সুখ ও দুঃখের সমন্বয়ে গঠিত হয় দাম্পত্য জীবন। সব সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মধুর সম্পর্ক থাকবে; এটা অনেক কঠিন ব্যাপার। আবার বিভিন্ন সময় বহুবিধ কারণে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
কিন্তু আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভেঙে যাওয়াকে পছন্দ করেন না। তাই আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে কসমের সময় সীমা নির্ধারণ করে তাদের উভয়ের জন্য কল্যাণকর বিধান নাজিল করেছেন। যাকে ফিকহি ভাষায় ঈলা বলা হয়।
জাহেলি যুগে সময় নির্ধারণ করে আলাদা থাকার শপথ তথা ‘ঈলা’ ছিল স্ত্রীদের জন্য জঘন্য তালাক এবং অত্যাচার। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতদ্বয়ে যার অবসান করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-
আয়াতের অনুবাদ (নিচে দেওয়া হল)
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২২৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অটুট রাখার পন্থা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। আবার ২২৭ নং আয়াতে সম্পর্ক না রাখলে তালাকের বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যদিও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কচ্ছেদ আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় নয়।
ঈলা
স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস না করার জন্যে যে কসম করা হয় তাকে ঈলা বলা হয়। তবে ঈলার জন্য এ কসম হতে হবে চার মাস। এ কসম বা ঈলার দু’টি পর্যায় রয়েছে-
>> চার মাসের কম সময়ের জন্য কসম করা। যদি চার মাসের কম সময়ের জন্য কসম করে, তবে সে সময় পর্যন্ত স্ত্রী ধৈর্য ধরবে। উল্লেখিত সময় শেষ হওয়ার পর স্ত্রী তার স্বামীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য দাবি করতে পারবে।
>> চার মাসের অধিক সময় নির্ধারিত করে কসম করা। যদি চার মাসের অধিক সময়ের জন্য কসম করে থাকে তবে চার মাস পূর্ণ হওয়ার পর স্ত্রী তার স্বামীর কাছে এ দাবি করার অধিকার পাবে যে, হয় সে তার সঙ্গে মিলিত হবে; নয়তো তাকে তালাক দিবে। এ সময় বিচারক স্বামীকে যে কোনো একটি গ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারবেন। যাতে স্ত্রী জীবন-যাপনে ক্ষতি গ্রস্ত না হয়।
কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করবে না বলে শপথ করে তবে তার জন্য আল্লাহ তাআলা চার মাস অবসর মঞ্জুর করেছেন। যদি এ সময়ের মধ্যে স্বামী তার স্ত্রীর নিকট গমন করে তবে তার বিবাহ অব্যাহত থাকবে। কিন্তু তাকে শপথ ভঙ্গ করে স্ত্রীর নিকট যাওয়ার কারণে কাফফারা আদায় করতে হবে।
পক্ষান্তরে যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এ চার মাসের মধ্যে মিলন না ঘটে এবং চার মাস অতিবাহিত হয় তবে তাদের বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য যে,
ঈলা হলো জাহেলি যুগের তালাক এবং অত্যাচার। যখন স্ত্রীর সঙ্গে কারো ভালবাসা থাকতো না এবং ওই সময় স্বামী চাইতো না যে, তার স্ত্রী তার সঙ্গে সংসার করুক আবার অন্য কেউ যেন তাকে বিবাহ না করে। তখন ওই সব লোক তাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে এ ধরনের কসম করে বসতো।
ফলে স্ত্রীলোকটি স্বামীও পেত না এবং তালাক প্রাপ্তও হতো না। স্বামীবিহীন তার জীবন এভাবেই অতিবাহিত হতো।
ইসলামের প্রথমিক যুগেও এ নিয়মকে অনুসর করা হতো। অতঃপর ইসলাম এমন অবস্থায় সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে।
আলোচ্য আয়াত দুটি দ্বারা ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে আলাদা থাকার শপথের সময় নির্ধারনের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।
যদি স্বামী-স্ত্রী চার মাস অতিবাহিত হওয়ার আগে মিলিত হয়; তবে তারা কাফফার দিবে এবং সংসার করবে। কারণ স্ত্রী সহবাস না করার কসম ভঙ্গের বিষয়ে কাফফার বিধান প্রবর্তন করেছেন। আল্লাহ আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদর কল্যাণে ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।
আর যদি চার মাস কসম পূর্ণ করে। তবে জাহেলি যুগের রীতি অনুযায়ী স্ত্রীর জন্য সময় ক্ষেপন করতে হবে না। বরং সে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এতে স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করার কোনো কারণ থাকবে না।
পড়ুন- সুরা বাকারার ২২৫ নং আয়াত
পরিষেশে...
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনে ঘোষিত বিধান অনুযায়ী দাম্পত্য জীবনে শপথের বিধানগুলো যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Post a Comment