Register

Win 10.00$

কুরআন তিলাওয়াত করার নিয়ত

Be the first to comment!

কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করার জন্য কোনো নিয়তের প্রয়োজন হয় না, যেভাবে তিলাওয়াত করা হোক ইবাদাত হিসেবে সংগঠিত হয়; যদি তিলাওয়াতের পশ্চাতে রিয়া তথা প্রদর্শনেচ্ছা ও উজব বা অহংকার না থাকে। রিয়া কখনো আমলের সাওয়াব বিনষ্ট করে, কখনো সাওয়াবের পথে প্রতিবন্ধক হয়, ফলে আদতে কোনো সাওয়াব হয় না।
গায়রুল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদাত আঞ্জাম দেওয়া, অথবা আল্লাহ ও গায়রুল্লাহ উভয়ের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত সম্পাদন করাকে রিয়া বলা হয়। রিয়া যুক্ত আমলে কখনো শুধু গায়রুল্লাহ উদ্দেশ্য হয়, কখনো আল্লাহ ও গায়রুল্লাহ উভয় উদ্দেশ্য হয়। এ জন্য রিয়ার অপর নাম হচ্ছে ‘আশ-শির্কুল খাফি’ বা গোপন শির্ক। রিয়া কোনো ব্যক্তির আমল ও শ্রম উভয় বিনষ্ট করে এবং ব্যক্তিকে আল্লাহর গোস্বা ও শাস্তিতে নিক্ষেপ করে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺃَﻧَﺎ ﺃَﻏْﻨَﻰ ﺍﻟﺸُّﺮَﻛَﺎﺀِ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙِ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﺃَﺷْﺮَﻙَ ﻓِﻴﻪِ ﻣَﻌِﻲ ﻏَﻴْﺮِﻱ ﺗَﺮَﻛْﺘُﻪُ ﻭَﺷِﺮْﻛَﻪ »
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, শরীকদের মাঝে আমি অংশীদারিত্ব থেকে সবচেয়ে বেশী অমুখাপেক্ষী, যে এমন আমল করল, যাতে আমার সাথে অপরকে শরীক করেছে, আমি তাকে ও তার শির্ককে ত্যাগ করি”।[1] রিয়াকারী ও তার আমল আল্লাহর নিকট পরিত্যক্ত ও প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ তা‘আলা শুধু তাই গ্রহণ করেন, যা একমাত্র তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা হয়। তিনি ইরশাদ করেন:
﴿ ﻗُﻞۡ ﺇِﻧَّﻤَﺎٓ ﺃَﻧَﺎ۠ ﺑَﺸَﺮٞ ﻣِّﺜۡﻠُﻜُﻢۡ ﻳُﻮﺣَﻰٰٓ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎٓ ﺇِﻟَٰﻬُﻜُﻢۡ ﺇِﻟَٰﻪٞ ﻭَٰﺣِﺪٞۖ ﻓَﻤَﻦ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺮۡﺟُﻮﺍْ ﻟِﻘَﺎٓﺀَ ﺭَﺑِّﻪِۦ ﻓَﻠۡﻴَﻌۡﻤَﻞۡ ﻋَﻤَﻠٗﺎ ﺻَٰﻠِﺤٗﺎ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺸۡﺮِﻙۡ ﺑِﻌِﺒَﺎﺩَﺓِ ﺭَﺑِّﻪِۦٓ ﺃَﺣَﺪَۢﺍ ١١٠﴾ ‏[ ﺍﻟﻜﻬﻒ : ١١٠ ]
“বল, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে”।[2] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
ﺃَﻻَ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻛُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﻫُﻮَ ﺃَﺧْﻮَﻑُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻋِﻨْﺪِﻱ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺴِﻴﺢِ ﺍﻟﺪّﺟّﺎﻝِ؟ ‏» ﻗَﺎﻟﻮﺍ : ﺑَﻠَﻰَ . ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﺍﻟﺸّﺮْﻙُ ﺍﻟْﺨَﻔِﻲّ : ﻳَﻘُﻮﻡَ ﺍﻟﺮّﺟُﻞُ ﻳُﺼَﻠّﻲ ﻓَﻴُﺰَﻳّﻦُ ﺻَﻼَﺗَﻪُ ﻟِﻤَﺎ ﻳَﺮَﻯ ﻣِﻦْ ﻧَﻈَﺮِ ﺭَﺟُﻞٍ ﺇﻟﻴﻪ »
“আমি কি তোমাদেরকে সেটা সম্পর্কে সংবাদ দিব, যা আমার দৃষ্টিতে তোমাদের উপর মাসীহ-দাজ্জাল থেকেও বিপদজনক? তারা বলল: অবশ্যই, তিনি বললেন: ‘আশ-শির্কুল খাফি’, ব্যক্তি সালাত আদায়ের জন্য দণ্ডায়মান হয়, অতঃপর সে সালাতকে খুব সুন্দর করে আদায় করে, কারণ সে জানে মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে”।[3] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻣَﻦْ ﺳَﻤَّﻊَ، ﺳَﻤَّﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻪِ، ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺮَﺍﺋِﻲ، ﻳُﺮَﺍﺋِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻪِ »
“যে শোনাতে চায়, আল্লাহ তা শুনিয়ে দেন এবং যে দেখাতে চায় আল্লাহ তা দেখিয়ে দেন”। খাত্তাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এ হাদিসের অর্থ হচ্ছে, যে ইখলাস বিহীন আমল করল, অর্থাৎ মানুষ দেখবে ও শুনবে এ উদ্দেশ্যে আমল করল, তাকে অনুরূপ প্রতিদান দেওয়া হয়। উদাহরণত আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেন, তাকে লাঞ্ছিত করেন ও তার অন্তরের গোপন নিয়ত সবাইকে জানিয়ে দেন”।[4]
অপর সহি হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﺗَﻌَﻠَّﻢَ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﻭَﻋَﻠَّﻤَﻪُ ﻭَﻗَﺮَﺃَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ، ﻓَﺄُﺗِﻲَ ﺑِﻪِ ﻟِﻴُﻌَﺮِّﻓَﻪُ ﻧِﻌَﻤَﻪُ، ﻓَﻌَﺮَﻓَﻬَﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻣَﺎ ﻋَﻤِﻠْﺖَ ﻓِﻴﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝ : ﺗَﻌَﻠَّﻤْﺖُ ﻓِﻴﻚَ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﻭَﻋَﻠَّﻤْﺘُﻪُ، ﻭَﻗَﺮَﺃْﺕُ ﻓِﻴﻚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ، ﻓَﻘَﺎﻝ : ﻛَﺬَﺑْﺖَ، ﻭَﻟَﻜِﻨَّﻚَ ﺗَﻌَﻠَّﻤْﺖَ ﻟِﻴُﻘَﺎﻝَ : ﻫُﻮَ ﻋَﺎﻟِﻢٌ، ﻓَﻘَﺪْ ﻗِﻴﻞَ، ﻭَﻗَﺮَﺃْﺕَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻟِﻴُﻘَﺎﻝَ : ﻫُﻮَ ﻗَﺎﺭِﺉٌ، ﻓَﻘَﺪْ ﻗِﻴﻞَ، ﺛُﻢَّ ﺃَﻣَﺮَ ﺑِﻪِ، ﻓَﻴُﺴْﺤَﺐُ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺃُﻟْﻘِﻲَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ »
“… এবং ঐ ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, যে ইলম শিখেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন তিলাওয়াত করেছে। তার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ স্পষ্ট করার জন্য তাকে উপস্থিত করা হবে এবং সে তা স্বীকার করবে। অতঃপর তিনি বলবেন: তার (নিয়ামতের) বিনিময়ে তুমি কি করেছ? সে বলবে: আপনার জন্য ইলম শিখেছি, শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলবেন: তুমি মিথ্যা বলেছ; তুমি ইলম শিখেছি যেন বলা হয় সে আলেম, আর তা বলা হয়েছে। তুমি কুরআন তিলাওয়াত করেছ, যেন বলা হয় সে কারি, আর তা বলা হয়েছে। অতঃপর তার সম্পর্কে নির্দেশ জারি করবেন, ফলে তাকে চেহারার উপর টেনে-হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”।[5]
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কৃত তিলাওয়াত ইবাদত, হোক সালাতের ভিতরে কিংবা বাইরে, তার জন্য নির্দিষ্ট নিয়তের প্রয়োজন নেই।তবে কেউ যদি নির্দিষ্ট নিয়তে কুরআন তিলাওয়াত করে, তাতে কোনো সমস্যা নেই, বরং ভালো। কারণ, নির্দিষ্ট নিয়ত কুরআনুল কারিমে চিন্তা করা, তার রঙে রঙিন হওয়া ও তার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার শামিল, যার নির্দেশ শরীয়তে রয়েছে।এ জাতীয় নিয়ত প্রশংসনীয়। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« ﺻَﻠَّﻴْﺖُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺫَﺍﺕَ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ، ﻓَﺎﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓَ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻳَﺮْﻛَﻊُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤِﺎﺋَﺔِ، ﺛُﻢَّ ﻣَﻀَﻰ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺭَﻛْﻌَﺔٍ، ﻓَﻤَﻀَﻰ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳَﺮْﻛَﻊُ ﺑِﻬَﺎ، ﺛُﻢَّ ﺍﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﻓَﻘَﺮَﺃَﻫَﺎ، ﺛُﻢَّ ﺍﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺁﻝَ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﻓَﻘَﺮَﺃَﻫَﺎ، ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﻣُﺘَﺮَﺳِّﻠًﺎ، ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮَّ ﺑِﺂﻳَﺔٍ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﺗَﺴْﺒِﻴﺢٌ ﺳَﺒَّﺢَ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮَّ ﺑِﺴُﺆَﺍﻝٍ ﺳَﺄَﻝَ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮَّ ﺑِﺘَﻌَﻮُّﺫٍ ﺗَﻌَﻮَّﺫَ »
“আমি কোনো একরাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করি, তিনি সূরা বাকারা আরম্ভ করেন। আমি মনে করলাম একশত আয়াত শেষে রুকু করবেন, কিন্তু তিনি পড়তে থাকলেন; আমি মনে করলাম এক সালাতে তা পূর্ণ করবেন, কিন্তু তিনি পড়তে থাকলেন, আমি মনে করলাম তার দ্বারা এক রাকাত পূর্ণ করবেন; অতঃপর তিনি সূরা নিসা আরম্ভ করেন এবং তা শেষ করেন। অতঃপর আলে-ইমরান শুরু করেন এবং তা শেষ করেন। তিনি বিরতি দিয়ে-দিয়ে পড়ছিলেন, যখন তাসবীহ এর কোনো আয়াত পড়তেন তাসবীহ পাঠ করতেন; যখন প্রার্থনার কোনো আয়াত পড়তেন প্রার্থনা করতেন; যখন আশ্রয় চাওয়ার কোনো আয়াত পড়তেন আশ্রয় চাইতেন”।[6]
ইমাম আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, ‘আউফ ইবন মালিক আশজা‘য়ি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন:
« ﻗُﻤْﺖُ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟَﻴْﻠَﺔً ” ﻓَﻘَﺎﻡَ ﻓَﻘَﺮَﺃَ ﺳُﻮﺭَﺓَ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓِ ﻟَﺎ ﻳَﻤُﺮُّ ﺑِﺂﻳَﺔِ ﺭَﺣْﻤَﺔٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻗَﻒَ ﻓَﺴَﺄَﻝَ، ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻤُﺮُّ ﺑِﺂﻳَﺔِ ﻋَﺬَﺍﺏٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻗَﻒَ ﻓَﺘَﻌَﻮَّﺫَ »
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একরাত কিয়াম করেছি, তিনি দাঁড়ালেন এবং সূরা বাকারা শেষ করলেন। তিনি রহমতের এমন কোনো আয়াত পড়েননি যেখানে বিরতি নেননি, আর আযাবের এমন কোনো আয়াত তেলাওয়াত করেন নি যেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করেননি”।[7]
এসব হাদিস প্রমাণ করে, তিলাওয়াতের সময় কুরআনুল কারিমের অর্থ ও বিষয়-বস্তুতে চিন্তা করা, তার রঙে রঙিন হওয়া, দোয়ার আয়াতে দোয়া করা ও শাস্তির আয়াতে প্রার্থনা করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।এ সুন্নতের উপর আমল করার জন্য নির্দিষ্ট নিয়তে তিলাওয়াত করা অধিকতর সাওয়াবের কাজ।
বর্তমান যুগে মুসলিমরা সাওয়াবের নিয়ত ব্যতীত কোনো উদ্দেশ্যে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করে না বললেই চলে, তাই তিলাওয়াতের সময় কুরআনুল কারিমের ইলম ও জ্ঞানের দিকে তাদের মন ধাবিত হয় না। অথচ ইলম, হিদায়াত ও রহমত লাভের নিয়তে তিলাওয়াত করে সাওয়াবসহ অনেক উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﺄَﻋْﻤَﺎﻝُ ﺑِﺎﻟﻨِّﻴَّﺎﺕِ، ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻟِﻜُﻞِّ ﺍﻣْﺮِﺉٍ ﻣَﺎ ﻧَﻮَﻯ »
“নিশ্চয় প্রত্যেক আমল নিয়তের সাথে সম্পৃক্ত, আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে-যা সে নিয়ত করেছে”।[8]
কিয়ামতের দিন নিয়তের কারণে আমলের সাওয়াবে অনেক ব্যবধান হবে। এ জন্য নিয়তকে জ্ঞানীদের ব্যবসা বলা হয়। নিম্নে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করার কয়েকটি নিয়ত উল্লেখ করছি:
১. কুরআনুল কারিম ইলমের ভাণ্ডার ও হিদায়াতের উৎস, তাই ইলম ও হিদায়াত লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা।আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻳَﺘَﺪَﺑَّﺮُﻭﻥَ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَۚ ﻭَﻟَﻮۡ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦۡ ﻋِﻨﺪِ ﻏَﻴۡﺮِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻮَﺟَﺪُﻭﺍْ ﻓِﻴﻪِ ﭐﺧۡﺘِﻠَٰﻔٗﺎ ﻛَﺜِﻴﺮٗﺍ ٨٢ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٨٢ ]
“তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত”।[9] অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ ﺷَﻬۡﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﭐﻟَّﺬِﻱٓ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﻓِﻴﻪِ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥُ ﻫُﺪٗﻯ ﻟِّﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺑَﻴِّﻨَٰﺖٖ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﭐﻟۡﻔُﺮۡﻗَﺎﻥِۚ ١٨٥ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٥ ]
“রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীস্বরূপ ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে”।[10]
২. মানব জাতির জীবন বিধান স্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারিম নাযিল করেছেন, তাই তিলাওয়াত করার সময় তার উপর আমল করার নিয়ত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﭐﺗَّﺒِﻌُﻮﺍْ ﻣَﺎٓ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴۡﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢۡ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻌُﻮﺍْ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻧِﻪِۦٓ ﺃَﻭۡﻟِﻴَﺎٓﺀَۗ ٣ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ٣ ]
“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না”।[11] অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻭَﻋَﻤِﻠُﻮﺍْ ﭐﻟﺼَّٰﻠِﺤَٰﺖِ ﻳَﻬۡﺪِﻳﻬِﻢۡ ﺭَﺑُّﻬُﻢ ﺑِﺈِﻳﻤَٰﻨِﻬِﻢۡۖ ٩﴾ ‏[ ﻳﻮﻧﺲ : ٩ ]
“নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, তাদের রব ঈমানের কারণে তাদেরকে পথ দেখাবেন”।[12]
৩. কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করার ফলে ঈমান বৃদ্ধি হয়, তাই ঈমান বৃদ্ধির নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺎٓ ﺃُﻧﺰِﻟَﺖۡ ﺳُﻮﺭَﺓٞ ﻓَﻤِﻨۡﻬُﻢ ﻣَّﻦ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺃَﻳُّﻜُﻢۡ ﺯَﺍﺩَﺗۡﻪُ ﻫَٰﺬِﻩِۦٓ ﺇِﻳﻤَٰﻨٗﺎۚ ﻓَﺄَﻣَّﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻓَﺰَﺍﺩَﺗۡﻬُﻢۡ ﺇِﻳﻤَٰﻨٗﺎ ﻭَﻫُﻢۡ ﻳَﺴۡﺘَﺒۡﺸِﺮُﻭﻥَ ١٢٤ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ 124: ].
“আর যখনই কোন সূরা নাযিল করা হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, ‘এটি তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি করল? অতএব যারা মুমিন, নিশ্চয় তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়”।[13]
৪. কুরআনুল কারিম আল্লাহর কালাম, যে কুরআন তিলাওয়াত করে সে আল্লাহর সাথে কথা বলে, আল্লাহ তার কথা খুব শ্রবণ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻣَﺎ ﺃَﺫِﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﺸَﻲْﺀٍ، ﻣَﺎ ﺃَﺫِﻥَ ﻟِﻨَﺒِﻲٍّ ﺣَﺴَﻦِ ﺍﻟﺼَّﻮْﺕِ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻳَﺠْﻬَﺮُ ﺑِﻪِ »
“আল্লাহ কোনো বস্তু এভাবে শ্রবণ করেননি, যেভাবে কুরআনের ক্ষেত্রে সুন্দর আওয়াজ সম্পন্ন নবীর জন্য শ্রবণ করেছেন, যিনি উচ্চস্বরে কুরআন মাজিদ পড়েন।”[14]
৫. কুরআন শিফা ও রোগ থেকে মুক্তির উপায়। কুরআন তিলাওয়াতের ফলে শরীর ও আত্মার রোগ দূরীভূত হয়। অতএব রোগ থেকে মুক্তি ও ঝাড়-ফুকের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱُ ﻗَﺪۡ ﺟَﺎٓﺀَﺗۡﻜُﻢ ﻣَّﻮۡﻋِﻈَﺔٞ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢۡ ﻭَﺷِﻔَﺎٓﺀٞ ﻟِّﻤَﺎ ﻓِﻲ ﭐﻟﺼُّﺪُﻭﺭِ ﻭَﻫُﺪٗﻯ ﻭَﺭَﺣۡﻤَﺔٞ ﻟِّﻠۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ٥٧ ﴾ ‏[ ﻳﻮﻧﺲ : ٥٧ ]
“হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত”।[15]
6. কিয়ামতের দিন উঁচু মর্যাদা লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ ﺇِﻧَّﻬُﻢۡ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻳُﺴَٰﺮِﻋُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺨَﻴۡﺮَٰﺕِ ﻭَﻳَﺪۡﻋُﻮﻧَﻨَﺎ ﺭَﻏَﺒٗﺎ ﻭَﺭَﻫَﺒٗﺎۖ ﻭَﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻟَﻨَﺎ ﺧَٰﺸِﻌِﻴﻦَ ٩٠ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﺒﻴﺎﺀ : ٩٠ ]
“নিশ্চয় তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর আমাকে আশা ও ভীতিসহ ডাকত, আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী”।[16]
7. সাওয়াব ও মহান প্রতিদান লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। উকবাহ ইবনে ‘আমের আল-জুহানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« ﺧَﺮَﺝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﻔَّﺔِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﻳُّﻜُﻢْ ﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﻥْ ﻳَﻐْﺪُﻭَ ﻛُﻞَّ ﻳَﻮْﻡٍ ﺇِﻟَﻰ ﺑُﻄْﺤَﺎﻥَ، ﺃَﻭْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻌَﻘِﻴﻖِ ﻓَﻴَﺄْﺗِﻲَ ﻣِﻨْﻪُ ﺑِﻨَﺎﻗَﺘَﻴْﻦِ ﻛَﻮْﻣَﺎﻭَﻳْﻦِ، ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِ ﺇِﺛْﻢٍ، ﻭَﻟَﺎ ﻗَﻄْﻊِ ﺭَﺣِﻢٍ؟ ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻧُﺤِﺐُّ ﺫَﻟِﻚَ، ﻗَﺎﻝَ : ” ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻳَﻐْﺪُﻭ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻓَﻴَﻌْﻠَﻢُ، ﺃَﻭْ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺁﻳَﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﻧَﺎﻗَﺘَﻴْﻦِ، ﻭَﺛَﻠَﺎﺙٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺛَﻠَﺎﺙٍ، ﻭَﺃَﺭْﺑَﻊٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ، ﻭَﻣِﻦْ ﺃَﻋْﺪَﺍﺩِﻫِﻦَّ ﻣِﻦَ ﺍﻹِﺑِﻞِ؟ »
“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আসলেন, আমরা তখন সুফফায় ছিলাম, তিনি বললেন: তোমাদের থেকে কে পছন্দ করে প্রতিদিন বুতহান অথবা আকিক স্থানে যাবে, অতঃপর সেখান থেকে উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট দু’টি উট নিয়ে আসবে, অপরাধ সংগঠন ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ব্যতীত? আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তা পছন্দ করি। তিনি বললেন: তাহলে কেন তোমাদের কেউ মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাব থেকে দু’টি আয়াত শিখে না, অথবা তিলাওয়াত করে না, যা তার জন্য দু’টি উট থেকে উত্তম, এবং তিনটি আয়াত তিনটি উট থেকে উত্তম, এবং চারটি আয়াত চারটি উট থেকে উত্তম, অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা উটের সংখ্যা থেকে উত্তম”।[17]
8. কিয়ামতের দিন কুরআনুল কারিম তার তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে, তাই সুপারিশ লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« ﺗَﻌَﻠَّﻤُﻮﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺷَﺎﻓِﻊٌ ﻟِﺼَﺎﺣِﺒِﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﺗَﻌَﻠَّﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺰَّﻫْﺮَﺍﻭَﻳْﻦِ : ﺳُﻮﺭَﺓَ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓِ، ﻭَﺁﻝِ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ، ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻤَﺎ ﻳَﺠِﻴﺌَﺎﻥِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻛَﺄَﻧَّﻬُﻤَﺎ ﻏَﻤَﺎﻣَﺘَﺎﻥِ ﺃَﻭْ ﻏَﻴَﺎﻳَﺘَﺎﻥِ ﺃَﻭْ ﻛَﻔِﺮْﻗَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﻃَﻴْﺮٍ ﺻَﻮَﺍﻑَّ، ﻳَﺸْﻔَﻌَﺎﻥِ ﻟِﺼَﺎﺣِﺒِﻬِﻤَﺎ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﺗَﻌَﻠَّﻤُﻮﺍ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮَﺓَ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺃَﺧْﺬَﻫَﺎ ﺑَﺮَﻛَﺔٌ، ﻭَﺗَﺮْﻛَﻬَﺎ ﺣَﺴْﺮَﺓٌ، ﻭَﻻ ﺗَﺴْﺘَﻄِﻴﻌُﻬَﺎ ﺍﻟْﺒَﻄَﻠَﺔُ »
“তোমরা কুরআন শিখ, কারণ কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে। তোমরা দু’টি উজ্জ্বল বস্তু শিখ: সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরান, কারণ কিয়ামতের দিন এ দু’টি সূরা দু’টি মেঘের মত, অথবা দু’টি ছায়ার মত, অথবা সারিবদ্ধ উড়ন্ত পাখির দু’টি ডানার মত, কিয়ামতের দিন তারা উভয়ে তাদের পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে, তোমরা সূরা বাকারা শিক্ষা কর, কারণ তা শিক্ষা করা বরকত ও ত্যাগ করা অনুশোচনা, কোনো জাদুকর তা শিখতে সক্ষম নয়”।[18]
9. আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
ﺇِﻥَّ ﻫَٰﺬَﺍ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَ ﻳَﻘُﺺُّ ﻋَﻠَﻰٰ ﺑَﻨِﻲٓ ﺇِﺳۡﺮَٰٓﺀِﻳﻞَ ﺃَﻛۡﺜَﺮَ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﻫُﻢۡ ﻓِﻴﻪِ ﻳَﺨۡﺘَﻠِﻔُﻮﻥَ ٧٦ ﻭَﺇِﻧَّﻪُۥ ﻟَﻬُﺪٗﻯ ﻭَﺭَﺣۡﻤَﺔٞ ﻟِّﻠۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ٧٧ ‏[ ﺍﻟﻨﻤﻞ 77-76: ]
“নিশ্চয় এ কুরআন তাদের কাছে বর্ণনা করছে, বনী ইসরাইল যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক করছে তার অধিকাংশই; আর নিশ্চয় এটি মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত”।[19]
প্রিয়পাঠক, আল্লাহর রহমত লাভের নিয়তে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করুন। কখনো চিন্তা করেছি, কি পরিমাণ রহমতের মুখাপেক্ষী আমরা, আমরা কত পাপ করেছি, কত অপরাধ ও অন্যায়ে জড়িত হয়েছি; সমাজে আমরা দুর্বল, দেশে আমরা নিগৃহীত, বিশ্বে আমরা কর্তৃত্বশূন্য, আল্লাহর রহমত ব্যতীত যার থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই। সে রহমত আমাদের সামনেই রয়েছে, অথচ তার থেকে আমরা গাফিল। কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা রহমত, তার তিলাওয়াত অপর থেকে শ্রবণ করা রহমত এবং তার উপর আমল করা রহমত। আল্লাহ বলেন,
﴿ ﻭَﻟَﻘَﺪۡ ﺟِﺌۡﻨَٰﻬُﻢ ﺑِﻜِﺘَٰﺐٖ ﻓَﺼَّﻠۡﻨَٰﻪُ ﻋَﻠَﻰٰ ﻋِﻠۡﻢٍ ﻫُﺪٗﻯ ﻭَﺭَﺣۡﻤَﺔٗ ﻟِّﻘَﻮۡﻡٖ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ٥٢﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ٥١ ]
“আর আমি তো তাদের নিকট এমন কিতাব নিয়ে এসেছি, যা আমি জ্ঞানের ভিত্তিতে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। তা হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ এমন জাতির জন্য, যারা ঈমান রাখে”।[20] অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ ﻫَٰﺬَﺍ ﺑَﺼَﺎٓﺋِﺮُ ﻣِﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢۡ ﻭَﻫُﺪٗﻯ ﻭَﺭَﺣۡﻤَﺔٞ ﻟِّﻘَﻮۡﻡٖ ﻳُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ٢٠٣ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ٢٠٢ ]
“এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ। আর তা হিদায়াত ও রহমত সে কওমের জন্য যারা ঈমান আনে”।[21] অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:
﴿ ﻭَﻫَٰﺬَﺍ ﻛِﺘَٰﺐٌ ﺃَﻧﺰَﻟۡﻨَٰﻪُ ﻣُﺒَﺎﺭَﻙٞ ﻓَﭑﺗَّﺒِﻌُﻮﻩُ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗُﺮۡﺣَﻤُﻮﻥَ ١٥٥ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١٥٥ ]
“আর এটি কিতাব- যা আমি নাযিল করছি- বরকতময়। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও”।[22] অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন:
﴿ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥُ ﻓَﭑﺳۡﺘَﻤِﻌُﻮﺍْ ﻟَﻪُۥ ﻭَﺃَﻧﺼِﺘُﻮﺍْ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗُﺮۡﺣَﻤُﻮﻥَ ٢٠٤ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ٢٠٣ ]
“আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমরা রহমত লাভ কর”।[23]
লক্ষ্য করুন কুরআনুল কারিম তিলাওয়াতের সময় চুপ করে থাকাও রহমত লাভ করার উপায়। তিলাওয়াতকারীকে আল্লাহর রহমত বেষ্টন করে নেয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻭَﻣَﺎ ﺍﺟْﺘَﻤَﻊَ ﻗَﻮْﻡٌ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺖٍ ﻣِﻦْ ﺑُﻴُﻮﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺘْﻠُﻮﻥَ ﻛِﺘَﺎﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻳَﺘَﺪَﺍﺭَﺳُﻮﻧَﻪُ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﻧَﺰَﻟَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟﺴَّﻜِﻴﻨَﺔُ ﻭَﻏَﺸِﻴَﺘْﻬُﻢُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔُ ﻭَﺣَﻔَّﺘْﻬُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ، ﻭَﺫَﻛَﺮَﻫُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻴﻤَﻦْ ﻋِﻨْﺪَﻩُ »
“আর আল্লাহর ঘরসমূহ থেকে কোনো ঘরে যখনই কোনো কওম একত্র হয়েছে, যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে ও নিজেদের মাঝে তার পঠন-পাঠন করে, তবে অবশ্যই তাদের উপর সাকিনা নাযিল হয়, রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়, মালায়েকাগণ তাদেরকে বেষ্টন করে নেয় এবং আল্লাহ তাদেরকে স্মরণ করেন, যারা তার নিকটে আছে তাদের মাঝে”।[24]
হে আল্লাহ, কুরআন দ্বারা আমাদের উপর রহম করুন, যেন অন্য কারো রহমতের প্রয়োজন না হয়। নিশ্চয় আপনার রহমত সর্বোত্তম।
﴿ ﻟَﻤَﻐۡﻔِﺮَﺓٞ ﻣِّﻦَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺣۡﻤَﺔٌ ﺧَﻴۡﺮٞ ﻣِّﻤَّﺎ ﻳَﺠۡﻤَﻌُﻮﻥَ ١٥٧ ﴾ ‏[ ﺍﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٥٧ ]
“নিশ্চয় আল্লাহর মাগফেরাত ও রহমত অধিকতর উত্তম, তোমরা যা জমা কর তার চেয়ে”।[25]
– সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1]মুসলিম: (২৯৮৮)
[2]সূরা কাহাফ: (১১০)
[3]আহমদ: (১০৮৫৯), ইবনে মাজাহ: (৪২০৪)
[4]ফাতহুল বারিসহ সহি বুখারি, হাদিস নং: (৯৪৭৪)
[5]আহমাদ: (৮২৭৮)
[6] মুসলিম: (৭৭৫)।
[7]আবু দাউদ: (৮৭৩)।
[8]বুখারি: (১)
[9]সূরা নিসা: (৮২)
[10]সূরা বাকারা: (১৮৫)
[11]সূরা আ‘রাফ: (৩)
[12]সূরা ইউনুস: (৯)
[13]সূরা তাওবা: (১২৪)
[14]সহি বুখারি ৭৫৪৪, ৫০২৩, ৫০২৪, ৭৪৮২, ৭৫২৭, মুসলিম ৭৯৪,
[15]সূরা ইউনুস: (৫৭)
[16]সূরা আম্বিয়া: (৯০)
[17]মুসলিম: (৮০৬), আবু দাউদ: (১৪৫৬)
[18]আহমদ: (৮৮২৩)
[19]সূরা নামল: (৭৬-৭৭)
[20]সূরা আ‘রাফ: (৫২)
[21]সূরা আ‘রাফ: (২০৩)
[22]সূরা আন‘আম: (১৫৫)
[23]সূরা আ‘রাফ: (২০৪)
[24]মুসলিম: (২৭০২),
[25]সূরা আলে-ইমরান: (১৫৭)

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment

ads

Contact Form

Name

Email *

Message *

ads

Win 10.00$