াজুজ-মাজুজ নামের একটি জাতির উত্থান। এই ইয়াজুজ-মাজুজ কারা তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
কেউ বলেছেন, তারা পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবী হযরত আদম (আ.) এর বংশধর। আবার কেউ বলেছেন তারা, হযরত নুহ (আ.) এর তৃতীয় পুত্র ইয়াকেলের বংশধর। ইয়াজুজ-মাজুজ জাতিটিকে ওল্ড এবং নিউ টেস্টামেন্টে ‘গগ ও ম্যাগগ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাইবেলে এদের নুহ (আ.) এর দুই পুত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, এরা মিলে পরে একটি উপজাতি সৃষ্টি করেছিল।

বিতর্ক থাকলেও এ কথা সত্য যে, ইয়াজুজ-মাজুজের জাতি পৃথিবীর ইতিহাসে অত্যন্ত ভয়াবহ জাতি হিসেবেই পরিগণিত। তারা তাদের পাশ্ববর্তী জাতিগুলোর ওপর ভয়াবহ অত্যাচার চালিয়েছিল। এমনকি পুরো সভ্যতা ধ্বংস করে দিতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করেনি। কোরান, ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং নিউ টেস্টামেন্টের বর্ণনা অনুসারে, ইয়াজুজ-মাজুজের বাসস্থান ছিল এশিয়ার উত্তর-পূর্বের অংশে। তারা এশিয়ার দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ তৈরি করেছিল। কোনো ইতিহাসবিদ মনে করেন, এই সম্প্রদায়টি বসবাস করতো রাশিয়ার মস্কো অঞ্চলে। আবার অনেকের ধারণা, চীনের তিব্বত এবং আর্কটিক সাগরের পাশ্ববর্তী তুর্কিস্তানে বাস ছিল ইয়াজুজ-মাজুজের।

            জুলকার নাইনের আবির্ভাব

কোরানে উল্লিখিত জুলকার নাইনের পরিচয় সম্পর্কে গবেষকদের মতপার্থক্য রয়েছে, কেউ বলেন তিনি হলেন গ্রিক মহাবীর আলেকজান্ডার। অনেকে এই মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, জুলকার নাইন হচ্ছেন প্রকৃতপক্ষে বাদশাহ হযরত সোলাইমান (আ.)। আধুনিক গবেষকদের মতে কোরানে উল্লিখিত জুলকার নাইনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ৩টি চরিত্র নির্দেশ করা হতে পারে: ১. মহামতি আলেকজান্ডার ২. সাইরাস দি গ্রেট (পারস্যের রাজপুত্র) ৩. হিমায়ার সাম্রাজ্যের একজন শাসক।

কোরানের বর্ণনা মতে, জুলকার নাইন ছিলেন একজন শাসক। আল্লাহ তাকে প্রচুর সম্পদ দিয়েছিলেন। পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিমের সব দেশ তিনি জয় করেছিলেন। ইয়াজুজ-মাজুজ যে পাহাড়ে বাস করতো সেখানে গিয়ে তিনি তার মিশন শেষ করেন। সেখানে গিয়ে তিনি লোকজনের এক ভিন্ন ধরনের ভাষা শুনতে পান। দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলে জুলকার নাইন জানতে পারেন, তারা ইয়াজুজ মাজুজের নির্যাতনের শিকার। লোকগুলো ইয়াজুজ-মাজুজকে অবরুদ্ধ করে তাদের এবং ওই ভয়ঙ্কর জাতির মধ্যে একটি দেয়াল তৈরি করে দিতে বলল। এরপর তিনি তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর তৈরি করে দেন।

সূরা কাহাফ’র ৮৩-৮৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা আপনাকে জুলকার নাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, আমি (আল্লাহ) তোমাদের কাছে তার কিছু অবস্থা বর্ণনা করব। আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম। অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন। অবশেষে তিনি যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌছলেন তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে জুলকার নাইন, আপনি তাদের শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।’

                জুলকার নাইনের প্রাচীর

কোরানে সূরা কাহাফের ৯৩ থেকে ৯৮ নম্বর আয়াতে জুলকার নাইনের এই প্রাচীর নির্মাণের কথা উল্লেখ আছে। ধারণা করা হয় এই জাতি ধাতুর ব্যবহার জানতো। তারা হাপর বা ফুঁক নল দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করে ধাতুকে উত্তপ্ত করে গলাতে পারতো এবং লোহার পিণ্ড ও গলিত সীসাও তৈরি করতে পারতো। প্রাচীরটি তৈরির পর জুলকার নাইন জনগণকে বলেছিলেন, এই দেয়ালটি চিরস্থায়ী নয়। আল্লাহ যতদিন চাইবেন এটি থাকবে। তিনি এক সময় এটি ভেঙে ফেলবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, দেয়ালটি আসলে কোথায়?
এ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে নানা মতবিরোধ রয়েছে। এই প্রাচীরটির সঠিক অবস্থান নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। একদল গবেষক মনে করেন, কোরানের বর্ণনা অনুযায়ী এই দেয়ালটি অরুণাচলে। চীনের মহাপ্রাচীরের কথা বলেন অনেকে। তবে চীনের মহাপ্রাচীর ইট দিয়ে তৈরি, শীশা দিয়ে নয়। অনেকে মনে করেন, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ-মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলেছিলেন জুলকারনাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে। এই বর্ণনার সাথে মিলে যায় এমন একটি দেয়াল রয়েছে কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলে। ইতিহাসবিদরা স্বীকৃতি দেন যে এই দেয়াল তৈরি করেছিলেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। এটা তৈরিতে লোহা ও তামা ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে একটি তোরণও রয়েছে, যা ‘কাস্পিয়ান গেট’ বা আলেকজান্ডারের গেট নামে পরিচিত।

দারিয়াল এবং দারবেন্ত নামে দুটি শহরে এর ব্যাপ্তি। দারিয়াল রাশিয়া এবং জর্জিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। এটিকে বলা হয় কাজবেক পাহাড়ের পূর্ব প্রান্ত। দারবেন্ত রাশিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত একটি শহর। কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে নির্মিত এই দেয়ালটি তোলা হয়েছে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে। এ পাহাড় দুটিকে বলা হয়, ‘পৃথিবীর উঠান’। আলেকজান্ডার নির্মিত এ দেয়ালের উচ্চতা ২০ মিটার এবং এটি ৩ মিটার (১০ ফুট) পুরু।

এখন পর্যন্ত এই দেয়ালটিকেই জুলকার নাইনের প্রাচীর হিসেবে সম্ভাব্য ধরা হয়। এই প্রাচীরটি এতোটা শক্ত যে ইয়াজুজ-মাজুজের মতো কোনো জাতির পক্ষে এটি ভেঙে ফেলা সম্ভব ছিলনা। তবে প্রতিশ্রুতি অনুসারে আল্লাহ একদিন এই দেয়াল ভেঙে দেবেন। কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ঘটবে এই ঘটনা। তখন ইয়াজুজ-মাজুজ আবার ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবীতে।

              ইয়াজুজ-মাজুজের ধ্বংস

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর হাদিস মতে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘প্রতিদিন তারা প্রাচীর ছিদ্র করার কাজে লিপ্ত হয়। ছিদ্র করতে করতে যখন পুরোটা উন্মোচনের উপক্রম হয় তখনই তাদের একজন বলে, আজ তো অনেক করলাম। চল! বাকিটা আগামীকাল করব। পরদিন আল্লাহ সেই প্রাচীরকে আগের চেয়েও শক্ত করে দেন। অতঃপর যখন সেই সময় আসবে এবং আল্লাহ তাদের বের হওয়ার অনুমতি দেবেন তখন তাদের একজন বলে উঠবে, আজ চল! আল্লাহ চাইলে আগামীকাল পূর্ণ ছিদ্র করে ফেলব। পরদিন তারা প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসবে। এসে তারা মানুষের ঘরবাড়ি নষ্ট করবে, সমুদ্রের পানি পান করে নিঃশেষ করে ফেলবে। ভয়ে, আতঙ্কে মানুষ দূরে-দূরান্তে পালাবে। অতঃপর আকাশের দিকে তারা তীর ছুড়বে। তীর রক্তাক্ত হয়ে ফিরে আসবে…।’

এই সময়টা থাকবে হযরত ইসা (আ.) এর সময়। এই সময়েই আল্লাহ তাকে আবার পৃথিবীতে পাঠাবেন। ইসাকে (আ.) আল্লাহ আদেশ করবেন লোকজনকে রক্ষা করার জন্য। এ সময় ঈসা (আ.) তাদের জন্য বদদোয়া করবেন, যেন কোনো মহামারীতে ইয়াজুজ-মাজুজ ধ্বংস হয়। ফলে তাদের কাঁধে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। তারা সবাই মারা যাবে ও পঁচে দুর্গন্ধ হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের লাশ থাকবে। আল্লাহ এক ধরনের পাখি পাঠাবেন, যার ঘাড় হবে উটের ঘাড়ের সমান। লাশগুলো তারা ‘নাহবাল’ নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। এরপর একটি বৃষ্টি এসে পুরো পৃথিবীকে ধুয়েমুছে দেবে এবং পৃথিবী আবার উর্বর ভূমিতে পরিণত হবে।

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$