আলেম সমাজ একমত যে বুখারী ও মুসলিম বিশুদ্ধ কিতাব। এ দু’টি কিতাবকে একত্রে ‘ছহীহায়ন’ তথা বিশুদ্ধ দু’খানা কিতাব বলা হয়। বুখারী ও মুসলিমের বিশুদ্ধতার বিষয়ে মনীষীদের সুচিন্তিত অভিমত নিম্নে প্রদত্ত হ’ল-
ছহীহ বুখারী :
১. জমহূর মুহাদ্দিছীনে কেরামের মতে, ﺃﺻﺢ ﺍﻟْﻜﺘﺐ ﺑﻌﺪ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ - ‘আল্লাহর কিতাব কুরআনুল কারীমের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ কিতাব হ’ল ছহীহুল বুখারী’।[1]
২. হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী ইমাম নববী সহ অসংখ্য মুসলিম মনীষী বলেছেন, ﺍﺗﻔﻖ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﺭﺣﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺃﺻﺢ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺎﻥ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ ﻭﺗﻠﻘﺘﻬﻤﺎ ﺍﻷﻣﺔ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﻭﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﺃﺻﺤﻬﻤﺎ ﻭﺃﻛﺜﺮﻫﻤﺎ ﻓﻮﺍﺋﺪ ﻭﻣﻌﺎﺭﻑ ﻇﺎﻫﺮﺓ ﻭﻏﺎﻣﻀﺔ - ‘জমহূর ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, কুরআনুল কারীমের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ হ’ল ‘ছহীহায়ন’ তথা ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম। আর ছহীহ বুখারী হ’ল উভয় কিতাবের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধতম, অধিক উপকারী, সুপরিচিত ও সূক্ষ্ম’।[2]
৩. হাফেয মূসা ইবনে হারূণ বলেন, ﻟﻮ ﺃﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻻﺳﻼﻡ ﺍﺟﺘﻤﻌﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻳﻨﺼﺒﻮﺍ ﺁﺧﺮ ﻣﺜﻞ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺇﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﻣﺎ ﻗﺪﺭﻭﺍ ﻋﻠﻴﻪ - ‘যদি সকল মুসলমান একত্রিত হয়ে মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারী (রহঃ) কর্তৃক সংকলিত ছহীহ আল-বুখারীর মতো উঁচু মানের ও বিশুদ্ধ কিতাব সংকলন করতে চেষ্টা করে, তবুও তারা তা করতে সক্ষম হবে না’।[3]
৪. হাফেয আবু ইয়ালা আল-খলীলী স্বীয় ‘ইরশাদ’ গ্রন্থে লিখেছেন, ﺭﺣﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻣُﺤَﻤَّﺪ ﺑﻦ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺃﻟﻒ ﺍﻟْﺄُﺻُﻮﻝ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺃﺻُﻮﻝ ﺍﻟْﺄَﺣْﻜَﺎﻡ ﻣﻦ ﺍﻟْﺄَﺣَﺎﺩِﻳﺚ ﻭَﺑَﻴﻦ ﻟﻠﻨَّﺎﺱ ﻭﻛﻞ ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﺑﻌﺪﻩ ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﺧﺬﻩ ﻣﻦ ﻛِﺘَﺎﺑﻪ ﻛﻤﺴﻠﻢ ﺑﻦ ﺍﻟْﺤﺠَّﺎﺝ ‘আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল (রহঃ)-এর প্রতি রহম করুন। কেননা তিনি ইলমে হাদীছের হুকুম-আহকাম তথা মূলনীতি প্রণয়ন করেছেন ও তাঁর পরে যারা একাজ করবে তাদের প্রত্যেকের জন্য সুস্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। বস্ত্তত তাঁর সংকলিত ছহীহ বুখারী থেকে অন্যান্য মুহাদ্দিছ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। যেমন ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহঃ)।[4]
৫. ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেন, ﻣﺎ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻛﻠﻬﺎ ﺃﺟﻮﺩ ﻣﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ - অর্থাৎ ‘হাদীছের এসব কিতাবের মধ্যে ছহীহ আল-বুখারী অপেক্ষা অধিক উত্তম আর কোন কিতাব নেই’।[5]
৬. আবূ জা‘ফর মাহমূদ ইবনে আমর আল-আকীলী বলেন, ﻟﻤﺎ ﺃﻟﻒ ﺍﻟﺒُﺨَﺎﺭِﻱُّ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴْﺢ ﻋﺮﺿﻪ ﻋﻠﻰ ﺃَﺣْﻤﺪ ﺑﻦ ﺣَﻨْﺒَﻞ ﻭَﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﻣﻌِﻴﻦ ﻭﻋَﻠﻰ ﺑﻦ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨِﻲّ ﻭَﻏَﻴﺮﻫﻢ ﻓﺎﺳﺘﺤﺴﻨﻮﻩ ﻭﺷﻬﺪﻭﺍ ﻟَﻪُ ﺑِﺎﻟﺼِّﺤَّﺔِ ﺍﻻ ﻓِﻲ ﺃَﺭْﺑَﻌَﺔ ﺃَﺣَﺎﺩِﻳﺚ - অর্থাৎ ইমাম বুখারী (রহঃ) ছহীহ আল-বুখারীর পান্ডুলিপি আলী ইবনুল মাদীনী, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, আহমাদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ সমকালীন জগদ্বিখ্যাত মনীষীগণের নিকট পেশ করেন। তাঁরা একে উত্তম বলে অভিহিত করেন এবং মাত্র চারটি হাদীছ ব্যতীত সকল হাদীছের বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি প্রদান করেন। অবশ্য ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর শর্তে ঐ চারটি হাদীছও ছহীহ’।[6]
৭. আবু যায়েদ আল-মারওয়াযী বলেন, ﻛﻨﺖ ﻧَﺎﺋِﻤﺎ ﺑَﻴﻦ ﺍﻟﺮُّﻛْﻦ ﻭَﺍﻟْﻤﻘَﺎﻡ ﻓَﺮَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﻨَﺎﻡِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟﻲ ﻳَﺎ ﺃَﺑَﺎ ﺯﻳﺪ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﺘﻰ ﺗﺪﺭﺱ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲ ﻭَﻻَ ﺗﺪﺭﺱ ﻛﺘﺎﺑﻲ، ﻓَﻘﻠﺖ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭَﻣَﺎ ﻛﺘﺎﺑﻚ ﻗَﺎﻝَ ﺟَﺎﻣﻊ ﻣُﺤَﻤَّﺪ ﺑﻦ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞ - অর্থাৎ আমি রুকনে ইয়ামানী ও মাকামে ইবরাহীমের মাঝামাঝি স্থানে ঘুমন্ত ছিলাম। এ সময় আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বলছেন, হে আবু যায়েদ! শাফেঈর কিতাবের দারস আর কতদিন দিবে, আমার কিতাবের দারস দিবে না? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনার কিতাব কোনটি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারীর জামি‘ তথা ছহীহ বুখারী।[7]
ছহীহ মুসলিম :
এ বিশ্বে ইলমে হাদীছের যতগুলো কিতাব সংকলিত হয়েছে, তন্মধ্যে দু’টি কিতাবকে ওলামায়ে কেরাম ‘ছহীহায়ন’ তথা ‘বিশুদ্ধতম দু’টি কিতাব’ বলে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। এ ছহীহায়নের একটি হ’ল ছহীহ মুসলিম। অধিকাংশ মুহাদ্দিছীনে কেরাম ছহীহায়নের ছহীহ বুখারীকে সর্বাধিক বিশুদ্ধতম বলে অভিমত পোষণ করলেও আবু আলী নিসাপুরীসহ মুসলিম বিশ্বের ও পাশ্চাত্যের কিছু সংখ্যক মনীষী অভিমত পোষণ করেছেন যে, ﺃَﻥ ﻛﺘﺎﺏ ﻣُﺴﻠﻢ ﺃﻓﻀﻞ ﻣﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺒُﺨَﺎﺭِﻱّ ছহীহ মুসলিম ছহীহ বুখারীর চেয়ে উত্তম।[8]
১. হাফেয ইবনে মান্দাহ (রহঃ) বলেন, ﺳﻤﻌﺖ ﺃﺑﺎ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﻴﺴﺎﺑﻮﺭﻱ، ﻳﻘﻮﻝ : ﻣﺎ ﺗﺤﺖ ﺃﺩﻳﻢ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺃﺻﺢ ﻣﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﺴﻠﻢ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺠﺎﺝ ﻓﻲ ﻋﻠﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ অর্থাৎ আমি আবু আলী নিসাপুরীকে বলতে শুনেছি, এ আকাশের নীচে ছহীহ মুসলিমের চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ ইলমে হাদীছের কোন কিতাব নেই’।[9]
২. হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ﺣﺼﻞ ﻟﻤﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ ﺣﻆ ﻋﻈﻴﻢ ﻣﻔﺮﻁ ﻟﻢ ﻳﺤﺼﻞ ﻷﺣﺪ ﻣﺜﻠﻪ অর্থাৎ ‘ইমাম মুসলিম (রহঃ) তাঁর ছহীহ মুসলিমের কারণে এত দ্রুততার সাথে এমন মহান সৌভাগ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন যে, এত দ্রুততার সাথে ঐ স্তরে পেঁŠছা কারোর পক্ষে সম্ভব নয়’।[10]
৩. হাফেয মুসলিম ইবনে কুরতুবী (রহঃ) ছহীহ মুসলিম সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ﻟﻢ ﻳﻀﻊ ﺃﺣﺪ ﻓﻰ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﻣﺜﻠﻪ অর্থাৎ ‘ইসলামে এরূপ গ্রন্থ কেউ রচনা করতে সক্ষম হয়নি’।[11]
৪. আবু সাঈদ ইবনে ইয়া‘কূব বলেন, ﺭﺃﻳﺖ ﻓﻴﻤﺎ ﻳﺮﻯ ﺍﻟﻨﺎﺋﻢ ﻛﺄﻥ ﺃﺑﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺰﻏﻮﺭﻯ ﻳﻤﻀﻰ ﻓﻰ ﺷﺎﺭﻉ ﺍﻟﺤﻴﺮﺓ ﻭﻓﻰ ﻳﺪﻩ ﺟﺰﺀ ﻣﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﻣﺴﻠﻢ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺤﺠﺎﺝ، ﻓﻘﻠﺖ ﻟﻪ ﻣﺎ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻚ؟ ﻗﺎﻝ ﻧﺠﻮﺕ ﺑﻬﺬﺍ ﻭﺃﺷﺎﺭ ﺇﻟﻰ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﺠﺰﺀ . অর্থাৎ ‘প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ আবু আলী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ আয-যাগূরীকে যেন স্বপ্নে দেখলাম, তিনি নিসাপুরের ‘হিরাত’ নামক রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন এবং তাঁর হাতে রয়েছে ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজের সংকলিত হাদীছগ্রন্থ ছহীহ মুসলিমের একটি খন্ড। আমি তাঁকে বললাম, আল্লাহ তা‘আলা আপনার সাথে কি আচরণ করেছেন? তখন তিনি ছহীহ মুসলিমের খন্ডটির দিকে ইশারা করে বললেন, এর বদৌলতে আমি (জাহান্নাম থেকে) নাজাত পেয়েছি’।[12]
ইমাম মুসলিম (রহঃ) তাঁর অনবদ্য গ্রন্থ ছহীহ মুসলিম সংকলনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। হাদীছের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ে শুধু নিজের অভিমত ও দৃষ্টিকোণকেই প্রাধান্য দেননি; বরং তৎকালীন জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিছগণের অভিমত ও পরামর্শানুযায়ী হাদীছ লিপিবদ্ধ করেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ﻟَﻴْﺲَ ﻛُﻞُّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻋِﻨْﺪِﻱْ ﺻَﺤِﻴْﺢٌ ﻭَﺿَﻌْﺘُﻪُ ﻫﺎ ﻫﻨﺎ ﺇﻧﻤﺎ ﻭﺿﻌﺖ ﻫﺎ ﻫﻨﺎ ﻣَﺎ ﺃَﺟْﻤَﻌُﻮْﺍ ﻋَﻠَﻴْﻪِ অর্থাৎ শুধু আমার নিজস্ব অভিমতের ভিত্তিতে বিশুদ্ধতা যাচাইয়ে এ কিতাবে হাদীছ সন্নিবেশ করিনি; বরং যে সকল হাদীছের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সমকালীন মুহাদ্দিছগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন ঐ সকল হাদীছও লিপিবদ্ধ করেছি’।[13]
ছহীহ মুসলিমের পান্ডুলিপি বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য যে সকল মনীষীর নিকট পেশ করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে আবু যুর‘আ অগ্রগণ্য, যিনি হাফেযুল হাদীছ নামে খ্যাত। মাক্কী ইবনে আবদান বলেন,
ﺳﻤﻌﺖ ﻣﺴﻠﻤﺎ ﻳﻘﻮﻝ : ﻋﺮﺿﺖ ﻛﺘﺎﺑﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﺴﻨﺪ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻰ ﺭﺯﻋﺔ ﻓﻜﻞ ﻣﺎ ﺃﺷﺎﺭ ﻋﻠﻰ ﻓﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻥ ﻟﻪ ﻋﻠﺔ ﻭﺳﺒﺒﺎ ﺗﺮﻛﺘﻪ ﻭﻛﻞ ﻣﺎ ﻗﺎﻝ : ﺃﻧﻪ ﺻﺤﻴﺢ ﻟﻴﺲ ﻟﻪ ﻋﻠﺖ ﻓﻬﻮ ﺍﻟﺬﻯ ﺃﺧﺮﺟﺖ .
‘আমি ইমাম মুসলিম (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি এ কিতাব (ছহীহ মুসলিম) আমার শ্রদ্ধেয় উস্তায প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ আবু যুর‘আ-এর নিকট উপস্থাপন করেছি। অতঃপর যে হাদীছের মধ্যে ত্রুটি আছে বলে তিনি ইঙ্গিত করেছেন, আমি নিঃসংকোচে তা পরিত্যাগ করেছি। আর যে সকল হাদীছ বিশুদ্ধ ও ত্রুটিমুক্ত বলে অভিমত পোষণ করেছেন, সে সকল হাদীছ আমি এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছি’।[14]
ছহীহ মুসলিম সংকলনান্তে ইমাম মুসলিম (রহঃ) দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, ﻣﺎ ﻭﺿﻌﺔ ﻓﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﺴﻨﺪ ﺷﻴﺌﺎ ﺍﻻ ﺑﺤﺠﺔ ﻭﻻ ﺍﺳﻘﻄﺔ ﺷﻴﺌﺎ ﻣﻨﻪ ﺍﻻ ﺑﺤﺠﺔ . অর্থাৎ বিশুদ্ধতার অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোন হাদীছ আমি এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করিনি এবং অশুদ্ধতার অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোন হাদীছ আমি পরিত্যাগও করিনি’।[15]
ইমাম মুসলিম (রহঃ) স্বীয় অমর সংকলন ছহীহ মুসলিমের বিশুদ্ধতার প্রতি সর্বোচ্চ আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে দাবী রেছেন, ﻟﻮ ﺃﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻳﻜﺘﺒﻮﻥ ﻣﺎﺋﺘﻲ ﺳﻨﺔ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻤﺪﺍﺭﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﺴﻨﺪ অর্থাৎ ‘যদি মুহাদ্দিছগণ দু’শত বছর অক্লান্ত পরিশ্রম ও কঠোর সাধনা করে ইলমে হাদীছের কোন গ্রন্থ সংকলন করেন তবুও এ গ্রন্থের ওপর তাঁদেরকে নির্ভর করতে হবে’।[16]
– ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী
প্রধান মুহাদ্দিছ, বেলটিয়া কামিল মাদরাসা, জামালপুর।
[1] . আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (হানাফী), উমদাতুল ক্বারী (বৈরূত : দারু এহইয়াইত তুরাছিল আরাবী, তাবি), ১/৫ পৃঃ; জালালুদ্দীন জালালাবাদী; মিফতাহুল উলূম ওয়াল ফুনূন (হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, তাবি), পৃঃ ৫৮; মান্না আল-কাত্ত্বান, তারীখুত তাশরীয়িল ইসলামী (রিয়ায : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ ১৯৯৬ ইং/১৪১৭ হিঃ), পৃঃ ৯৪।
[2] . শরহে মুসলিম লিন নববী, ১/১৫ পৃঃ, সাইয়েদ ছিদ্দীক হাসান কানুহী, আল-হিত্তাহ ফী যিকারিছ ছিহাহ সিত্তাহ, (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলয়িয়্যাহ, ১৯৮৫ ইং), পৃঃ ১৬৮; হাজী খলীফা, কাশফুয যুনূন (বৈরূত : দারু ইহইয়ায়িত তুরাছিল আরাবী, ১/৫৪১ পৃঃ; তাদবীবুর রাবী, পৃঃ ৬৭।
[3] . হাফেয জালালুদ্দীন আল-মিযযী, তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল, (বৈরূত : মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ ১৯৯২ইং), ২৪/৪৫৭; হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, (বৈরূত : মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১৯৯৬ইং/১৪১৭ হিঃ), ১২/৪৩৪ পৃঃ।
[4] . হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী, হুদা আস-সারী মুক্বাদ্দামাতু ফাতহিল বারী (রিয়ায : মাকতাবাতু দারিস সালাম, ১৯৯৭ইং/১৪১৮ হিঃ), পৃঃ ১৪।
[5] . শাববীর আহমাদ উছমানী, মুক্কাদ্দামাতু ফাতহিল মুলহিম (দেওবন্দ : মাকতাবাতুল আশরাফিয়া, ১৯৯৯ ইং), ১/৯৭ পৃঃ; তাদবীবুর রাবী, পৃঃ ৭০।
[6] . হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব (বৈরূত : দারু ইহইয়াইত তুরাছ আল-আরাবী, ১৯৯৩ ইং/১৪১৩ হিঃ), ৫/৩৭ পৃঃ; হুদা আসসারী মুক্বাদ্দামাতু ফাতহিল বারী, পৃঃ ৯।
[7] . হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী, মুকাদ্দামাতু ফাতহিল বারী (বৈরূত : ইহয়াইত তুরাছিল আরাবী, তাবি), ১/৪৭৮; আত-তুহফাতু লি তালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৮।
[8] . হুদা আস-সারী, পৃঃ ১৩; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ১২/৫৬৭ পৃঃ; তারীখুত তাশরীঈল ইসলামী, পৃঃ ৯৪; শরহে ছহীহ মুসলিম নববী, ১/১৫ পৃঃ।
[9] . তাযকিরাতুল হুফফায, ২/৫৮৯ পৃঃ; তারীখু বাগাদাদ, ৩/১০১ পৃঃ; শাযারাতুয যাহাব, ২/১৪৪ পৃঃ।
[10] . তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৪২৭ পৃঃ; মুকাদ্দামাতু ফাতহিল মুলহিম, ১/৯১ পৃঃ; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ১২/৫৬৭ পৃঃ।
[11] . হায়াতুল মুছান্নিফীন, পৃঃ ৫৫; হুদা আস-সারী বারী, পৃঃ ১৬।
[12] . বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন, পৃঃ ২৩২।
[13] . আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শরফুদ্দীন নববী, শরহে ছহীহ মুসলিম (দারুত তাহাভী, তা.বি), ১/১৬ পৃঃ; আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ সিত্তাহ, পৃঃ ২০১; তাদরীবুর রাবী, পৃঃ ৭৩।
[14] . আল্লামা শাববীর আহমাদ ওছমানী, ফাতহুল মুলহিম, (দেওবন্দ : মাকতাবাতুল আশরাফিয়া, ১৯৯৯ খ্রিঃ), ১/১০১ পৃঃ; মিফতাহুল উলূম ওয়াল ফুনূন, পৃঃ ৫৮।
[15] . তাযকিরাতুল হুফফায, ২/৫৮৯ পৃঃ; কাশফূয যুনূন আন আসামিল কুতুবি ওয়াল ফুনূন, ১/৫৫৫ পৃঃ।
[16] . শরহে ছহীহ মুসলিম, ১/১৬ পৃঃ; মুকাদ্দামাতু ছহীহ মুসলিম লি নববী, ১/১৩ পৃঃ।
Post a Comment