মাসয়ালা ১: কোনো সুস্থ বালেগ মুসলমান ইচ্ছাকৃত রমজানের রোজা না রাখলে বা অনিচ্ছায় ভেঙে ফেললে অথবা কোনো ওজরের কারণে ভেঙে ফেললে পরে ওই রোজার কাজা আদায় করতে হবে। আর বিনাওজরে ইচ্ছাকৃত পানাহার বা সহবাসের মাধ্যমে রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে তার কাজা ও কাফফারা অর্থাৎ লাগাতার ষাট দিন রোজা রাখতে হবে। পানাহার ও সহবাস ছাড়া অন্য পদ্ধতিতে ইচ্ছাকৃত ভাঙলেও কাফফারা দিতে হবে না, হ্যাঁ কাজা দিতে হবে। -মাবসুতে সারাখসি: ৩/৭২
মাসয়ালা ২: কাফফারা আদায়ের ক্ষেত্রে লাগাতার ষাট দিন রোজা রাখার সময় যদি এক দিনও বাদ যায়, তাহলে আবার শুরু থেকে গণনা আরম্ভ হবে, পূর্বেরগুলো বাদ হয়ে যাবে। -মাবসুতে সারাখসি: ৩/৮২
মাসয়ালা ৩: মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখতে কষ্ট হলে ওই দিন না রেখে পরে কাজা করে নিতে পারবে, এ ক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হবে না। -সূরা বাকারা: ১৮৪-১৮৫
মাসয়ালা ৪: মাসিক পিরিয়ড ও সন্তান প্রসবোত্তর স্রাবের সময় রোজা রাখা জায়েয নেই। তবে সে দিনগুলোর রোজার কাজা দিতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না।
মাসয়ালা ৫: রোজা রাখার পর দিনের বেলায় যদি কোনো নারীর পিরিয়ড শুরু হয়, তখন ওই নারীর জন্য খাওয়া-দাওয়ার অনুমতি আছে। তবে লোকজনের সামনে না খেয়ে নির্জনে খাওয়া-দাওয়া করবে। আর যে মহিলা পিরিয়ডের কারণে রোজা রাখেনি, দিনের যে সময়ে তার রক্ত বন্ধ হবে, তখন থেকেই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে রোজাদারের ন্যায় দিনের অবশিষ্ট অংশটুকু অতিবাহিত করবে এবং পরবর্তীতে উভয়েই ওই দিনের রোজা কাজা করে নিবে। -আল লুবাব: ১/১৭৩
মাসয়ালা ৫: রোজার জন্য নারীদের ঔষধ খেয়ে পিরিয়ড সাময়িক বন্ধ রাখা অনুচিত। এতে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এ পদ্ধতিতে পিরিয়ড বন্ধ থাকা অবস্থায় রোজা-নামাজ করলে তা আদায় হয়ে যাবে। -ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/৪০৪, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ৩/২৭৮)
রোজার ফিদইয়া
মাসয়ালা ১: যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তারের পরামর্শে রোজা রাখা খেকে বিরত থাকেন এবং পরবর্তীতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সুস্থ হওয়ার পর রোজার কাজা আদায় করতে হবে, ফিদইয়া দিলে আদায় হবে না। পক্ষান্তরে যদি আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে বা এমন বৃদ্ধ যে রোজা রাখতে অক্ষম তাহলে সে ফিদইয়া আদায় করবে। রোজা রাখতে অক্ষম বলতে শরিয়তের দৃষ্টিতে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা, মারাত্মক রোগ ইত্যাদি বোঝায়, যা থেকে আরোগ্য লাভ করা এবং রোজা রাখার শক্তি ফিরে পাওয়া অসম্ভব বলে মনে হয়। -সূরা বাকারা: ১৮৪-১৮৫
মাসয়ালা ২: প্রত্যেক রোজার ফিদইয়া হলো, সদকা ফিতরের সমপরিমাণ, অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি গম বা তার সমপরিমাণ অর্থ। -আওযানে শরইয়্যাহ, পৃ. ১৮
মাসয়ালা ৩: শারীরিক সুস্থতা ফিরে আসলে এবং রোজার কাজার ওপর সক্ষম হলে অতীতের রোজা কাজা করতে হবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪২৭
মাসয়ালা ৪: ফিদইয়া আদায়ের ক্ষেত্রে ধনী-গরীবের মাঝে কোনো তারতম্য নেই, সবার ওপর সমানহার প্রযোজ্য। তবে দারিদ্রতার দরুন ফিদইয়া দিতে একেবারেই অক্ষম হলে তওবা করবে। পরবর্তীতে কখনও সামর্থ্যবান হলে অবশ্যই ফিদইয়া আদায় করে দিবে। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২০৭
মাসয়ালা ৫: ৬০ মিসকিনকে দু’বেলা খানা খাওয়ানোর পরিবর্তে প্রত্যেককে এক ফিতরা পরিমাণ অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি গম বা তার সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হলো, ওই টাকা দ্বারা মিসকিনকে খানা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। একজন গরিবকে প্রতিদিন ১ ফিতরা পরিমাণ করে ৬০ দিনে দিলেও আদায় হবে। ৬০ দিনের ফিতরা পরিমাণ একত্রে বা এক দিনে দিলে আদায় হবে না। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৫১৩, রদ্দুল মুহতার: ৩/৪৭৮
ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙের কাফফারা
মাসয়ালা ১: কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে একাধিকবার একই রমজানের রোজা ভাঙার কারণে এক কাফফারাই যথেষ্ট। অর্থাৎ ভেঙে ফেলা সব রোজার জন্য ৬০ জন মিসকিনকে দু’বেলা খানা খাওয়াবে, অথবা প্রতি মিসকিনকে এক ফিতরা পরিমাণ সম্পদ সদকার মাধ্যমেও কাফফারা আদায় করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/১০১, রদ্দুল মুহতার: ২/৪১৩
মাসয়ালা ২: মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার কাজাকৃত রোজার কাফফারা হিসেবে অন্য কারো রোজা রাখার বিধান নেই। তবে মৃত্যুকালে সে ব্যক্তি ফিদইয়া প্রদানের অসিয়ত করলে (যা পূর্ণ করা ওয়াজিব) তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ মাল থেকে অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরি। অসিয়ত না করলে ফিদইয়া দেয়া জরুরি নয়। তবে বালেগ ওয়ারিসরা নিজ নিজ অংশ হতে তা আদায় করলে আদায় হওয়ার আশা করা যায়। -আল জাওহারাতুন নায়্যিরাহ: ১/১৪৩, আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২৪
Post a Comment